Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

১৬টি নদ-নদীতে পানি নেই: কুড়িগ্রামে আগাম খরার পদধ্বনি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৭ পিএম | আপডেট : ১:৫৬ পিএম, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯

দেশের সর্ববৃহৎ নদ-নদীময় জেলা কুড়িগ্রাম। দেশের বৃহৎ নদ ব্রহ্মপুত্রসহ, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী রয়েছে এ জেলায়। আর এসব নদ-নদীর ৩১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে সাড়ে চার শতাধিক ছোট বড় চর-দ্বীপ জেগে উঠেছে। এসব চরাঞ্চলে ৪/৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। মূলত কৃষির উপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকতে হয় এই জনপদের মানুষদের।

কিন্তু গত বছর উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং নদনদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে চরাঞ্চলের কৃষককে পড়তে হয়েছে আগাম খরার মুখে। মাটির রস শুকিয়ে যাওয়ায় আবাদকৃত ফসলের ফলন নিয়ে শঙ্কিত চরের কৃষকরা। বন্যা মানেই অভিশাপ হলেও এ জেলার জন্য বন্যা আশির্বাদস্বরূপ বলেই এখন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, কুড়িগ্রামে এবার সামনের শুষ্ক মৌসুমে বড় ধরনের খরার কবলে পড়তে পারেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে আগাম খরার কবলে পড়তে হয়েছে চরাঞ্চলের কৃষকদের। নদনদী শুকিয়ে নতুন নতুন চর জেগে ওঠার সাথে সাথে পানির অভাব দেখা দিয়েছে। রোদে ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে মাটি। বিশেষজ্ঞরাও জলবায়ুর প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদী খরার কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
জেলার মোট আবাদী জমি ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৩ হেক্টরের মধ্যে চরাঞ্চল জমি রয়েছে ৫৫ হাজার ৪০৮ হেক্টর। আর আবাদ হয় ৩৪ হাজার ৯০১ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা ধান, বাদাম, কাউন, সরিষা, তিল, তিশি, মাসকালাই, তরমুজ, মিষ্টিকুমড়া, আলু ও বাঙ্গিসহ হরেক রকম ফসল উৎপাদন করেন এসব চরাঞ্চলের জমিতে।
সদর উপজেলার চর যাত্রাপুরের কৃষক আব্দুল লতিফ (৬০) চরের তিন বিঘা জমিতে ধান, বাদাম, মাসকালাই আবাদ করেছেন। চলতি শুষ্ক মৌসুমে মাটি শুকনা থাকায় খরচ বেশি পড়েছে বলে জানান তিনি। ফলনও তেমন একটা হয়নি।
একই এলাকার বক্কর (৬৫) ও সোবহান আলী (৫৫) জানান, এবার যে তাপমাত্রা তাতে চরাঞ্চলে আবাদ করা নিয়েই সংশয়ে আছি। মাঘ মাসেই নদ-নদীর পানি কমে গেছে, বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসের দিকে যে কী অবস্থা হবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়াম্যান আব্দুর রহিম রিপন জানান, এ বছর নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাটিতে রস নেই। ফলে সেচ দিয়ে আবাদ করতে গিয়ে কৃষককে বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় চরের ফলনও কমে এসেছে। ফলে ধার দেনা করে আবাদ করলেও লোকসানের মুখে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা।
জেলা আবহাওয়া অফিসের আবহওয়া পরিদর্শক এএইচএম মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, চলতি শুষ্ক মৌসুম জুন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাপমাত্রা এবার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ারও পূর্বাভাস দেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় কুড়িগ্রামের আবাদী জমিতে পানি ধরে রাখার ধারণক্ষমতা কম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, জলবায়ুর প্রভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে নদ-নদীসহ জীববৈচিত্রে এর প্রভাব পড়ছে। জেলাকে বড় ধরনের খরার হাত থেকে রক্ষা করতে সরকার ইতোমধ্যে নদ-নদী খনন কাজের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে পানির সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন খরার কথা স্বীকার করে জানান, জেলার নদ-নদীতে পানি না থাকায় চরাঞ্চলের কৃষকসহ অনেক কৃষকই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিশেষ প্রণোদনাসহ চরাঞ্চলের কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খরার পদধ্বনি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ