পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শীতলক্ষ্যা নদী রূপগঞ্জকে পূর্ব পশ্চিমে দুইভাবে বিভক্ত করেছে। আর রূপগঞ্জের একেবারে পশ্চিম সীমানা ঘেঁষে রয়েছে বালুনদী। এ দুই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে রূপগঞ্জের শিল্পাঞ্চল ও কৃষি । শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বতীরে শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠলেও পশ্চিম তীর অর্থাৎ বালু নদীর পূর্ব অঞ্চলে কৃষিই উপজীব্য। মূলত বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানিকে অবলম্বন করেই এখানকার সর্বপ্রকার কাজ পরিচালিত হয়।
একটা সময় ছিল শীতলক্ষ্যার টলটল পানি পানও করতো মানুষ। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। পান করাতো দুরের কথা বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি স্পর্শও করা যায় না। নদী পথে চলাচলের সময় নাকে রুমাল চেপে রাখতে হয়- ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বাঘবাড়ি এলাকার নূরুল হক মিয়া। এ ক্ষোভ শুধু নুরুল হকের নয়। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের তীরবর্তী গ্রামগুলোর কয়েক লাখ মানুষের। এলাকাবাসীর দুঃখ নদীর পঁচা পানি। রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠ ও রূপগঞ্জের কোলঘেঁষে প্রবাহমান শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী এখন দূষণ-দখলে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। নয়ন জুড়ানো রূপ তার ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছিল দুই যুগ আগেই। নদীতে এখন কোনো মাছ নেই। বেড়েছে মশার উপদ্রপ। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানির। বেড়েছে রোগ-বালাই। পঁচা পানির কটু গন্ধে তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে। বিপন্ন হয়ে গেছে পরিবেশ। বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। দূষণের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে নদী দখলের প্রতিযোগীতাও চলছে।
একসময় ভোর আর বিকালে হাওয়া বিলাসীরা নদীর দুই পাড়ে হাঁটতো। তাতে প্রফুল্ল হতো দেহ-মন। নদীপাড়ের হাওয়া, লাখ টাকার দাওয়া। এখন এ প্রবাদ ফিকে হয়ে গেছে। নদী যাতে থাকতে না পারে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকার পয়োবর্জ্য ও শিল্প-কারখানার বর্জ্য পড়ে নদীর পানি এখন আলকাতরার মতো কালো হয়ে গেছে। স্থানীয়রা একে ‘পঁচা’ পানি বলে চেনে।
সরেজমিনে বালু নদের তীরবর্তী বালুরপাড়, নগরপাড়া, দাসেরকান্দি, বাবুরজায়গা, ফকিরখালী, বেড়াইদ, নাগদারপাড়, গৌড়নগর, ত্রিমহনীসহ বিভিন্ন গ্রামগুলোর মানুষের সঙ্গে কথা বলে পচা পানির কারণে তাদের নানা সমস্যার চিত্র ফুটে ওঠে। গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, আজও নাগরিক সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। নারকীয় পরিবেশের সঙ্গে বোধকরি এর তুলনা করা চলে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও যেন তাদের নেই। তাদের ভালভাবে বেঁচে থাকার সুযোগটুকুও যেন কেড়ে নেয়া হয়েছে। এ পঁচা পানিতেই বৌ-ঝিয়েরা থালাবাসন পরিষ্কার করছে। কৃষক গরু-ছাগল গোসল করাচ্ছে। এমনকি পানির অভাবে লোকজন এ পঁচা পানিতেই গোসল করছে।
নদীর উভয় তীরজুড়ে কৃষি জমি। এখানে বিভিন্ন রকমের ফসলের চাষ করেন স্থানীয় কৃষকেরা। পচা পানির কারণে এখন ফসলের উৎপাদন কমে গেছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। কথা হয় বর্গাচাষী মারতুজার সঙ্গে। তারা বলেন, আগে জমিনো বিঘায় ধান পাইতাম ৪০ মণ। অহন অয় ১৮ মণ ২০ মণ। পঁচা পানি ক্ষেতে দেওনে আলীর ( চারার ) গোড়া মোডা অইয়া যায়। ফলন অয়না। কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, আগে এই বিশাল এলাকার দুই-তিন ফসলি জমিন এহন এক ফসলি অইয়া গেছে। কারণ অন্য ফসল পঁচা পানিতে নষ্ট অইয়া যায়। স্থানীয় কৃষকরা জানান, বিকল্প না থাকায় জমিতে তারা নদীর পঁচা পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাইজুল ইসলাম কৃষকদের বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, পঁচা পানির কারণে এসব এলাকার কৃষিতে বিরাট ধরণের ক্ষতি হচ্ছে। পানিতে প্রচুর কার্বনডাইঅক্সাইড থাকার কারণে চারাগাছের গোড়া পচে যায়।
দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে দখলের প্রতিযোগীতাও। দখলদাররা বালু নদী দখলে নিতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করছে। নদীপাড়ে বাঁশের খুঁটি পুতে, গাছের ডালপালা ফেলে ছোপ ( ঘের ) ফেলা হয়। মূলত বুঝানো হয় এখানে মাছ আটকানো হবে। পরে ধীরে ধীরে ঐ ছোপের জায়গায় বালু ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়। বালু নদীর ঢাকার ডেমরা থেকে তুরাগের মোহনা পর্যন্ত দু’তীরে প্রায় ১৬০ টির মতো ছোপ রয়েছে বলে স্থানীয় জেলেরা জানান। এসব ছোপ নদীপাড়ের প্রভাবশালীদের দখলেই রয়েছে। একই চিত্র শীতলক্ষ্যা নদীতেও দেখা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।