Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয় ভারত

সংবাদমাধ্যমকে অমর্ত্য সেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিতে আইন পাস করা ভারতের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের উপেক্ষার অভিযোগ করেছেন নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আটক করে মিয়ানমারে প্রত্যর্পণের ভারতীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সংবাদমাধ্যম নিউজ এইট্টিনকে তিনি বলেছেন, নাগরিকত্বের সঙ্গে ধর্মীয় পরিচয়ের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না।
ধর্মীয় সূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া না দেওয়ার আইন পাস করাটা ভারতের সংবিধানের মূল নীতির ব্যত্যয়। প্রতিবেশী হিসেবে রোহিঙ্গাদেরও ভারতের সহানুভূতি পাওয়ার অধিকার আছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। এমন বাস্তবতায় রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দশ লাখে।
ভারতের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ২০১৬ তে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশকারী হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, শিখ ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ভারতের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত এই নতুন আইনে কোনও সুসংবাদ নেই আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য। ভারত বরং তাদের চিহ্নিত করে মিয়ানমারে প্রত্যর্পণের আদেশ দিয়েছে।
ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছে নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তার ভাষ্য, ‘এটা অদ্ভুত যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর অমুসলিমদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দিলেও মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য কোনও জায়গা দিতে পারছে না ভারত। অথচ ভারতের শাসকপক্ষ ভালো করেই জানে, মিয়ানমারে তাদের কী ধরনের অসহিষ্ণুতা ও নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।’
অমর্ত্য সেন আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশী দেশগুলোতে কঠিন অবস্থায় থাকা অপরাপর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মতো তাদেরও সহানুভূতি পাওয়ার অধিকার আছে। আমি মনে করি, ধর্মের সঙ্গে নাগরিকত্বের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না। এটাই হচ্ছে মূল কথা। এটা সাংবিধানিক নীতিও। ভারত স্বাধীন হওয়ার কালে কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তাই আমি মনে করি, নাগরিকত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিমের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ধর্মীয় বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকার সাংবিধানিক নীতির নিশ্চিত লঙ্ঘন।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে অস্পষ্ট অবস্থান আসিয়ান মন্ত্রীদের
গত বছর ডিসেম্বরে মিয়ানমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ানকে সঙ্গে নিয়ে ধাপে ধাপে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে। তবে শুক্রবার থাইল্যান্ডে শেষ হওয়া আসিয়ানের দুইদিনের বৈঠক থেকে প্রত্যাবাসন নিয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। বৈঠক থেকে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের নেপথ্য কারণ উদঘাটন করে বাস্তুচ্যুতদের ফিরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, প্রত্যাবাসন উদ্যোগে সহায়তা দিতে আসিয়ানের যে প্রতিনিধি দলের রাখাইনে যাওয়ার কথা ছিল, ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’র অবসান না হলে তারা সেখানে যাবেন না। ঠিক করে নাগাদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে, তার দিনক্ষণও জানাতে পারেনি তারা।
১৭ ও ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে আসিয়ানের পক্ষ থেকে বলা হয়, মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণ খুঁজে বের করা এবং তার সমাধানে সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা, যাতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে পারে। আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি রাষ্ট্র থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রামুদিনি সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে আসিয়ান জাতিসংঘের কাছে সহযোগী হওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছে সংস্থাটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ