Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিনাজপুরে বোরোর বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

# প্রতি মণ ধান ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা
# ঘোষণা থাকলেও শুরু হয়নি সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান
গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন, হিলি থেকে : দিনাজপুরের দক্ষিণের চারটি উপজেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। চলছে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাছ। কৃষকদের এখন ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে ফসলের মাঠে। বোরোর বাম্পার ফলনের পরও খুশি হতে পারছে এ অঞ্চলের কৃষক। উৎপাদন খরচের তুলনায় ধানের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় এবারো হতাশ হয়েছেন কৃষকরা।
জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে প্রকারভেদে বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৪ শ’ থেকে ৬ শ’ টাকা মণ দরে। অথচ সরকারিভাবে ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মণ ৯২০ টাকা। অপরদিকে ধান কেনার আগ্রহ না থাকায় কৃষকরা ধান নিয়ে ঘুরছেন আড়তদারদের দ্বারে দ্বারে। চিকুন জাতের ধান আড়তদাররা কিছুটা কিনলেও মোটা জাতের ধান কিনতে চাইছেন না ওই সব আড়তদার। এ অবস্থায় ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষক। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে একশ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী আড়তদাররা। ফলে বাধ্য হয়ে কৃষকদের কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে গত ৫ মে থেকে সারাদেশে সরকারিভাবে ধান কেনার ঘোষণা থাকলেও গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত এ অঞ্চলে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে পারেনি স্থানীয় খাদ্য বিভাগ। হাকিমপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা জগ্ময় রায় জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পাওয়ায় ধান কেনা অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না।
গত বছরের তুলনায় এবার এ অঞ্চলে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় দিনাজপুরের দক্ষিণের উপজেলা হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ এবং ঘোড়াঘাট উপজেলায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এবারে ঝড়, বৃষ্টি-বাদল না থাকায় এবং ক্ষেতে পোকার আক্রমণ কম হওয়ায় আবাদ তুলনামূলক অনেক ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে চিকুন জাতের ধান উৎপাদন হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ মণ আর মোটা জাতের ধান উৎপাদন হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ মণ।
এদিকে বোরোর বাম্পার ফলনের পরও হাসি নেই কৃষকের মুখে। সরকার প্রতি মণ ধানের দাম ৯২০ টাকা বেঁধে দিলেও খোলাবাজারে আড়তগুলোতে প্রতি মণ মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা এবং চিকুন জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা মণ দরে।
কৃষকদের অভিযোগ, একশ্রেণীর আড়তদার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ কারণে বাজারে ধানের দাম বাড়ছে না। চিকুন জাতের ধান বাজারে বিক্রি হলেও মোটা জাতের ধান আড়তদাররা কিনছেন না। এখানে মোটা জাতের ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। তারা বলছেন, একসময় এই ধান বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রয়োজন মেটানো গেলেও এখন আবাদের টাকাই ওঠে না।
বিরামপুর উপজেলার এক কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, এখন ধান আবাদ করে কৃষকের ছেলে- মেয়েদের গোশত ভাত খাওয়ানো সম্ভব নয়। এক কেজি গরুর গোশতের দাম ৩৮০ টাকা আর এক মণ ধানের দাম ৪০০ টাকা। তিনি বলেন, ধান আবাদ করে ছেলে-মেয়েদের বেশি দূর লেখাপড়া করানো যাবে না। তার অভিমত, কৃষকের ছেলেদের কৃষক হয়েই থাকতে হবে।
এদিকে ধান ক্রেতা আড়তদার ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধান কেনার প্রতি চালকল মালিকদের চাহিদা না থাকায় ধানের দাম বাড়ছে না। এ অবস্থায় তাদের কিছুই করার নেই বলেও জানান তারা।
দিনাজপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার ১৩টি উপলোয় ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৭৬ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দিনাজপুরে বোরোর বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ