বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বাংলাদেশ শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ। যদিও দীনি শিক্ষার অভাবে এ দেশের নেতৃত্ব ইসলামী ব্যবস্থার সাথে পরিচিত নয়। ইসলামপন্থীরাও সুন্নাহর আসল স্বরূপ নিয়ে অগ্রসর নয়। উলামায়ে কেরাম অনেকেই ইলম থাকা সত্তে¡ও রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যাপারে সচেতন নন। যারা সচেতন আছেন, পরিবেশগত কারণে তাদের অনেকেই রাজনীতিতে আসতে চান না।
তা ছাড়া রাজনীতির ধারণাও এ দেশে ভ্রান্তিতে পূর্ণ। দীনি বা নববী সিয়াসত আর প্রচলিত রাজনীতি যেহেতু এক নয়, সুতরাং অসংখ্য উলামায়ে কেরাম রাজনীতি-সচেতন ও যোগ্য হওয়া সত্তে¡ও প্রচলিত রাজনীতিতে আসেন না। অজ্ঞ লোকেরা তাদের অরাজনৈতিক মনে করলেও আসলে তারা একটি ব্যাপক গভীর ও অর্থবহ রাজনীতিতেই আছেন। এটিই শরীয়তি রাজনীতি। সুতরাং কোনো আহলে ইলম রাজনীতি করেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি না।
আপনি যদি কোরআন-সুন্নাহ ও সীরাত মুতালাআ করেন, তা হলে পলিটিক্স খুঁজে পাবেন না। যার অর্থ রাজনীতি। আপনি পাবেন কালেমার দাওয়াত, কিতাবুল্লাহর তিলাওয়াত, তালীম, তাযকিয়া, তরবিয়ত ও জিহাদ। এসব কি রাজনীতি নয়? নাগরিক তৈরি, পরিবার ও সমাজ গঠন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আমিরকে মানা, সংগঠিত থাকা, এ সবই তো সফল রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। মানুষের চিন্তা-চেতনা, ইবাদত-বন্দেগী, আর্থ-সামাজিক লেনদেন ও পারস্পরিক মানবিক নৈতিক সম্পর্ক এবং আত্মশুদ্ধিসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের সংস্কার ইত্যাদি সবই ওপরে বর্ণিত কর্মসূচির মধ্যে শতভাগ নিহিত আছে।
নগর-সভ্যতা বা নাগরিক রাষ্ট্র যখন বৃহৎ ভ‚গোল নিয়ে বিশ্বময় একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রের রূপ পরিগ্রহ করে ইসলামে তখনো এটিকে দুনিয়াদারী বলে গণ্য করা হয় না। যদিও দুনিয়াদাররা তাদের পরিভাষায় একে পরাশক্তি, সাম্রাজ্য কিংবা বৃহৎ বাদশাহী আখ্যায়িত করে। যুগে যুগে যেসব মামলাকাত, সালতানাত, হুকুমাত ইত্যাদি নাম গ্রহণ করে একধরনের রাজকীয় ধারণা নির্মাণ করেছে।
কিন্তু আসলে ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়াহ’ নামের বৈশ্বিক রাষ্ট্রব্যবস্থাটি মসজিদে নববীর সামগ্রিক কর্মসূচিরই একটি ফলিত বাস্তবায়ন মাত্র। শরীয়তে যাকে ইমামতে সুগরা ও ইমমাতে কুবরা বলা হয়। এ খিলাফত-পদ্ধতির রাজনীতি যখন একটি জনপদের সবচেয়ে বড় বুযুর্গ ও আহলে ইলমগণ ইমারতের আওতায় জামাতবদ্ধ হয়ে সুচিন্তিতভাবে পরিচালনা করেন, সাথে শক্তি ও অর্থনীতি যোগ হয়, নানা শ্রেণি ও পেশার সমমনা বিশেষজ্ঞরা এতে সন্নিহিত হন তখন ইমাম বা আমীর একটি মুসলিম জনপদকে দীনের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখার ওপর চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ করার নামই খিলাফত।
পশ্চিমা ধারণার ফলে, দীর্ঘদিন খেলাফত না থাকার ফলে, জনগণ পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ফলে, অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য ও অল্প শিক্ষিত আলেমগণ প্রচলিত রাজনীতিতে আসার ফলে মুসলিম সমাজেও দীন, সিয়াসত ও ইমারতের ধারণা ধূলিধূসরিত হয়ে যায়।
দীর্ঘ ১৩শ’ বছর মোটামুটি একটি কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলায় মুসলিম বিশ্ব পরিচালিত হয়। কখনো নিষ্কলুষ খিলাফত (খিলাফতে রাশেদা) কখনো কোনো শাসকবংশ, কখনো কোনো নতুন শাসকগোষ্ঠী কেন্দ্রীয়ভাবে মুসলমানদের পরিচালনা করে। কেন্দ্র দুর্বল হয়ে পড়লে আঞ্চলিকভাবে কেন্দ্রকে স্বীকার করেও অনেক সৎ ও যোগ্য শাসক খেলাফতে রাশেদার আলোকে বিশাল বিশাল রাজ্য পরিচালনা করেন।
কোরআন-সুন্নাহর মূলনীতির ওপর এসব আমীর বা শাসক ব্যক্তিগত রুচি ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বর্ণিল চরিত্রের থাকলেও তাদের বিচার ও প্রশাসন ছিল শতভাগ ফিকাহ ও ফতোয়ার আলোকে পরিচালিত। শত শত আঞ্চলিক শাসকের নাম মুসলমানের ইতিহাসে এমন পাওয়া যাবে, যাদের প্রত্যেকেরই শাসনব্যবস্থা আধুনিক পশ্চিমা রাষ্ট্রব্যবস্থার সবগুলো থেকে হাজার গুণ সফল ও উত্তম। ন্যায়বিচার, সুশাসন ও নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে এসব শাসক আরও হাজার বছর বিশ্ববাসীর মান্য ও পাঠ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।