বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চার প্যাডেল জাহাজের তিনটি বন্ধ, নৌযানের অভাবে রকেট স্টিমারের যাত্রা বাতিল
নৌযান সঙ্কটে বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কারিগরি ত্রুটি, কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব ও নৌযান ভাড়া দেয়ার মত বিবেকহীন কর্মকান্ডের কারণে দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীণ স্টিমার সার্ভিসটির এখন জবনিকা কম্পমান। নৌযানের অভাবে গত শনিবার ঢাকা থেকে চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জমুখী রকেট স্টিমারের যাত্রা বাতিল করা হয়। ঐ দিন ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের প্রমোদ ভ্রমনের জন্য ‘পিএস মাহসুদ’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নামের দুটি জাহাজ ভাড়া দেয়ায় এ বিপত্তি ঘটে।
সূত্র জানায়, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও বিশ্ব ঐতিহ্যর ৪টি যাত্রীবাহী প্যাডেল জাহাজের ৩টিই বন্ধ। পাশাপাশি ‘পিএস অষ্ট্রিচ’ নামের একটি যাত্রীবাহী নৌযান বিনা দরপত্রে পানশালা করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে গত প্রায় তিন মাস ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এ অনিয়ম ঘটলেও তা দেখার কেউ নেই।
জানা গেছে, সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই রয়েছে বৃটিশ যুগে নির্মিত ৪টি প্যাডেল জাহাজের অস্তিত্ব । এসব নৌযানের মধ্যে ১৯৯৫-৯৬ সালে ‘পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস মাহসুদ’ জাহাজ ৩টি নতুন ইঞ্জিন ও গিয়ারসহ পুনর্বাসন করা হয়। ‘পিএস টার্ণ’ নামের অপর প্যাডেল জাহাজটিতে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয় ২০০২ সালে। কিন্তু যাত্রীবান্ধব এসব নৌযাগুলো বিগত দীর্ঘদিনও আর কোন পরিপূর্ণ মেরামত দূরের কথা, এর মূল ইঞ্জিনসমূহও আর মেজর ওভারহোলিং করা হয়নি।
অথচ বিআইডবিøউটিসি’র কারিগরি বিভাগ এসব নৌযানের রক্ষণাবেক্ষণের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নৌযানগুলোর বার্ষিক মেরামত পর্যন্ত অনুপস্থিত। ফলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর থেকে এসব নৌযানের সার্ভে সনদ প্রদানও স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে কারিগরি বিশেষজ্ঞদের মতে, সংস্থাটির ৪টি প্যাডেল নৌযান-এর অবকাঠামো, উপরিকাঠামো এবং মূল ইঞ্জিনসমুহ যদি পরিপূর্ণভাবে পুনর্বাসন করা হয়, তবে তা আরো অন্তত বিশ বছর নির্বিঘেœ রাজধানীর সাথে নিরাপদে ও সাচ্ছন্দে যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করবে।
কিন্তু সংস্থাটির কতিপয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তার উদাসীনতায় এসব নৌযানকে পরিকল্পিতভাবে যাত্রী পরিবহন থেকে সরিয়ে রেখে ব্যয়বহল স্ক্রু-হুইল দুটি নৌযান পরিচালন করে লোকসানের বোঝা ভারি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে যথাক্রমে ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি নামের দুটি যাত্রীবাহী নৌযান নির্মিত হলেও তা ‘যাত্রীবান্ধব নয়’ বলে ভ্রমণে কারো আগ্রহ নেই। এসব নৌযানে যাত্রী ভ্রমন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। উপরন্তু এসব নৌযানে জ্বালানিসহ পরিচালন ব্যয় প্যাডেল জাহাজগুলোর প্রায় আড়াইগুন বেশি। অথচ পরিকল্পতভাবে গত কয়েক বছরে প্যাডেল জাহাজগুলোকে পঙ্গু করে ফেলে সে স্থলে ব্যয়বহুল দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ থেকে গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঐ দুটি নৌযান পরিচালন-এর মাধ্যমে সংস্থাটির লোকসানের পরিমান প্রায় ১৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি ব্যয়বহুল এসব নৌযান পরিচালন-এর মাধ্যমে কতিপয় কর্মকর্তার পারস্পারিক যোগসাজশে প্রতি ট্রিপেই বিপুল পরিমান জ্বালানি বেপথে চলে যাবারও সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল পর্যন্ত বিআইডবিøউটিসি’র ৪টি প্যাডেল জাহাজের মধ্যে একমাত্র পিএস মাহসুদ চলাচল উপযোগী রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী ইজারার লক্ষ্যে গত তিন মাস ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছে ‘পিএস অস্ট্রিচ’কে। সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রীর পছন্দের ইজারাদার এখনো জামানতের অর্থ জমা না দেয়ায় নৌযানটি হস্তান্তর করা হয়নি। তবে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে নৌযানটি বসিয়ে এর সব অতিরিক্ত সরঞ্জামসমুহ অপসারণ করা হয়েছে। অপরদিকে মূল ইঞ্জিনের গিয়ারে ত্রæটির কারণে গত মাসাধিককাল ধরে বন্ধ রয়েছে ‘পিএস টার্ণ’ জাহাজটি। এরই মধ্যে গত ১৯ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে মোড়েলগঞ্জ যাবার পথে প্রকাশ্য দিবালোকে সেহাঙ্গলের কাছে বিপরিত দিক থেকে আসা একটি পণ্যবাহী নৌযানের সাথে সংঘর্ষে ‘পিএস লেপচা’ জাহাজটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বন্ধ রয়েছে। গত একমাসেও ‘পিএস টার্ণ ও লেপচা’র মেরামত কাজ শেষ করতে পারেনি বিআডবিøউটিসি’র কারিগরি পরিদপ্তর।
ফলে নৌযানের অভাবে রাজধানী ঢাকা থেকে ঐতিহ্যবাহী রকেট স্টিমার সার্ভিসটি চলছে না চলার মত করেই। এসব বিষয়ে গতকাল সংস্থাটির পরিচালক-কারিগরি ও জিএম-বাণিজ্য’এর সাথে কথা বলতে তাদের ল্যান্ড ফোনে বহুবার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।