রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে এক শ্রেণীর দালালচক্র দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা করে আসছে। এতে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে এসব মাটি ট্রাক দিয়ে ইটভাটায় নেয়ায় গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। গ্রামীন কাঁচা রাস্তা, পাকা সড়ক ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নিতিমালা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। নিতিমালা না মানার জন্য শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্টে। এলাকার সাধারণ মানুষসহ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়ানের সরাইদহ গ্রামের সোহরাব হোসেনসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ভুইয়াগাঁতী এলাকায় অবস্থিত হিরো ব্রিকস, এসএন ব্রিকস, কিয়া ব্রিকস, দেওভোগ এলাকার হাসান ব্রিকসসহ বিভিন্ন ইটভাটার ইট তৈরির জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারকৃৃত উপকরণ হচ্ছে মাটি। সেই মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে কৃষি জমি থেকে কতিপয় স্বার্থান্বেষী দালাল চক্ররা জমির মালিকদের মাটি কাটার জন্য ভুল বুঝিয়ে অনুমোদন ছাড়াই এসব মাটি কাটাসহ নদী রক্ষা বাঁধ কেটে নিয়ে ইটভাটায় সরবরাহ করছে।
এসব মাটি লাইসেন্স বিহীন ট্রাকে সরকারি সম্পদ নষ্ট করে বালু, সিমেন্ট, মাটি অবাদে পরিবহন করার কারণে রাতারাতি মালিকরা লাখ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করছে। রাত-দিন চব্বিশ ঘন্টা মাটি বহনের জন্য গ্রামীন কাঁচা-পাকা সড়কগুলো চাকার তলায় পৃষ্ট হয়ে এক থেকে দুই ফিট ডেবে যাচ্ছে। এছাড়া মাটি পরিবহনের সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদের কাঁচা রাস্তাগুলো কেটে নষ্ট করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি লক্ষ লক্ষ টাকায় নির্মাণকৃত কাঁচা রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, যা আবার নির্মাণ করতে সরকারের প্রচুর পরিমাণ অর্থ অপচয় করতে হবে।
এ দিকে ভোগান্তির শিকার উপজেলার চার লক্ষাদিক মানুষ। মাটি পরিবহণ কারীরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। এছাড়া স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব মাটি কেটে তা পরিবহন করা হচ্ছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন। ইট ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অসংখ্য ট্রাক। যার ফলে সরকারের রাজস্ব ধ্বংস হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, রায়গঞ্জ উপজেলায় নতুন পুরাতন মিলে ৬০টির বেশী ইট ভাটা রয়েছে। বৈধ রেজিস্ট্রেশন রয়েছে ১৪ টির মত আর সবগুলোর বৈধ কোন কাগজ পত্র নাই। স্থানীয় কৃষি অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটাগুলো। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাটার কর্মরত কর্মচারীরা জানান পরিবেশ অধিদফতর ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকেন। ভাটাগুলোতে মাটি ও ইট বহনকারী বৈধ কাগজ পত্র বিহীন ট্রাক ব্যবহৃত হয়। ড্রাইভিং সনদ বিহীন, অপ্রশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক দ্বারা চালিত হয়, যাদের ট্রাক পরিচালনা আইনের বিন্দুবিসর্গ পর্যন্ত জ্ঞান নেই তাদের। যে কারণে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে নিরীহ পথচারিদের। গত কয়েক মাসে এক শিশুসহ দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে, মারাত্মক আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে। এ সব ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভাটা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহন চালকরা। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫, পরিবেশ বিধিমালা-১৯৯৭, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০১, শব্দ দূষণ বিধিমালা -২০০৬, পরবর্তীতে ইট প্রস্তুত এবং ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ এর ৮-ধারা অনুযায়ী কৃষি জমি ও আবাসিক এলাকায় ভাটা স্থাপন দন্ডনিয় অপরাধ এপর অগ্রাহ্য করে নতুন একাধিক ইটভাটা নির্মাণের কাজ চলছে মহাসমারোহে। অনাবাদি ২ একর জমি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও প্রতিটি ইটভাটা নির্মাণে ১০ একরের অধিক দো-ফসলি আবাদি কৃষি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিধিমালা অনুযায়ী ভাটার আধা কিমি-এর মধ্যে আবাসিক বাড়ি, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,এলজিইডির পাকা রাস্তা, ইট ভাটা স্থাপন করাও নিষিদ্ধ। যদি কোন ব্যক্তি ধারা-৮ এর উপধারা-১ এর বিধান লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করেন তাহলে তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগ কর্তৃক ইটভাটার জন্য নির্ধারিত স্থানটি কৃষি জমি হিসেবে দাবি করলে এবং এ অফিস কর্তৃক ইট ভাটা বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করা হলে উদ্যোক্তা ইট ভাটা বন্ধ করতে বাধ্য থাকবে এবং কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না। ইট ভাটার মালিকরা এই আইনের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কৃষি জমিতে অবৈধ মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করা, ঘণ বসতীপূর্ণ লোকালয় ও সড়কের পাশে ইট ভাটা নির্মাণ করছেন। অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভাটা মালিকরা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে দেখেও না দেখার অভিনয় করছে। বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা স্থানীয় কৃষি অফিস দাবি তো দূরের কথা তাদের চোখের সামনে একের পর এক গড়ে ওঠা প্রতিটি ভাটা নির্মাণে ১০একরের বেশি কৃষি জমি ব্যবহার করছে ভাটা মালিকরা। ইট ভাটার জন্য যে স্থান হতে মাটি কাটা হবে ওই স্থানকে পাড় বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ পুকুরে পরিণত করতে হবে তা না করে যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খননের ফলে একদিকে মাছ চাষের উপযুক্ত হচ্ছে না অন্য দিকে উবর ফসলি জমি যাতে সেখানে মৎস্য চাষ করা যায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে মজা পুকুর , খাল , খাড়ি , দীঘি, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় , চরাঞ্চল বা তৎসমতুল্য জায়গা থেকে ইট তৈরির মাটি সংগ্রহ করার কথা থাকলেও তা যেন শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। তা না করে যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খননের ফলে একদিকে মাছ চাষের উপযুক্ত হচ্ছে না অন্য দিকে ফসলি জমির পরিমাণ দিন কমে যাচ্ছে। এ ভাটাগুলো এ সব নিয়মের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখালেও কর্তৃপক্ষ অজানা কারণে নিশ্চুপ।
ইট ভাটাসহ এইসব ট্রাকের বিরুদ্ধে সঠিক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বৃদ্ধিসহ সরকারি সম্পদ রক্ষা হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও প্রশাসনের নিরবতায় বিবেকবান মানুষের মনে জন্ম নিচ্ছে নানা প্রশ্ন ও জনমনে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।