Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এরশাদ হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা

‘জাপা সরকারে না থাকায়’ সিনিয়র নেতাদের স্বপ্নভঙ্গ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও জাতীয় পার্টি যে একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হচ্ছে তা নিশ্চিত। সংসদে বিরোধী দলের নেতা হচ্ছেন এইচ এম এরশাদ। আর দলের উপনেতা হবেন ভবিষ্যৎ দলের চেয়ারম্যান বর্তমানে কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ‘জাতীয় পার্টি সরকারে থাকবে না’ এ সংক্রান্ত এরশাদের একটি চিঠি যেন জাতীয় পার্টির কয়েকজন সিনিয়র নেতা নির্বাচিত এমপির মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়েছে। তারা সরকারে থেকে মন্ত্রী হতে চান। দেনদরবার করে অনেকদূর এগিয়েছেন অথচ হঠাৎ দলের চেয়ারম্যানের এই সিদ্ধান্ত তাদের ‘বাড়া ভাতে ছাই’ দেয়ার নামান্তর! এখন এই নেতারা রওশন এরশাদকে স্বামীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে বিরোধী দলের পাশাপাশি দলকে সরকারে রাখা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। এরশাদ সংসদে বিরোধী দলের নেতা হচ্ছেন এই খবরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা দারুণ খুশি। তারা এরশাদকে চাচ্ছেন সংসদের নেতৃত্বে। এই খুশিতে দীর্ঘদিন থেকে বঞ্ছিত এবং নিবেদিতপ্রাণ বিক্ষুব্ধ নেতারা বৃহস্পতিবার জিএম কাদেরের উত্তরার বাসায় দেখা করতে যান। সেখানে দেখা হয় কুমিল্লা-২ আসনের এমপি আমির হোসেনের সঙ্গে। বিক্ষুব্ধ নেতারা আমির হোসেনকে কিলঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। ‘দালাল দালাল’ বলে তাকে গালিগালাজ করেন। সিনিয়র নেতারা বিক্ষুব্ধ নেতাদের হাত থেকে আমির হোসেনকে রক্ষা করেন। বিক্ষুব্ধ নেতারা জানান, আমির হোসেন মুদি দোকানী থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে এমপি হয়েছেন। কুমিল্লা-২ আসনের এমপি এবারও দলীয় নমিনেশন পান। অথচ তিনি নৌকার প্রার্থীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। কর্মীদের এ ব্যাপারে কিছুই জানাননি। এই ক্ষোভে ওই আসনের দলীয় কর্মীরা পিটুনি দেন আমির হোসেনকে। একজন নেতা সাংবাদিকদের জানান, তারা দশম সংসদের লক্ষিপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ নোমানকে খুঁজছেন। নোমান কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে স্বতন্ত্র একজন প্রার্থীকে সমর্থন করে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের পিটুনির ভয়ে মোহাম্মদ নোমান এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গতকাল দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আমি এই মর্মে জানাচ্ছি যে, একাদশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। পদাধিকার বলে জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারী দলের সভাপতি হিসেবে আমি প্রধান বিরোধী দলের নেতা এবং পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের উপ-নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জাতীয় পার্টির কোনো সংসদ সদস্য মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভূক্ত হবেন না। সংসদের মাননীয় স্পীকারকে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এরশাদের এই চিঠি প্রকাশের পর দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দারুণ খুশি। তারা চান এরশাদ সম্মানিত হোক। কিন্তু ‘জাপা সরকারে থাকবে না’ সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েন কয়েকজন সিনিয়র নেতা। যারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে এমপি এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন; এবারও এমপি হয়েছেন তারা এবার মন্ত্রীত্বের জন্য জোর তদবির করছেন। এই নেতারা খবর পেয়েই রওশন এরশাদের বাসায় যান এরশাদকে ঠেকাতে।
বিগত দশম জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকলেও দলের একজনকে মন্ত্রী এবং দুজনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। রওশন বিরোধী দলের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টি ২০টি এবং উন্মুক্ত আসন থেকে পায় একটি আসন। মোট আসন ২১। এবারও সরকারের অংশীদার হবে কি না- সেই প্রশ্নে সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দুদফায় বৈঠকে। দলের প্রেসিডিয়াম ও নব নির্বাচিত এমপিদের যৌথ সভা এবং সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের সভায় এ ব্যাপার সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দল। দলের কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের দুদিন আগেও বলেছিলেন, ‘সম্ভাবনার কথা বলা যায় না। সব রকম সম্ভাবনাই আছে। জাতীয় পার্টি সংসদে যাওয়ার পর কারা মন্ত্রিত্ব পাবেন, এ নিয়ে এখনও কিছু ঠিক হয়নি। আমরা এটা নিয়ে পরে মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করব।’ শপথ নেয়ার পর সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠক শেষে জি এম কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সামনে পার্টির একটি মিটিং আছে, সেখানে বসে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। একই বক্তব্য দেন বেগম রওশন এরশাদও। মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাও প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দেন। কিন্তু হঠাৎ শুক্রবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন এরশাদ। এরশাদ ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের কারণে বহু আগেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ আখ্যা পেয়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে দলের পরীক্ষিত ও নিবেদিত নেতাকর্মীরা খুশি। কিন্তু মহাসচিবসহ সিনিয়র ৬ থেকে ৭ জন নেতা হতাশ। তারা মন্ত্রীত্বের জন্য চেষ্টা তদরিব করছেন। জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, সুবিধাবাদী নেতারা এরশাদের সিদ্ধান্তে হোঁচট খেয়েছেন। তারা চাচ্ছেন রওশন এরশাদকে ব্যবহার করে সরকার ও বিরোধী দলে দলকে রেখে মন্ত্রী হতে। সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু রওশন এরশাদও স্বামী এরশাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন বলে মনে হয় না। তবে এরশাদ তার এই সিদ্ধান্তে অটল থাকেন কিনা সেটাই দেখার জন্য অপেক্ষায় দলের নেতাকর্মীরা।



 

Show all comments
  • M. R. Hillol ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    রাজা ও রাজদ্রোহী নাটিকার কথা মনে পরছে খুব করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Habibur Rahman Majumder ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    দেখা যাক....
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Ali Refai ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    কেউ যদি এই বিবৃতিকে ঐ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের শেষ বিবৃতি হিসেবে গ্রহন করেন তবে সেই দায় একান্তই তার নিজের!
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    নূর হোসেনের আত্মা নীরবে কাঁদে
    Total Reply(0) Reply
  • মন যা বলে ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    এদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি একটা ভাইরাস।।।।
    Total Reply(0) Reply
  • ছিদ্দিক ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে- তুমি এরশাদ সাধু হলে আজ, আমরা আজ চোর বটে!
    Total Reply(0) Reply
  • Zubair Ehsan Hoque ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে কম স্থায়ীত্বসম্পন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। এটির ক্ষেত্রেও তেমনি হবে। সে যা হোক। আপনার দলের কয়েকজনের মন্ত্রীত্ব ঠেকানোর ক্ষমতা আপনার আছে বলে মনে হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • তানভীর আহমাদ ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    কিভাবে বিরোধী দল হয়। তোষামোদকারীরা তোষামোদই করে, এর উর্দ্ধে উঠতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Nasim Wahid ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
    কি তামাশা
    Total Reply(0) Reply
  • FaruQue Khan ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
    চিন্তার বিষয় - বিরোধী দলে গেলে লাভ বেশী নাকি সরকারি দলে? হুমমম এবার সরকারি দলে থেকে দেখি কি হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
    সরকারী জোটের এরসাদকে বিরোধী দলীয় নেতা ঘোষনার আগে গনতন্ত্রের নতুন সংজ্ঞা নির্ধারন করা উচিত!
    Total Reply(0) Reply
  • তাসলিমা বেগম ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
    আগে ২৪ ঘন্টা পার হোক আর প্রধানমন্ত্রীর গ্রীন সিগন্যাল আসুক, তারপর বোঝা যাবে..
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ হোসাইন ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    এটাই শেষ সিদ্ধান্ত নয়। আপনাদেরকে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত শোনা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে অনুরোধ করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Alamgir ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    your party is the part and parcel of the awami party. your party cannot be the opposition party. let the bnp be the opposition party.
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Nasir Uddin ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    অভিনন্দন! তবে সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন আর এই সুযোগে দলটিকে গুছিয়ে ফেলবেন যেন জাতির যে কোন ক্রান্তিলগ্নে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন।সারা জীবন যাতে গৃহপালিত দল হয়ে না থাকতে হয়। আর মঞ্জুর হত্যা মামলাটি থেকে মৃত্যুর আগে যেন খালাস পেয়ে যেতে পারেন এটাকে দাবার গুটি হিসেবে যাতে আর কোন দল আপনাকে যেমন খুশি তেমন ব্যবহার না করতে পারে।অবশ্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী চাইলে এর থেকে আপনাকে রেহাই দিতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    শেষমেশ মসিউর রহমান রাঙা, চুন্নু আর আনিসুল হক মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করবেনই।।
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Parvez ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি, নাটক জমবে ভালো। সংসদ অধিবেশন গতবারের চেয়ে অধিক প্রাণবন্ত হবে লিখে দিলাম।
    Total Reply(0) Reply
  • মহম্মদ সালাউদ্দিন ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    আমি রওশনকে বিরোধী দলীয় নেত্রী আশা করেছিলাম। চাচা তো বিশেষ দূত হিসাবেই ভাল ছিলেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Deepak Eojbalia ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    Face indicates that outer is one shape and inner another shape. We want trial of General Manju murder case.
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmed ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    Good decision, now work as an opposition leader criticising the government of their wrong doings and show the nation that you can make a difference. There are many freedom fighters in BNP - bring them back to your folder. Good luck.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাপা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ