Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন কষ্ট প্রশমন, উপকার ও কল্যাণ সাধন-২

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার ভাইয়ের প্রতি অবিচার করতে পারে না। তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে না। তাকে অপদস্থ করতে পারে না।
(মনে রাখবে) ‘তাকওয়া (আল্লাহভীতি) এখানে।’ বাক্যটি বলে তিনবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজ বুকের দিকে ইশারা করলেন। (তারপর বললেন,) কোনো লোকের অপদার্থ হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট, সে তার মুসলমান ভাইকে অবমূল্যায়ন করে। এক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জীবন, সম্পদ ও সম্মান (নষ্ট) হারাম। (সহিহ মুসলিম)
হাদিস দুটিতে মুসলিম সমাজের সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের পূর্বশর্ত বিবৃত হয়েছে। মুসলমানরা একে অপরের শত্রু তো হতে পারবেই না, এমনকি অন্য কোনো শত্রুর হাতে তুলে দিতেও পারবে না। অথচ আমরা এমনটিই করে থাকি। আফসোস! মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে শত্রুতা করা বা তার অন্য শত্রুকে উৎসাহিত বা সাহায্য করা এখন আমাদের প্রকাশ্য সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘরে-বাইরে, সমাজে-প্রতিষ্ঠানে, রাজনীতিতে, এমনকি ইলমি ও আধ্যাত্মিক অঙ্গনেও আমাদের এ মেজাজ ও খাসিয়ত প্রায় প্রতিষ্ঠিত বাস্তবে পরিণত হয়েছে। হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতারণাকে তো দোষই আর মনে করি না আমরা। আর অপর ভাইয়ের কোনো দোষত্রুটি ঢেকে রাখার তো প্রশ্নই যেন আসে না।
কী করে সেই গোপন বিষয় প্রকাশ ও প্রচার করে সমাজে তাকে হেয়, লজ্জিত এমনকি অবাঞ্ছিত করা যায়, সে চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়ি। তিলকে আরো তাল বানিয়ে দুর্নাম ছড়াই। মনে করি, এই তো পরম সুযোগ! যা করার এখনই করতে হবে। হোঁচট খেয়েছে, তো এই ধাক্কায় একেবারে কোমর ভেঙে দিতে হবে। কাদায় পা আটকে গেছে তো সেই কাদাতেই পুঁতে ফেলতে হবে।
অপর ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ, কষ্ট দূরীকরণ, মূল্যায়ন ও সম্মান প্রদানও যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনময় সুন্নত; তা তো আমাদের বয়ানে, লেখায়, দাওয়াতে আমরা উল্লেখই তেমন করি না। হয়তো নিজেরাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই চারিত্রিক উপদেশ ও গুণাবলিকে সুন্নত বলে বিবেচনা করি না।
অথচ সুন্নতের ওপর আমাদের কথা ও লেখার অন্ত নেই। এটা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান সুন্নতের সঙ্গে, এমনকি স্বয়ং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক ধরনের ঘৃণ্য প্রতারণা বা খেয়ানত নয় কি? এবং এর জন্যে সিরাত ও হাদিসের ধারক-বাহক আমাদের মতো কিছু অপদার্থ মানুষই কি দায়ী নয়? আমরা যখন আমাদের কোনো মুসলমান ভাইকে অপমানিত, অপদস্ত বা অবমূল্যায়িত করতে উঠেপড়ে লাগি, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষা ও বক্তব্য অনুযায়ী আমরা অপদার্থই বটে।
অপর মুসলমান ভাইয়ের জীবন, সম্পদ ও সম্মানের প্রতি যতদিন আমরা যত্মবান, দায়িত্ববান ও নিরাপদ না হবো, ততদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ অমান্য করা এবং সুন্নতের বরখেলাপ করার অপরাধে আমরা অপরাধীই হতে থাকব। আমাদের উচিত নিজেদের ও সাধারণ মানুষের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবহেলিত, অনালোচিত ‘মেঘে ঢাকা সুন্নত’সমূহের প্রকাশ ও বিকাশ সাধন করা।
নবীজি বলেছেন, (হজরত আনাস রাজি. থেকে বর্ণিত) তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃত সুন্নাহর মানদন্ডে পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।



 

Show all comments
  • Mahbubur Rahman ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
    মানবিক গুণাবলির মধ্যে মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করা একটি অন্যতম গুণ। সমাজে নিয়মশৃঙ্খলা, প্রেম-প্রীতি ও শ্রদ্ধা-সম্মানের এ মহৎ গুণের উসিলায় শান্তি নেমে আসে সমাজে। ইসলামে তাই অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Zulfiqar Ahmed ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
    সৎ স্বভাব ও সৎ আচরণের মাধ্যমে আমরা এ গুণটি জীবনের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে ফুটিয়ে তুলতে পারি। পরিবারের সদস্য হিসেবে আদব রক্ষা করা যেমন সবার উচিত, তেমনি মর্যাদা-সম্মান প্রদর্শন করাও সবার কর্তব্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Kabir Sardar ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
    মানুষের উত্তম স্বভাব ও শিষ্টাচার পার্থিব এবং পারলৌকিক জীবনে উপকারে আসে, পারস্পরিক সম্পর্ক ও শিষ্টতা নির্ভর করে মর্যাদা-সম্মান প্রদর্শনের ওপর।
    Total Reply(0) Reply
  • Khorshed Alam ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
    পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে আমরা বসবাস করি। পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্যবোধ ও মমতার বাঁধনে সংসার হয় সুখের। তাই সমাজ ও সংসারের আদব রক্ষার জন্য আমাদের সবার বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা একান্ত কর্তব্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahirul Islam ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
    আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন, যারা বড়দের শ্রদ্ধা করে না এবং ছোটদের স্নেহ করে না, তারা আমার উম্মত নন। তিনি আরও বলেছেন, যে যুবক কোনো বৃদ্ধের প্রতি তার বার্ধক্যের কারণে সম্মান প্রদর্শন করে, আল্লাহতায়ালা সেই যুবকের শেষ বয়সে তার জন্য সম্মানকারী ব্যক্তি পয়দা করে দেবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • matiur rahman ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
    সত্যিকারভাবে মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে সম্মান প্রদর্শনের ওপর। সুন্দর চেহারা উত্তম পরিচ্ছদ পরিধানকারী অধিক মর্যাদা দেয়া বা সমাদর করা এ বিধান ইসলামের কোথাও নেই। হজরত নবী করিম (সা.) বিদায় হজের খুতবায় বলেছেন, যে কোনো আরববাসী কোনো অনারব বা আজমি লোকের তুলনায় এতটুকুই শ্রেষ্ঠ নয়। কৃষ্ণকায় ব্যক্তি, শ্বেতকায় ব্যক্তি কৃষ্ণকার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Harun Ur Rashid ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
    মানবিক মূল্যবোধের কারণে আমাদের সবাইকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। আমরা ব্যক্তি, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি কাজকর্ম জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সবার মধ্যে পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন করে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, মর্যাদা ও সম্মান বোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যেন এক পরিপূর্ণ ভালোবাসার বেহেশতি জগৎ গড়ে তুলতে পারি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন