বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজীদ এ বিষয়ে শতাধিক জায়গায় আলোকপাত করেছে। আখেরাত অস্বীকারকারীদের সেসমস্ত দুর্বোধ্যতা ও যুক্তিহীন কাল্পনিক প্রশ্নের অবসান ঘটিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াতও পড়ে দেখুন।
সূরা ইয়াসিনের একেবারে শেষাংশে আখেরাত সম্পর্কে সেসস্ত কাল্পনিক সন্দেহ-সংশয়ের জবাবদান প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণ কুদরতের উদ্ধৃতি দিয়ে মুশরেকিনদের বুদ্ধিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘সেই একক ক্ষমতার অধিকারী যিনি আসমান, জমিন (এবং তন্মমধ্যস্থিত যাবতীয় বস্তুকে) সৃষ্টি করেছেন তিনি কি এ ক্ষমতা রাখেন না যে, এমনি ধরনের আবারো সৃষ্টি করবেন? নিঃসন্দেহে তিনি সে ক্ষমতা রাখেন। তিনি অসংখ্য সৃষ্টির স্রষ্টা এবং সর্বজ্ঞ। তার মহিমা তো এ রকম যে, তিনি যখনই কোনো কিছু সৃষ্টি করতে চান, তখন শুধু বলেন, ‘হয়ে যাও’ আর অমনি তা হয়ে যায়।’ (সূরা ইয়াসিন : আয়াত-৮১-৮২)। অর্থাৎ কোনো বস্তুকে অস্তিত্ব দান করতে এবং সৃষ্টি করতে শুধুমাত্র তার ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ই যথেষ্ট। এমতাবস্থায় নিজেরই সৃষ্ট কোনো সৃষ্টিকে একবার মৃত্যু দান করার পর পুনর্বার জীবিত করে দেয়া তার জন্য কঠিন কিছু নয়।
সূরা রূমে বলা হয়েছে, ‘তিনিই সৃষ্টিজগৎকে প্রথমবার সৃষ্টি করেন, তারপর আবার তিনিই তাকে সৃষ্টি করবেন। আর (বলা বাহুল্য) একবার সৃষ্টি করার পর পুনরায় সৃষ্টি করা তার পক্ষে অনেক বেশি সহজ। আর আসমান ও জমিনে তার মহিমা সর্বোচ্চ। তিনি বড়ই পরাক্রমশীল (একক ক্ষমতাশীল) ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা রূম : আয়াত ২৭)। সূরা হজ্জে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষগণ কেয়ামত এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সম্পর্কে যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ-সংশয় থেকে থাকে, তা হলে (ভেবে দেখো) আমি তোমাদের তৈরি করেছি মাটির দ্বারা, অতঃপর বীর্যের দ্বারা, অতঃপর জমাট রক্তপিন্ড থেকে, অতঃপর পূর্ণাকৃতি ও অপূর্ণাকৃতি খন্ড থেকে, যাতে আমি তোমাদের সম্মুখে আমার ক্ষমতা প্রকাশ করে দিতে পারি। আর আমি যে বীর্যকে ইচ্ছা জরায়ুতে স্থিতি দান করি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত। তারপর বের করে আনি তোমাদেরকে শিশু বানিয়ে, যাতে অতঃপর তোমরা পরিপূর্ণ যৌবনে পৌঁছাতে পারো। আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ থাকে যাদেরকে তুলে নেয়া হয় (যৌবনেই)। আবার কেউ কেউ থাকে যাদেরকে পৌঁছানো হয় (বার্ধক্যপূর্ণ) অথর্ব বয়স পর্যন্ত। (তার পরিণতি হয় এই যে,) জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভের পর পুনরায় তারা (সঙ্কুচিত হয়ে) জ্ঞানে খর্ব হয়ে থেকে যায়। আর মৃত্যু পরবর্তী জীবনের আরেকটি প্রমাণ হলো এই যে, তোমরা দেখে থাকো, ভ‚মিকে বিশুদ্ধতার পর যখন তার ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন যেটি সজীব হয়ে উঠে, শস্যশ্যামল হয়ে যায় এবং নানা রকম সবুজ গাছ-গাছালি অঙ্কুরিত করে। এসব প্রক্রিয়া এজন্য যে, আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব সত্য। (আর যাতে তোমরা নিজের চোখে দেখে বুঝতে পারো যে,) তিনিই মৃতদের জীবনদাতা এবং সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ সক্ষম। আরো যেন বুঝতে পারো যে, অবশ্যই কেয়ামত সমাগত। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর নিশ্চিতই আল্লাহ তায়ালা পুনরায় জীবিত করে তুলবেন কবরে সমাহিত মৃতদেরকে।’ (সূরা হজ্জ : আয়াত ৫-৭)।
কোরআনে বর্ণিত এসব আয়াতের সারসংক্ষেপ এটাই যে, মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করার বিষয়টিতে সন্দিহান কিন্তু তা বুঝার ইচ্ছা পোষণকারী মানুষ যদি নিজের সৃষ্টি ও জন্মের ব্যাপারে এবং তার শৈশব থেকে শুরু করে বার্ধক্য পর্যন্ত নিজের জীবনের এসব ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে চিন্তা করে, যাতে তার কোনো অধিকার চলে না এবং যা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার হুকুমে হয়ে থাকে। তেমনিভাবে সে যদি ভ‚মির এই বিবর্তন সম্পর্কে চিন্তা করে যে, এক ঋতুতে তা সম্পূর্ণ বিশুষ্ক, নিষ্প্রাণ ও মৃত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং তাতে জীবনের কোনো চমক বা কোনো তরঙ্গ দেখা যায় না; কিন্তু তারপর যখন আল্লাহর স্বীয় রহমতের পানি তার ওপর বর্ষণ করেন, তখন সেই মৃত ভ‚মির ভেতর থেকে জীবন ও সজীবতা শস্যের আকারে নির্গত হয়ে যায়। (মোট কথা, মানুষ যদি নিজের অস্তিত্ব এবং নিজের পায়ের তলার ভ‚মির এসব বিবর্তন নিয়ে সত্যিকার একজন জ্ঞানান্বেষীর মতো চিন্তাভাবনা করে,) তা হলে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান আর কেয়ামতের ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকতেই পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।