বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার ভাইয়ের প্রতি অবিচার করতে পারে না। তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে না। তাকে অপদস্থ করতে পারে না।
(মনে রাখবে) ‘তাকওয়া (আল্লাহভীতি) এখানে।’ বাক্যটি বলে তিনবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজ বুকের দিকে ইশারা করলেন। (তারপর বললেন,) কোনো লোকের অপদার্থ হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট, সে তার মুসলমান ভাইকে অবমূল্যায়ন করে। এক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জীবন, সম্পদ ও সম্মান (নষ্ট) হারাম। (সহিহ মুসলিম)
হাদিস দুটিতে মুসলিম সমাজের সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের পূর্বশর্ত বিবৃত হয়েছে। মুসলমানরা একে অপরের শত্রু তো হতে পারবেই না, এমনকি অন্য কোনো শত্রুর হাতে তুলে দিতেও পারবে না। অথচ আমরা এমনটিই করে থাকি। আফসোস! মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে শত্রুতা করা বা তার অন্য শত্রুকে উৎসাহিত বা সাহায্য করা এখন আমাদের প্রকাশ্য সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘরে-বাইরে, সমাজে-প্রতিষ্ঠানে, রাজনীতিতে, এমনকি ইলমি ও আধ্যাত্মিক অঙ্গনেও আমাদের এ মেজাজ ও খাসিয়ত প্রায় প্রতিষ্ঠিত বাস্তবে পরিণত হয়েছে। হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতারণাকে তো দোষই আর মনে করি না আমরা। আর অপর ভাইয়ের কোনো দোষত্রুটি ঢেকে রাখার তো প্রশ্নই যেন আসে না।
কী করে সেই গোপন বিষয় প্রকাশ ও প্রচার করে সমাজে তাকে হেয়, লজ্জিত এমনকি অবাঞ্ছিত করা যায়, সে চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়ি। তিলকে আরো তাল বানিয়ে দুর্নাম ছড়াই। মনে করি, এই তো পরম সুযোগ! যা করার এখনই করতে হবে। হোঁচট খেয়েছে, তো এই ধাক্কায় একেবারে কোমর ভেঙে দিতে হবে। কাদায় পা আটকে গেছে তো সেই কাদাতেই পুঁতে ফেলতে হবে।
অপর ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ, কষ্ট দূরীকরণ, মূল্যায়ন ও সম্মান প্রদানও যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনময় সুন্নত; তা তো আমাদের বয়ানে, লেখায়, দাওয়াতে আমরা উল্লেখই তেমন করি না। হয়তো নিজেরাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই চারিত্রিক উপদেশ ও গুণাবলিকে সুন্নত বলে বিবেচনা করি না।
অথচ সুন্নতের ওপর আমাদের কথা ও লেখার অন্ত নেই। এটা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান সুন্নতের সঙ্গে, এমনকি স্বয়ং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক ধরনের ঘৃণ্য প্রতারণা বা খেয়ানত নয় কি? এবং এর জন্যে সিরাত ও হাদিসের ধারক-বাহক আমাদের মতো কিছু অপদার্থ মানুষই কি দায়ী নয়? আমরা যখন আমাদের কোনো মুসলমান ভাইকে অপমানিত, অপদস্ত বা অবমূল্যায়িত করতে উঠেপড়ে লাগি, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষা ও বক্তব্য অনুযায়ী আমরা অপদার্থই বটে।
অপর মুসলমান ভাইয়ের জীবন, সম্পদ ও সম্মানের প্রতি যতদিন আমরা যত্মবান, দায়িত্ববান ও নিরাপদ না হবো, ততদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ অমান্য করা এবং সুন্নতের বরখেলাপ করার অপরাধে আমরা অপরাধীই হতে থাকব। আমাদের উচিত নিজেদের ও সাধারণ মানুষের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবহেলিত, অনালোচিত ‘মেঘে ঢাকা সুন্নত’সমূহের প্রকাশ ও বিকাশ সাধন করা।
নবীজি বলেছেন, (হজরত আনাস রাজি. থেকে বর্ণিত) তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃত সুন্নাহর মানদন্ডে পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।