বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামী শাসনের এ ধারাবাহিকতা ধ্বংস করে পশ্চিমা কিছু নাস্তিক্যবাদী ধারণা। যেমন- আব্রাহাম লিঙ্কনের মার্কিন গণতন্ত্র, ইউরোপের ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতি, কার্ল মার্ক্সের সমাজতন্ত্র ইত্যাদি। বিশেষ করে আমাদের উপমহাদেশে ব্রিটিশরা মুসলিম শাসনব্যবস্থা শুধু ভেঙে চুরমার করেনি; বরং শত বছরের কৌশল ও কূটনীতির মাধ্যমে এ অঞ্চলের উলামায়ে কেরামের মন থেকে ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজসেবার রূপরেখাটি পর্যন্ত মুছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর কঠিন ও অচিন্তনীয় নির্মম নৃশংস নির্যাতনের মাধ্যমে উলামায়ে কেরাম ও ইসলামপন্থী বিপ্লবীদের ধ্বংস করে দেয়। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ৫০ হাজার আলেমকে হত্যা করে। যার মধ্যে ১৪ হাজার আলেম, হাফেজ, পীর ও মুজাহিদকে গাছে ফাঁসি দিয়ে মাসের পর মাস ঝুলিয়ে রাখে। উইলিয়াম উইলিয়াম হান্টারের ভাষায়- আরাকান থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত প্রলম্বিত শেরশাহ সূরি সড়কের দুই পাশে এমন কোনো বড় গাছ ছিল না যাতে আমরা ইংরেজরা কোনো না কোনো বিপ্লবীকে ফাঁসি না দিয়েছি।
ইউপির হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি, মাওলানা কাসেম নানুতবী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী ও তাদের সাথিরা এ সময় যুদ্ধে পরাজিত হন। রহমতুল্লাহ কিরানভী ও হাজী সাহেব মক্কায় চলে যান। বাংলা, বিহার ও ভারতীয় অন্যান্য রাজ্যে সংগ্রামী আলেমদের হত্যার পাশাপাশি অনেককে দেশান্তরের সাজা দেয়া হয়। আন্দামান, নিকোবরসহ সুদূর মাল্টা পর্যন্ত উলামায়ে কেরামকে কালাপানির সাজা দেয়া হয়। দেওবন্দের প্রথম সন্তান শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান, তার শিষ্য হুসাইন আহমদ মাদানি, মাওলানা ফজলে হক খায়রাবাদী- এসবের ভুক্তভোগী। মাওলানা খায়রাবাদী তার ঐতিহাসিক কিতাব আছছাওরাহ আল-হিন্দিয়া ১৮৫৭-তে এর কিছু ইতিহাস সংরক্ষণ করেছেন। মাওলানা জাফর থানেশ্বরী কিছু লিখে গেছেন। মাওলানা মুহাম্মদ মিঁয়া সাহেব তার ঐতিহাসিক কিতাব উলামায়ে হিন্দ কা শান্দার মাযিতে এসবের বর্ণনাই দিয়েছেন। তার কিতাবের শেষ পাতায় তিনি এ ধরনের একটি মূল্যায়ন দিয়েই কিতাবটি শেষ করেছেন- ১৯০ বছরের ইংরেজ শাসক মুসলমানদের এ ভূখন্ডে ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার এত বড় ক্ষতি করে গেছে, যার দৃষ্টান্ত পাওয়া কঠিন। সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দানকারী সুলতান, উজির, সেনাপতি, মুফতি, কাজী ও মুন্সি এবং তাদের তাত্তি¡ক পথপ্রদর্শক উলামায়ে কেরাম এমন মানসিক অবস্থায় পৌঁছে গেছেন যে পূর্ণ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান, যেখানে কুরআন ও সুন্নাহর সামগ্রিক চর্চা হয়, সেখানে আলেমগণ ইচ্ছাকৃতভাবে এ কথাটি লিখে দিয়ে থাকেন যে, এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই অথবা অরাজনৈতিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। যে আশাটি ইংরেজরা করেছিল। আজ ইংরেজ বিদায় হওয়ার প্রায় ৭০ বছর পরও তাদের দোসররা উলামায়ে কেরামের কাছে এমন আচরণই প্রত্যাশা করছে। প্রকৃত শিক্ষিত ও বিজ্ঞ আলেমরা যদি দীর্ঘ সিয়াসত পুনরায় জিন্দা করেন, তা হলে দীর্ঘ দিন পরে হলেও এ দেশের নাগরিকদের ভুল ভাঙবে। পশ্চিমা রাজনীতির শয়তানি পদ্ধতি থেকে এ জাতি মুক্তি লাভ করবে। রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থান মূল মালিক আল্লাহ ও রাসূলের খলিফা আমীর বা ইমামের মাধ্যমে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক ইসলামী ব্যবস্থা জারি হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জন্য নিজস্ব জনপদে এ পদ্ধতির বাইরে থাকার সুযোগ নেই।
এ বাস্তব চিত্রটি চিন্তায় রেখে সবচেয়ে যোগ্য মুহাদ্দিস ও ফকিহগণ, মুফাসসির ও মুফতিগণ, মুফাক্কির ও মুজাহিদগণ যদি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে ৯২ ভাগ মানুষকে সবদিক দিয়ে প্রস্তুত করেন, তা হলেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীনি পরিবেশ ও ব্যবস্থা কায়েম করা সহজ হবে। বিচ্ছিন্ন দলবদ্ধতা, অনৈক্য ও বিক্ষিপ্ত মন-মানসিকতা ধীরে ধীরে আমীর ও জামাত-কেন্দ্রিক হয়ে গড়ে উঠবে। উলামায়ে কেরামের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে তারা যেমন পরীক্ষিত ও সফল- বিশেষ করে ইমামতে সুগরার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে তারা ধীরে ধীরে এক সময় জাতির সর্ববৃহৎ কর্মক্ষেত্র রাষ্ট্র ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ইমামতে কুবরার আসনটিও লাভ করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।