Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাটির ট্রাকের দাপটে দফারফা মেশিনপাড়-দিঘীড়পাড় সড়ক, ধুলায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

ষ্টাফ রিপের্টার, সাভার | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৯, ৪:৩৬ পিএম | আপডেট : ৪:৪১ পিএম, ২১ জানুয়ারি, ২০১৯

ঢাকার সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের একটি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অধিক ওজনের ড্রাম্প ট্রাক হাজার বারেরও বেশি চলাচল করে। ফলে মেশিনপাড় থেকে দিঘীড়পাড় র্পযন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। চলার অযোগ্য সড়ক আর ধুলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সড়কের ওই অংশ সংলগ্ন গ্রামের জনজীবন। অতিরিক্ত ধুলার কারণে মানুষের ফুসফুসজনিত জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বভিন্নি স্থানে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ধর্মপুর সিরামিক্স ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করা হয়। তাই প্রতিদিন মাটিবোঝাই বহু ড্রাম্প ট্রাক ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। ড্রাম্প ট্রাকের বেপরোয়া চলাচলে ধুলোবালি উড়ে রাস্তার পাশে থাকা সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ির ভিতরে ঢুকে আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বিছানা, খাবার জনিসিপত্রেও ধুলায় ভরে একাকার হয়ে যায়। এমনকি ধুলায় সড়কের পাশের গাছপালাও ধূসর হয়ে গেছে। সড়কটি সংস্কাররে দাবী জানানো হলেও এখনও কোন সাড়া মেলেনি বলে এলাকাবাসীর দাবী।

ভুক্তভোগী এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এই সড়কে ভারী ওজনের ড্রাম্প ট্রাক চলাচল করলেই চারদিকে ধুলায় ভরে যায়। নাক-মুখ চেপে চলাচল করতে হয়। ধুলার হাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়ির জানালা-দরজা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। শীতের এই শুষ্ক মৌসুমে পরস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

র্দীঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার না করায় ভারী ওজনের ট্রাক চলতে চলতে সড়কের ইট-সুড়কি উঠে ধুলায় পরিনত হয়েছে। ধুলোর কারণে ওই সড়কের পাশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘœ ঘটছে। যার ফলে পরিবেশ অসহনীয় পর্যায় চলে গেছে বলে দাবী স্থানীয়দের।

স্থানীয় ভুক্তভোগী সিরাজ মল্লিক জানান, এ সড়কটি দিয়ে হাজার বারেরও বেশি মাটির ট্রাক যাতায়াত করে। ফলে ধুলাবালিতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। সড়কের পাশে যাদের বাড়ি আছে তারা চরম বিড়ম্বনায় পড়েন। বাড়ি ঘরের লেপ-কাঁথা ধুলাবালুতে নোংরা হয়ে যায়। প্রতিবাদ করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। কারণ প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় চলছে মাটির ট্রাক।

স্থানীয় ইশান মাদবর বলেন, ওই সড়কটি দিয়ে অনবরত ড্রাম্প ট্রাক চলাচলের ফলে ধুলাবালিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রভাবশালী মহল মাটি আনার কাজে জড়িত থাকায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতেও সাহস পায় না।

স্থানীয় জুলফিকার আলী ভুট্টো জানান, মাটির ট্রাকের কারণে আমাদের এই এলাকায় থাকাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ করলেই পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখায় তারা। তাই সহজেই কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।

সড়কটির পাশ দিয়ে রয়েছে আমেনা পাইলট স্কুল, মার্তৃছায়া কিন্ডারগার্টেন, দিঘিরপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গণিমিয়া প্রি-ক্যাডেট স্কুল। ধুলোর কারণে এসব স্কুলের পাঠদানেরও ব্যাঘাত ঘটছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ইটভাটায় মাটি পরিবহন করার কাজে ব্যবহৃত ড্রাম্প ট্রাকগুলো স্কুলের পাশ দিয়ে চলাচল করায় স্কুলের জানালা খোলা রাখতে পারি না। কারণ খোলা রাখলে ধুলো দিয়ে আমরাসহ ছাত্র-ছাত্রীদের জামা কাপড় নষ্ট হওয়া ছাড়াও শ্বাস-প্রস্বাসে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া স্কুল সংলগ্ন রাস্তাটি সবসময় ধুলোয় অন্ধকার থাকে। ধুলোর কারণে শিক্ষার্থীদের জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে ঠিকমতো আসতে চায় না।

তবে প্রতিনিয়িত এসব ভারী যানবাহন চলাচলে সড়কগুলো ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও এসব বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালীসহ রাজনৈতিক দাপুটে ব্যক্তিরা এসব মাটি সরবরাহের সঙ্গে জড়িত থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ রাস্তায় মাটি বহনকারী ড্রাম্প ট্রাকের ধুলায় চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।

আবার অতিরিক্ত ধুলার কারণে মানুষের ফুসফুসজনিত জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানান সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য র্কমর্কতা ডা. আমজাদুল হক। তিনি বলনে, ধুলার কারনে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, নিউমোকানিয়াসওস, নিউমোকানিয়াসিস, টিবি, ব্রংকাইটিস, সাধারণ কাশি, শ্বাসনালিতে ইনফেকশন প্রদাহসহ নানান রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম সুরুজ বলেন, সড়কটির কারণে সাধারনণ মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। ইট ভাটার মাটি ফেলেও ফসলি জমি নষ্ট করছে তারা। একাধিকবার ভাটা কর্তৃপক্ষকে বলেও কোন ফল পাইনি। তারা আমার কথার কোন কর্ণপাত করছে না বলেন চেয়ারম্যান।

মাটি সরবরাহকারী হিসেবে ফারুক হোসেনের নাম শুনা গেলে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে পাওয়া যায়নি।



 

Show all comments
  • Habib ২১ জানুয়ারি, ২০১৯, ৬:৪১ পিএম says : 0
    সারা দেশেই এই অবস্থা !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্মপুর সিরামিক্স ইটভাটা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ