Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অতিথি পাখি শূন্য জাবিতে পাখি মেলা!

জাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ৬:২৪ পিএম

অতিথি পাখি, শীত, পাখি মেলা আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যেন একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারণ প্রতিবছর এ ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে আসে নাম না জানা অসংখ্য অতিথি পাখি। আর এসব অতিথি পাখিকে কেন্দ্র করে ২০০১ সাল থেকে পাখি মেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো ১৮তম ‘পাখি মেলা-২০১৯’।

কিন্তু এ বছর ‘অতিথি পাখি’র অভরায়ণ্য খ্যাত এ ক্যাম্পাসটির অধিকাংশ লেকেই দেখা যায়নি ‘অতিথি পাখি’। যার কারণে ভোরের কুয়াশা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা লাল শাপলার জলে অতিথি পাখির কিচিরমিচির, খুনসুটি আর ওড়াওড়ি দেখতে পারেনি। আর এসব দেখতে না পেরে দর্শনার্থী সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হতাশা ব্যক্ত করে দ্রুত পাখির আবাস্থল সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোড় দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে ঘুরতে আসা তিন বন্ধু ফাহিমা, আদিবা, যূথি বলেন, ‘আরো আগে একবার পাখি মেলায় এসেছিলাম। তখন লেকগুলোতে অনেক অতিথি পাখি দেখেছি। কি সুন্দর করে পাখিরা ওড়তো, কিচিরমিচির ডাকতো। কিন্তু এবার কোন পাখি দেখতে পারি নাই, খুব খারাপ লাগছে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পাখি তাড়ায় যে মেলা তার নাম পাখি মেলা’- এই জাতীয় নানা পোস্ট দিতে দেখা গেছে।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, পাখি মেলাকে উদ্দেশ্য করে প্রচুর বাহিরের দর্শনার্থী ক্যাম্পাসে আসে। তারা অনেকেই গাড়ি নিয়ে আসে। যেসব গাড়ির শব্দে পাখিরা চলে যায়। এছাড়াও বাহিরের থেকে আসা দর্শনার্থীরা অসতর্কতাবশত বিভিন্ন কাজ করে থাকে, যার কারণেও পাখিরা চলে যায়।

এদিকে আজ শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত এই পাখি মেলার উদ্বোধন করেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বিশ^বিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে উপাচার্য বলেন, পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিত করতে হলে সুন্দর এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ অক্ষুণœ রাখা হয়েছে। এ কারণে প্রতি বছর শীত মৌসুমে পরিব্রাজক পাখি নিয়মিতভাবে এখানকার জলাশয়ে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ আয়োজিত এ পাখিমেলায় উপাচার্য তাঁর ভাষণে আরও বলেন, পাখি মেলায় এসে বাচ্চারা নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এতে পাখির প্রতি মমত্ব এবং সংযোগ বাড়ছে। উপাচার্য তাঁর ভাষণে বিগত শতকের ষাট এবং সত্তর দশকের ঢাকার স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেই সময়ে ঢাকা সবুজ ছিল। অনেক জলাশয় ছিল। সেখানেও পাখি আসতো। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙত। এখন সেই ঢাকা নেই। জলাশয় ভরাট, ইট, পাথর, কংক্রিটের নানাবিধ কাজের মধ্যদিয়ে মানুষ সবুজ প্রকৃতি ও পাখ-পাখালির ঢাকার পরিবেশ নষ্ট করেছে। এখন সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

সকাল দশটায় অনুষ্ঠিত পাখিমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ড .ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, আইসিইউএন বাংলাদেশ প্রতিনিধি রাকিবুল আমিন, কথা সাহিত্যিক আখতার হোসেন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন পাখিমেলার আহবায়ক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মডারেটর ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এটিএম আতিকুর রহমান।
এদিকে এ বছর দ্বিতীয় বারের মত পাখিমেলায় বিগ বার্ড বাংলাদেশ এ্যাওয়ার্ড, কনজার্ভেশন মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ও সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন এ্যাওয়ার্ড ২০১৯ প্রদান করা হয়। নতুন ও দুর্লভ প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়ায় এবার বিগ বার্ড বাংলাদেশ এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন যথাক্রমে শফিকুর রহমান শুভ্র, মো. কায়েস ও তৌকির হাসান হৃদয়।
এছাড়া কনজারভেশন মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন রাহুল এম ইউসুফ, আদিব মুমিন আরিফ ও আব্দুল্লাহ আল ওয়াহিদ।
এছাড়া সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মুনতাছির আকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম পুরষ্কৃতদের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
এছাড়া মেলায় দিনব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল- আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলারস দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, স্টল সাজানো প্রতিযোগিতা (পাখির আলোকচিত্র ও পত্র-পত্রিকা প্রদর্শনী), জাবি ক্যাম্পাসের পাখি বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখিচেনা প্রতিযোগিতা (অডিও-ভিডিও এর মাধ্যমে), পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা (সকলের জন্য উন্মুক্ত) এবং পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাখি মেলা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ