পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও বাসে অগ্নিসংযোগ করে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। পূর্বঘোষণা দিয়ে গতকাল সকাল ৯টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাঙচুর ও বাসে আগুন ধরিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও পুলিশ ছিল নিষ্ক্রিয়। বিদেশগামী যাত্রী, অসুস্থ ও বৃদ্ধ অসহায় মানুষ এ সময় শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়লেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা পাননি তারা। আন্দোলনের দীর্ঘসময় পরে পুলিশের সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। সকাল থেকে আব্দুল্লাপুর-এয়ারপোর্ট সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়ে রাজধানীতে। তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বিমানন্দরের সামনে গোল চত্বর, উত্তরার জসিম উদ্দিন, রাজলক্ষী, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং, আবদুল্লাহপুরসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ অবরোধ করে রাখে পোশাক শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে তারা ওই মহাসড়কে বিভিন্ন পরিত্যাক্ত বস্তু ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। ফলে ওই সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভের কারনে শত শত বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে দেখা গেছে সাধারন মানুষকে। এ সময় শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। অবরোধের সময় গাজীপুরগামী কিছু বাস কুড়িল বিশ্বরোড ও রেডিসন মোড় থেকে ঘুরে যেতে দেখা যায়। শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে উত্তরা জোনের ডিসি নাবিদ কামাল শৈবালের নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ সদস্য জলকামান ও সাঁজোয়া যান নিয়ে ধাওয়া দিয়ে অবরোধ সরিয়ে দেয়। তবে কিছুক্ষণ পর শ্রমিকরা আবার লাঠিসোটা নিয়ে একযোগে এসে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
সূত্র আরো জানায়, সকাল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে শুরু করেন শ্রমিকরা। দুপুর ১২টা থেকে আজমপুর, জসমিউদ্দিন ক্রসিং এবং বিমানন্দর সড়কে যান চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে বিমানবন্দরের সামনের চত্বরসংলগ্ন রাস্তায় এনা পরিবহনের একটি বাস ভাঙচুরের পর আগুন দেয় তারা। দুপুর আড়াইটার পর পুলিশের বড়সড় বহর পায়ে হেটে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া শুরু করে। এর কিছুক্ষন পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে পরিস্থিতি।
আন্দোলনকারী গামেন্টস শ্রমিক জসিমসহ কয়েকজন জানান, সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে রোববার চৈতি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করলে মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তাদের প্রতিশ্রুতির পর আন্দোলন স্থগিত করে শ্রমিকরা। কিন্তু সোমবার কাজে এসে তাদের দাবি বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ না দেখে আবারও আন্দোলনে নামে শ্রমিকরা। রোববার উত্তরার চৈতি গার্মেন্টস থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এর আশে পাশের বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস থেকে শ্রমিকরা এসে আন্দোলনে যোগ দেয়। অবরোধ চলাকালে এয়ারপোর্ট মোড়ে এনা পরিবহনের একটি বাসের হেলপার একজন গার্মেন্টস শ্রমিককে মারধর করলে ওই বাসটি পুড়িয়ে দেয় আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
পোশাক শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ডিসি নাবিদ কামাল বলেন, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে থাকেন। যদি জ্বালাও-পোড়াও করেন তাহলে আমরা কোনো সহযোগিতা করব না। আমরা চাই আপনারা সরকারি কাঠামো অনুযায়ী বেতন পান। এ ঘটনায় সকালের শুরুতে দক্ষিণখানের সংঘর্ষে ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ তৌহিদুর রহমান জানান, সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছে। সোমবার মন্ত্রিসভার শপথ, তাই এ শপথ গ্রহণ শেষ হলে নতুন মন্ত্রীর সঙ্গে আমরা ও গার্মেন্টস মালিকরা বসে এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
এরপরপরই নিপা গ্রুপের চেয়ারম্যান খশরু চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, আমি সরকারি কাঠামো অনুযায়ী বেতন দেব। আপনারা ফিরে যান। যদি সরকারি কাঠামো অনুযায়ী বেতন দিয়ে গার্মেন্ট নাও চালাতে পারি, যদি গার্মেন্ট বন্ধ করে দিতে হয়, এরপর আমি ১ মাসের অগ্রিম বেতন দিয়ে যাব। তাদের আশ্বাসের পর তারা শান্তিপূর্ণভাবে সরে যায়।
বিক্ষোভের বিষয়ে টেক্স গ্রুপ লিমিটেডের অপারেটর রুবেল বলেন, মজুরি স্কেল অনুযায়ী ১৬ হাজার টাকা পাওয়ার কথা মালিক ৮ হাজার দিচ্ছে। অন্যান্য গার্মেন্ট মালিকরা এখানে এসে কথা বললেও আমাদের মালিক কোনো আশ্বাস দেননি। এখন আমরা কী করবো?
ডিসেন্সি গ্রুপ লিমিটেডের শ্রমিক রবিন জানান, নতুন স্কেল অনুযায়ী বেসিক (মূল বেতন) ১০ হাজারসহ সব মিলে ১৬ হাজার হওয়ার কথা। মালিকপক্ষ নতুন মজুরি অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে না, আশ্বাসও দেয় না কিছু বলে না। আজ আমরা আশ্বাসে ঘরে ফিরছি দেখি মালিকরা মজুরি বাড়ায় কি-না।
বিক্ষোভকারী খলিল আহমেদ নামে এক শ্রমিক জানান, গত ৪-৫ দিন ধরে বেতন-বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত, বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে শ্রমিকদের মারধরের প্রতিবাদসহ বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধ, ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিকরা এ আন্দোলন করছেন বলে জানান তিনি। এর আগে রোববার সকালে বিভিন্ন গার্মেন্টসের শত শত শ্রমিক উত্তরার আজমপুর থেকে জসিমউদ্দিন ক্রসিং পর্যন্ত অবস্থান নিলে অচল হয়ে পড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। পাঁচ ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে তারা রাস্তা থেকে উঠে যাওয়ার আগে সোমবার ফের বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কালিয়াকৈরে মহাসড়ক অবরোধ : ফাঁকা গুলি
কালিযাকৈর (গাজীপুর)উপজেলা সংবাদদাতা : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার নুর ওয়ার নামক একটি পোশাক কারখানায় গতকাল সোমবার অপরেটররা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জানা যায়, শ্রম- মুজুরি আইন অনুযায়ী শ্রমিক লেভেলে বেতন বৃদ্ধি করা হলেও পোশাক কারখানার অপারেটরদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি। বেশি দক্ষতা ও পরিশ্রম করেও অপারেটরদের দেওয়া হচ্ছে সমান মুজুরি। এতে ক্ষুদ্ধ হয় অপারেটররা। সকালে উপজেলার চান্দরাস্থ নুর ওয়ার পোশাক কারখানার অপারেটররা কাজে যোগ না দিয়ে প্রথমে কারখানার ভিতর বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ অপারেটরা উপজেলার চান্দরাস্থ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। অবরোধের কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা
পুলিশের উপর পাল্টা ইট,পাথর নিক্ষেপ করে। পরে তারা মহাসড়ক ছেড়ে কারখানার বাহিরে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর পৌর শ্রমিকলীগের সভাপতি হারিজ উজ-জামান খান হারিজ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের আলোচনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।