পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা তৃতীয় দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। মিরপুরের কালশী, বিমানবন্দর সড়ক, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, রোকেয়া সরণি ও পল্লবী এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। এ সময় রাস্তায় অবস্থান নিলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ঘটনা ঘটে পোশাকা শ্রমিকদের। পুলিশ টিয়ার সেল ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শ্রমিকদের অবরোধে কারনে পুরো নগরজুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা মিরপুর রোড, মহাখালী, ফার্মগেট, উত্তরা, শাহবাগসহ বিভিন্ন সড়কে যানবাহন আটকে থাকতে দেখা যায়।
অন্যদিকে শ্রমিক বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় গতকাল সাভারের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০টি পোশাক কারখানার শত শত শ্রমিক বিক্ষোভ করে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ঘটনা ঘটলে পুলিশ গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপে করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সংঘর্ষের সময় অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছে। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভের ঘটনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক কয়েক ঘন্টা বন্ধ থাকায় এই সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
গত রাতে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে হেমায়েতপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উড়াইল এলাকার আনলিমা গার্মেন্টসের সামনে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন সুমন মিয়া (২২)। তিনি ওই গার্মেন্টরই একজন কর্মী। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সহকর্মীরা তাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া বকেয়া বেতন পরিশোধ ও মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ জরুরি বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন তৈরি পোশাক কারখানার মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। শ্রমভবনে পোশাক শ্রমিক-মালিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নবনিযুক্ত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, গত ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া পোশাক শ্রমিকদের বেতন কাঠামোতে কোন বৈষম্য বা অসঙ্গতি থেকে থাকলে চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যেই তা সংশোধন করা হবে। ফের্রুয়ারিতে সংশোধিত গ্রেডিংয়েই বেতন পাবেন শ্রমিকরা। এ বৈঠকে শ্রমিকদের আন্দোলন ছেড়ে নিজ নিজ কারখানার কাজে ফিরে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন নবনিযুক্ত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার ও সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু এক বিবৃতিতে জানান, সব গ্রেডে সমান হারে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং অবিলম্বে পোশাক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, ছাঁটাই ও নির্যাতন বন্ধ করা হউক।
জানা গেছে, গতকাল সকালে দক্ষিণখানে পোশাক শ্রমিকরা নিপা গার্মেন্টের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকরা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল ছুড়ে। এ সময় উভয়পক্ষে সংঘর্ষে ১০ পোশাক শ্রমিক ও পুলিশের দুই সদস্য আহত হন।
দক্ষিণখান থানার এসআই সুজন জানান, শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরায় তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন করে পোশাক শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আজমপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশ তাদের টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা রেললাইনের ওপর অবস্থান নেন। পোশাক শ্রমিকরা ওই এলাকায় দুটি গাড়ি ভাংচুর করেন। পুলিশও দফায় দফায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে। এ সময় ওই এলাকায় প্রাণ গ্রুপের একটি গাড়ি ও একটি প্রাইভেটকার ভাংচুর করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ৮টার পর থেকে পোশাক শ্রমিকরা মিরপুরের কালশী সড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ দিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ টিয়ার সেল ও লাটিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিমানবন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর থেকে উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টের শ্রমিকরা জড়ো হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আসার চেষ্টা করে। তারা বিভিন্ন গার্মেন্টে গিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করে। শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে উত্তরার আবদুল্লাহপুর এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন সময় সাভারের আশুলিয়া ও হেমায়েতপুর এলাকায় এ শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে।
শ্রমিক, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার স্টান্ডার্ড গ্রুপের সামস, টিসিএল-২ ও দাদ গার্মেন্টেসের শ্রমিকদের সাথে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে শ্রমিকদের উপর লাঠিচার্য, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়া দক্ষিদড়িয়াপুর এলাকার জেকে গামের্ন্টসের কিছু শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানায়, নতুন মজুরি কাঠামোতে বেতন বৈষম্যের বিষয়টি শ্রমিকরা বেশ কিছু দিন যাবৎ মালিক পক্ষকে জানিয়ে আসছে। তবে তাদের কথায় কর্তৃপক্ষের কোন সাড়া না পাওয়ায় মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার মূল ফটকের সামনে হেমায়েতপুর-ট্যানারী সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সড়িয়ে দিতে ব্যার্থ হলে লাঠিচার্য শুরু করে। এসময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে শুরু হয়ে যায় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের উপর জলকামানও নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ সহ অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা সামিনুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে সড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকলে লাঠিচার্য, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও যে কোন অপ্রিতীকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এদিকে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকার মদিনা এ্যাপারেলস, কাঠগড়া জিরাব এলাকার সাউদান মিলেনিয়াম, টেক্সটাউন গ্রুপ, হ্যকন কোরিয়া, সাউদান ডিজাইন, মেট্রোনিটিং, চারাবাগ এলাকার নিউ এশিয়া, লিলি ফ্যাশন কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। পরে বিশৃঙ্খলা এড়াতে কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলো একদিনের ছুটি ঘোষনা করেছে।
শ্রমিকরা জানায়, আমাদের নূন্যতম বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন গত ডিসেম্বরে জারি হয়েছে। কিন্তু সেখানে আমাদের সব দাবি-দাওয়া উত্থাপন হয়নি। অপারেটর ও হেলপারের বেতনের মধ্যে অনেক বৈষম্য ও ব্যবধান রয়েছে। আমরা এগুলো দূর করার কথা বলছি।
শিল্প পুলিশ-১ এর পরিদর্শক মাহববুর রহমান জানান, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যে কোনো ঝামেলা এড়াতে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গামের্ন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারন সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, সব গ্রেডেই বেতন বেড়েছে। কিন্তু ৩ ও ৪নং গ্রেডের শ্রমিকরা না বুঝেই আন্দোলন কছে। তাদের বেতন ৬৮০৫ থেকে বেড়ে ৯৫৯০টাকা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা মনে করছে অন্যদের বেড়েছে কিন্তু তাদের বাড়েনি। কারন বেতন-ভাতাসহ এর বেশী টাকা তারা আগে থেকেই তুলছে।
মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় কমিটি
তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেড় মাস আগে ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার শ্রম ভবনে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকের পর নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, মালিক পক্ষের ৫ জন, শ্রমিক পক্ষের ৫ জন এবং সরকারের বাণিজ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে নিয়ে ১২ সদস্যের একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। এই কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে মজুরির অসঙ্গতিগুলো খতিয়ে দেখবে এবং সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবে। রাস্তায় নেমে ‘বিশৃঙ্খলা না করে’ শ্রমিকদের কাজে ফেরারও আহ্বান জানিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের এই উদ্যোক্তা। এ বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবনিযুক্ত শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, পোশাক শ্রমিকদের বেতন কাঠামোতে কোন বৈষম্য বা অসঙ্গতি থেকে থাকলে চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যেই তা সংশোধন করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে সংশোধিত গ্রেডিংয়েই বেতন পাবেন শ্রমিকরা।
টানা তিন দিনের শ্রমিক বিক্ষোভ নিরসনে গতকাল মঙ্গলবার শ্রম ভবনে আয়োজিত পোশাক শ্রমিক-মালিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।