Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিলুপ্তির পথে ডাহুক

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ডাহুক নামটি অনেক সুন্দর হওয়ায় পল্লী কবি জসিম উদ্দিনসহ অসংখ্য লেখকের গান, গল্প, কবিতা ও নাটকে বহুবার উঠে এসেছে এই পাখির নামটি। নিসর্গের কবি জীবনানন্দ লিখেছেন, মালঞ্চে পুষ্পিতা অবনতামুখী/ নিদাঘের রৌদ্রতাপে একা সে ডাহুকী/ বিজন তরুণ শাখে ডাকে ধীরে ধীরে/ বনচ্ছায়া অন্তরালে তরল তিমিরে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এই পাখির নামে নিরবধি বয়ে চলেছে ডাহুক নদী।

চট্টগ্রামের বৈচিত্রপূর্ণ জনপদ মীরসরাই উপজেলার গ্রামের তেপান্তর পুকুর, খাল-বিল, হাওর-বাওড় জলাভূমি ও পতিত পুকুরের ঝোপে-ঝাড়ে থাকা এই পাখিটি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। রাতে কোয়াক কোয়াক ডাক শুনে সহজেই চিনতে পারা যায় তাকে। ডাহুকের লেজ ছোট। লেজের নিচের অংশ লালচে আভা সমৃদ্ধ। পিঠের রং ধূসর থেকে খয়েরী-কালো, মাথা ও বুক সাদা। পা লম্বা। ঠোঁট হলুদ, ঠোঁটের উপরে লাল রঙের একটি ছোট দাগ আছে। দেহ কালচে। মুখমন্ডল, গলা, বুক ও পেট সম্পূর্ণ সাদা।

মাটিতে ঝোপের তলায় এরা বাসা বাঁধে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজননকাল। ৬/৭টি ডিম পাড়ে। ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপী মেশানো সাদা। ডাহুক-ডাহুকী উভয়েই ডিমে তা দেয়। ডাহুক আসলে চিরবিরহী একটি পাখি। সঙ্গীহীন হলে এরা পাগল হয়ে যায়। বাচ্চাদের রং সব সময় হয় কালো। জলজ পোকা-মাকড়, উদ্ভিদের কচি ডগা, শ্যাওলা এদের প্রিয় খাবার। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। কোনো কোনো জায়গায় এদেরকে ডাইক, পান পায়রা, ধলাবুক ডাহুক নামেও ডাকা হয়। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮৩ লাখ ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এদের আবাস। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে ডাহুক পাখিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের অসতর্কতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পাখিটি। ডাহুক খুব সতর্ক পাখি। আত্মগোপনে পারদর্শী। বাসা করে পানির কাছে ঝোপঝাড়ের ভেতরে অথবা ছোট গাছের ঝোপালো ডালে। নিরাপত্তা ঠিকঠাক থাকলে মাটিতেও বাসা করে। প্রকৃতির নানা প্রতিকূলতায়ও দারুণ লড়াকু পাখি এরা।

উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের শান্তা মিয়া কাজী বাড়ির বাসিন্দা শাহ এমরান চৌধুরী বলেন, আমাদের শেখেরতালুক এলাকায় ডাহুক দেখা যায়। বাড়ির সামনের ডোবার পাশে ঝোপে কতগুলো ডাহুক বাস করে। কখনো দল বেঁধে ছানাসহ এরা বাইরে আসে। একটু শব্দ হতেই মা ডাহুকী তার বাচ্চাদের নিয়ে উধাও। চলে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে। তিনি বলেন, এখনে ডাহুক ধরতে আসে কিছু পাখি শিকারী। কিন্তু আমরা এইসব শিকারীদের সন্ধান পেলে তাড়া করি। এরপরও শিকারীরা থেমে নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাহুক

৬ জানুয়ারি, ২০১৯
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ