পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৃষ্টি মানেই রাজধানীবাসীর পানিবদ্ধতা ও যানজটের দুর্ভোগ। নগরবাসীকে বাঁচাতে সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। কিন্তু তাদের কোন উদ্যোগই দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে রেহাই দিতে পারছে না। চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমের আগে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসনে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই যা শেষ করার সরকারী বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।
রাজধানীর পানিবদ্ধাতা নিরসনে স্যুয়ারেজ লাইনের বেশিরভাগ ও অল্প সংখ্যক ড্রেনেজ লাইনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে ঢাকা ওয়াসা। এর বাইরে অল্প সংখ্যক স্যুয়ারেজ ও বেশিরভাগ ড্রেনেজ লাইনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এই সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের মধ্যেও কোন সমন্বয় দেখা যায় না। এ কারণেই ঢাকার পানিবদ্ধতার সমস্যার কোন স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে, সিটি কর্পোরেশন কিংবা ঢাকা ওয়াসার মধ্যে যে কোন একটি সংস্থাকে এ সকল কাজের দায়িত্ব দিতে হবে। তা না হলে, রাজধানী থেকে পানিবদ্ধতার সমস্য কোন দিনও দূর হবে না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা ইনকিলাবকে বলেন, ডিএনসিসি এলাকার পুরনো ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার কাজ হাতে নিয়েছি। যেখানে মেরামত করার দরকার সেখানে মেরামতের কাজ করছি। এছাড়াও নতুন ড্রেনেজের কাজও চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, গত বর্ষা থেকে রাজধানীতে আর আগেরমত পানিবদ্ধতা নেই। আগে যেমন সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে কোমর সমান পানি দেখা গিয়েছিল, গত বছর তা হয়নি। তবে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার কারণে চলতি বছর কিছু কিছু এলাকায় পানিবদ্ধতা হতে পারে। সেটাও যেন না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছি।
ঢাকা শহরের ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণেই বর্ষা মৌসুমে রাজধানীবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে এ সমস্যা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থার জন্য সিটি কর্পোরেশন এবং ওয়াসা পরস্পরকে দায়ী করে নিজেদের ব্যর্থতা বরাবরই আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বারবার জানানোর পরও দুই সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসা আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট অফিসে বহু অভিযোগপত্র জমা পড়লেও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি রাজধানী ঢাকাকে শতভাগ পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনার জন্য ২০১২ সালে ওয়াসা যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, তাও মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার টেকনিক্যাল বিভাগের পরিচালক শহীদ উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা ওয়াসার আওতাধীন ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজে ব্যবস্থার পুরনো কাজগুলোর মেরামতের কাজ চলছে। চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজের জন্য আমরা সরকারের কাছে ৬০ কোটি টাকার বাজেট চেয়েছি। তিনি বলেন, আশা করি অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমরা বাজেট পেয়ে যাবো। ঢাকা শহরের পানিবদ্ধতা নিরসনে আমাদের নতুন প্রকল্পের কাজগুলো আগামী বর্ষার আগেই শেষ হবে বলেও তিনি জানান ।
সূত্র মতে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে শুরু হওয়ার আগে সরকার, সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা পানিবদ্ধতা নিরসনের জন্য নানা প্রতিশ্রুতির কথা শোনায়। মূলত সেইসব উদ্যোগ কাগজে কলমে এবং বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তাদের ঘোষণা মত উদ্ধার হয়নি দখলি খাল ও নিচু ভূমিসমূহ, পরিষ্কার করা হয়নি বঙ্খালগুলো, বাড়ানো হয়নি খালের নাব্যও।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপন, খাল দখলমুক্তসহ পানিবদ্ধতা নিরসনে দাতাসংস্থার সহায়তায় ৮০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নেয়া হয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে ২৬০ মিলিয়ন ডলার, ডেনমার্কের ড্যানিডা কোম্পানি ওয়াটার ট্রিটমেন্টের জন্য ৯০ মিলিয়ন, এডিবি ১০০ মিলিয়ন ডলার, জাপানের জাইম ও জেবিকা কোম্পানি পর্যায়ক্রমে ৬০০ মিলিয়ন ইয়েন, যুক্তরাজ্য ও ডিএফআইডি ২১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়। কিন্তু ড্রেনেজ ব্যবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
ওয়াসা জানায়, পানিবদ্ধতা মোকাবিলায় বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় এক হাজার ১৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ ২০১২ সাল নাগাদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এখনো শেষ হয়নি। পানিবদ্ধতা নিরসনে রামপুরা পাম্পিং স্টেশনে ৫৫টি পাম্প বসানো, রাজধানীর খালগুলো দখলমুক্ত ও খনন করার কথাও বলা হয়েছে। এভাবে প্রতি বছর পানিবদ্ধতা নিরসনে ব্যাপক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কিন্তু বর্ষা এলেই নগরীতে পানিবদ্ধতা থামানো যাচ্ছেনা।
জানা গেছে, স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের একটি মহাপরিকল্পনা ২০১২ সালে ঢাকা ওয়াসা গ্রহণ করে। তবে অত্যন্ত ধীরগতি ও পরিকল্পনা মাফিক কাজ না হওয়ায় এ প্রকল্পও অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তখন প্রায় ১৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা (১৬০ কোটি ডলার) ব্যয়ে ডেনমার্কের গ্রন্টমিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসার অধীনে প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ও ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডিএমডিপি) অঞ্চলের মোট ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনার এ মহাপরিকল্পনা তৈরি করে। কিন্তু সমন্বয়হীনতার কারণে এসব পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখছে না।
নগর বিশেষজ্ঞরা পানিবদ্ধতার জন্য যে সব কারণ চিহ্নিত করেছেন সেগুলো হচ্ছে, অপরিকল্পিত নগরায়ন, নগরীর অভ্যন্তরীণ খাল দখল ও গতিপথ সঙ্কচিতকরণ, নগরীর সলিড ওয়েস্ট অপসারণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, নিচু জলাশয়ে সলিড ওয়েস্ট ডাম্প করা, গৃহস্থালী বর্জ্য ড্রেনেজ নেটওয়ার্কে সরাসরি নিক্ষেপ করা, খালের গতিপথে আড়াআড়ি রাস্তা নির্মাণ, নগরীর অভ্যন্তরে খাল, জলাশয়, ডোবা ভরাট করে ফেলা, রাস্তা মেরামতে ড্রেনেজ লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়া, বহুতল ভবনের বালিসহ কাদামাটি ড্রেনে প্রবেশ, বিভিন্ন সংস্থার ইচ্ছামত ড্রেন সংযোগ, উন্মুক্ত স্থানের ময়লা যথাসময়ে পরিষ্কার না করা, শহর রক্ষা বাঁধের অভ্যন্তরে ক্যাচমেন্ট এলাকায় কম ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পিং ব্যবস্থা ইত্যাদি। এছাড়া ওয়াসা, ডিসিসি, রাজউক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেলওয়েসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকলেও পানিবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসা ছাড়া অন্যরা তেমন ভূমিকা পালন করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প আলোর মুখ দেখে না।
ওয়াসা আরো জানায়, রাজধানী ঢাকায় ১৩৬ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ড্রেনেজ সিস্টেম রয়েছে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পানি নিষ্কাশনের জন্য আরও ১২০ কিলোমিটার ড্রেনেজ সিস্টেম দরকার। এছাড়া বক্স কালভার্ট রয়েছে ১২ কি.মি., ওপেন ক্যানেল রয়েছে ৬৫ কি.মি., ৩টি পাম্প স্টেশন এবং বৃষ্টির পানি (স্ট্রম ওয়াটার) নিষ্কাশনের জন্য ওয়াসার লাইন রয়েছে ২৫০ কি.মি. কিন্তু দরকার তারও দ্বিগুণ। উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় ড্রেনেজ সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশের ড্রেনগুলো ময়লা আর্বজনা জমে বন্ধ হয়ে আছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে ময়লা আবর্জনা একাকার হয়ে যাচ্ছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। আবার কখনো কখনো করলেও ড্রেন থেকে ময়লা উঠিয়ে ড্রেনের পাশেই রেখে দেয়া হয়। ড্রেনের পাশে ময়লা বহুদিন পড়ে থাকার পর বৃষ্টির পানি কিংবা আস্তে আস্তে সেই ময়লা আবার ড্রেনে গিয়ে পড়ে। এতে করে ড্রেনগুলো অনেক স্থানেই একেবারে বন্ধ হয়ে আছে। অন্যদিকে, রাজধানীর মাত্র ৩০ শতাংশ এলাকায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এসব লাইনের বেশিরভাগই এখন অকেজো। কর্তৃপক্ষ যেখানে লিকেজ পাচ্ছে, সেখানে সংস্কারের চেষ্টা করছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, ডিএসসিসি’র প্রকৌশল শাখা থেকে রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভার্ট, ড্রেন ও স্যুয়ারেজের কাজ সারা বছর ধরেই করতে হয়। এর বাইরে বর্ষ মৌসুমকে সামনে রেখে ড্রেন, স্যুয়ারেজের কাজের প্রতি আমাদের আলাদা গুরুত্ব দিতে হয়। সে কারণেই আমাদের আওতাধিন ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ লাইনগুলো পরিষ্কার রাখার চেষ্টা সারা বছরই অব্যাহত থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।