বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
একদিকে কুরআন আখেরাতের অপরিহার্যতা ও অবশ্যসম্ভাবিতার ওপর আলোকপাত করেছে এবং তার ওপর ঈমান আনার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। অপর দিকে, সেসব অজ্ঞ ও মূর্খোচিত সন্দেহ ও সংশয়কে অপসারণ করেছে, যা স্বল্প মেধার সাধারণ মানুষের মাঝে আখেরাত সম্পর্কে সৃষ্টি হয়ে থাকে, অথবা ঈমান ও সঠিক পথ থেকে মানুষকে বিরত রাখার জন্য শয়তান তাদের মাঝে বিস্তার করে এবং এগুলোর প্রচারণা চালায়। কুরআন মাজিদ জায়গায় জায়গায় অস্বীকারকারীদের এসব সন্দেহ-সংশয় উদ্ধৃতও করেছে এবং অতঃপর নিজের বিশেষ আশ্বস্তকারী ভঙ্গিতে সেগুলোর এমনসব উত্তর প্রদান করেছে এবং আখেরাতকে বুঝানোর লক্ষ্যে এমনসব প্রমাণ ও উদাহরণ পেশ করেছে, যাতে করে মন সম্পূর্ণভাবে আশ্বস্ত হয়ে যায়। কোনো বুদ্ধিমানের জন্যই তখন আর অস্বীকার কিংবা দুর্বোধ্যতার অবকাশ থাকে না।
আখেরাত সম্পর্কে সর্বাধিক বিখ্যাত ও আদি সংশয় হলো সেই দুর্বোধ্যতা (অর্থাৎ, বুঝে উঠতে না পারা) এবং কোনো মৃতকে এ জগতে জীবিত হতে না দেখার সংশয়। এ বিষয়টিকে কুরআন অবতরণকালে আরবের আখেরাত অস্বীকারকারীরাও বারবার পুনরাবৃত্তি করত। তা ছাড়া তাদের পূর্বের ও পরের অস্বীকারকারীরাও বেশির ভাগ ওই বিষয়টিকেই তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছে। কুরআন তার অবতরণকালীন অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে বলেছে, ‘বরং তারা হুবুহু তেমনি এবং সে কথাই বলেছে, যা তাদের পূর্ববর্তী অস্বীকারকারীরা বলেছিল। তারা বলত, যখন আমরা মরে যাব এবং (মাটিতে সমাহিত হওয়ার পর আমরা) মাটি ও হাড়ের স্ত‚পে পরিণত হয়ে যাবো, তার পরেও কি আমাদেরকে জীবিত করা হবে? (অর্থাৎ, বিষয়টি কোনোমতেই বুঝে আসার মতো নয়, আর নাই বা পৃথিবীতে কখনো এমনটি ঘটেছে)।’ (সূরা মু’মিনুন : আয়াত ৮১-৮২)।
অন্য আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আর মুনকির বা অস্বীকারকারীরা বলল, আমরা যখন মরে মাটি হয়ে যাবো এবং আমাদের বাপ-দাদারা (যারা পূর্বে মরে মাটি হয়ে গেছে) আমাদের সবাইকে কি তাহলে পুনরুজ্জীবিত করা হবে?’ (সূরা নামল : আয়াত ৬৭)। অন্যত্র তাদেরই উদ্ধৃত করা হয়েছে, ‘আমরা যখন মরে যাব এবং মাটিতে পরিণত হয়ে যাবো (তারপর কি আমাদেরকে পুনরায় জীবন দেয়া হবে?) এ প্রত্যাবর্তন (অর্থাৎ, পুনর্জীবন লাভ করা) একান্তই অসম্ভব।’ (সূরা ক্বাফ : আয়াত ৩)। বস্তুত যারা আখেরাতকে অস্বীকার করে তাদের কাছে এই অস্বীকৃতির কোনো যুক্তি নেই। অর্থাৎ, কোনো যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে তারা এ বিষয়টি প্রমাণ করতে পারে না যে, আখেরাতের যে সংবাদ আল্লাহর রাসূলগণ এবং তার কিতাব দিয়েছে তা অসম্ভব। তারা যা বলে এবং বলতে পারে তাহলো কেবল এটুকুই যে, ‘মরা এবং মাটি হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় জীবিত করা একান্ত দুষ্কর এবং আমাদের বোধগম্য নয়। উপরন্তু আমরা কখনও এমনটি হতে দেখিনি।’ কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহকে এবং তার গুণাবলি বিশেষ করে তার ব্যাপক ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুটা জানতে পেরেছে, তার অস্তিজগৎ সম্পর্কে সামান্য চিন্তা-ভাবনা করেছে, তার কাছে এ ধারণা একান্তই মূর্খোচিত ও অজ্ঞতা-প্রসূত।
কুরআন মাজিদ নিজেও এসব মুনকিরকে বুঝানোর জন্য এই সহজ পন্থা অবলম্বন করেছে। তাদেরকে বাতলে দিয়েছে, তোমরা মরার পর জীবিত করার বিষয়টিকে খুব বড় এবং অতি কঠিন বলে মনে করো এবং শুধুমাত্র সে কারণেই ব্যাপারটিকে অস্বীকার করো। নিঃসন্দেহে এটি অতি বিরাট বিষয়। কিন্তু যে আলীম, হাকিম, কাদির ও খাবির (মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়, ক্ষমতাধর ও সর্বজ্ঞ) আল্লাহ সমগ্র এ জগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি একে চালাচ্ছেন, তার মহিমা ও সীমাহীন ক্ষমতার কাছে এটি না কঠিন কিছু, না বিরাট বিষয়। অতঃপর এই পার্থিব জীবনে মৃত্যুপরবর্তী জীবনের যেসব বিশেষ দৃষ্টান্ত ও প্রমাণ রয়েছে, কুরআন মাজিদ সেগুলোর প্রতিও সেসব মুনকিরকে পথনির্দেশনা দান করে। বলে, তোমরা চিন্তা কর, এ জগতে তোমরা যে জন্মগ্রহণ করেছ, সে জন্ম সম্পর্কেই চিন্তা করে দেখো। তা ছাড়া মাঠের শুকনো প্রাণহীন ভ‚মির ওপর রহমতের পানি বর্ষণ করে আল্লাহ তায়ালা যেভাবে তাতে প্রাণ সঞ্চার করেন এবং তার ফলে ফাঁকা মাঠ যেভাবে শ্যামলিমায় পরিণত হয়ে যায়, সে সম্পর্কে চিন্তা করলেই মৃত্যুর পর জীবন লাভের বিষয়টি অীত সহজে উপলব্ধি করতে পারবে। তারপর আর এ বিষয়ে তোমাদের সংশয় ও বিস্ময়ের কিছুই থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।