Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তৃতীয় দিনেও ভয়াবহ যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল ও সেলিম উদ্দিন কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে ঢাকা ফিরছিলেন বুয়েটের প্রকৌশলী আনোয়ারুজ্জামন। স্বপরিবারে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় দুপুরের খাবার খেতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এক রেস্তোরায় আসেন তিনি। এ সময় তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট লেগেই থাকছে। গাড়ি চালকদের নিয়ম ভাঙার মহড়া, হাওইয়ে পুলিশদের উদাসীনতা এবং পথচারীদের নিয়ম ভঙের প্রতিযোগিতা প্রধান কারণ।
তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যত্রতন্ত্র গাড়ি পার্কিং, যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো, হাইস্পীডে গাড়ি চালানো দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কোন নজির নেই। তবে ওই প্রকৌশলীর দাবি, পুলিশ ও প্রশাসন ইচ্ছে করলেই সড়ক-মহাসড়কের এসব অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে সক্ষম।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর থেকে গৌরীপুর পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পথে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। গত বুধবার রাত থেকে এ যানজটে অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত এ যানজট ছাড়েনি। বরং আজ শুক্রবার হওয়ায় মহাসড়কে বিকাল ৫ টার পর থেকে ছোট বড় গাড়ির চাপ বাড়ার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা। তবে চট্টগ্রামমুখী গাড়িগুলো কিছুটা ধীরগতিতে এগোলেও ঢাকামুখী কোনো গাড়িই নড়ছে না। সড়কে আটকা পড়ে আছে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ কয়েক হাজার গাড়ি। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাস ও ট্রাক চালকদের মধ্যে নীতিভঙ্গের কারণে যানজট কোন ভাবেই কমানো যাচ্ছে না ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গতকাল বৃহস্প্রতিবার টানা তৃতীয় দিনে দীর্ঘ যানজট অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। বিশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চলাচলের কারণে মহাসড়কে যানজটে স্থবির জনজবীন আর প্রচন্ড শীতে আটকে পরা যাত্রীবাহী ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটকে পড়ে দুর্ভোগের কারণে বেড়েছে ভোগান্তি। এদিকে যানজটে আটকে থাকা গাড়িতে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ছে যাত্রীরা। গত বুধবার রাতে মহাসড়কের সোনারগাঁও এলাকায় যানজটে আটকে থাকা একটি মাক্রোবাসে হামলা চালিয়ে নগদ টাকা ও ৭টি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিতাইকারীরা।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, আজ শুক্রবার এবং আগামীকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মহাসড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় যানবাহন ধীর গতিতে চলাচলের কারণেই মহাড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কের এমনিতেই অতিরিক্ত গাড়ির চাপ আবার অন্যদিকে কয়েক মাইল যানজট হলেই রাতের বেলায় পণ্যবাহী গাড়ির চালকরা সড়কের মাঝপথে রেখেই ঘুমিয়ে পড়ার কারণেই যানজট বেড়েছে। তবে ছিনতাইয়ের বিষয়ের ব্যপারে হাইওয়ে পুলিশ কোন অভিযোগ পায়নি বলে জানান।
কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসা এশিয়া লাইন পরিবহনের যাত্রী স্কুল শিক্ষক আব্দুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বুধবার রাত ৭ টায় ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে ভোর ৬ টায় কুমিল্লায় পৌঁছতে হয়েছে। এদিকে রাতের ভোগান্তির পর বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দিনভর মহাসড়কের মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতুর উভয় দিকে যানজটে হাজার হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়ে। এতে ঢাকা-কুমিল্লা সড়কে ২ ঘণ্টার সড়ক যাতায়াতে লেগে যাচ্ছে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হাসানপুর শহীদ নজরুল ইসলাম সরকারী কলেজের ছাত্র জাহিদ, এমরান, কামাল, সাইফুল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তীব্র যানজটের কারণে দাউদকান্দি থেকে কলেজ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার পথ হেঁটে কলেজে পৌঁছতে হয়েছে। শহীদনগর রজনীগন্ধ্যা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মার্জিয়ারা বেগম বলেন, যানজটের কারণে তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে যাওয়ার জন্য মহাসড়কের পাশে পাঁয়ে হেটে যাওয়ার রাস্তাটিও এলোপাতাড়িভাবে গাড়ী দাড় করে রাখায় চলাচলে কষ্ট হয়েছে।
কুমিল্লা থেকে ঢাকা যেতে দুই ঘণ্টার রাস্তায় সময় লাগছে ১০-১২ ঘণ্টা। অনেকেই দীর্ঘ যানজটে আটকে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। শীতের রাতে আটকেপড়া যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আমদানি-রফতানি পরিবহন বন্ধ থাকার পর অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও টানা দুদিন ধরে মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতুতে গাড়ি আটকে থাকায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়।
দাউদকান্দির গৌরীপুরের পত্রিকার এজেন্ট মজিবুর রহমানের ব্যবস্থাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, রাত তিনটার পত্রিকা সকাল ১০টায় পৌঁছেছে। দাউদকান্দির স্বল্পপেন্নাই গ্রামের মাইক্রোবাস চালক আবদুস সালাম বলেন, গতকাল রাতে ঢাকার গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়ে দুই ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে ১২ ঘণ্টা সময় লেগেছে।
হাইওয়ে পুলিশের দাউদকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম জানান, গোমতী ও মেঘনা সেতু এলাকায় টোল আদায় ও বিকল্প সেতু নির্মাণের কারণে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে সাপ্তাহিক ছুটি সামনে রেখে শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পেতে পাওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। তবে যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ