মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
তিন বছর আগে ছেলে গৌতমের হাতে রেমন্ড গ্রæপের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়ার সময় বিজয়পুত সিংহানিয়া মনে করেছিলেন, তিনি বিলিয়ন ডলারের টেক্সটাইল সা¤্রাজ্য তার পরিবারের মধ্যেই রাখছেন। কিন্তু এখন তিনি অভিযোগ করছেন, তার ছেলে প্রতারণা করে একচেটিয়াভাবে তাকে কোম্পানী এবং তার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে একরকম ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। ছেলের সাথে তার সম্পর্ক বিস্ময়করভাবে শেষ হয়ে গেছে।
ভারতের কর্পোরেট জগতে বংশ পরম্পরায় চালিত ব্যাবসা জগতে যুক্ত হওয়া সাম্প্রতিক কলঙ্ক এটি। বিজয়পতের দাবি, ‘মানসিক বø্যাকমেইল’ এর শিকার হয়ে তিনি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং এখন এর জন্য অনুশোচনা করছেন।
৮০ বছর বয়সী বিজয়পুত ছোট টেক্সটাইল ব্যবসা থেকে ভারতে সবার কাছে পরিচিত রেইমন্ড গ্রæপে রূপান্তরিত করেছেন যা, এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় উচ্চমানের উল স্যুট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় উদ্যোক্তা পরিবার। সিমেন্ট, দুগ্ধ ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেও সিংহানিয়া পরিবারের সাফল্য রয়েছে।
সাম্প্রতিক সুইস ক্রেডিট রিপোর্ট অনুসারে, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে পরিবারের মালিকানাধীন সংস্থাগুলির সংখ্যা হিসাবে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ভারতে আরো কিছু আন্তর্জাতিক মানের কর্পোরেট আইন প্রয়োজন। যা এ ধরনের সংঘাত নিরসন করবে।
অ্যাম্বানি পরিবারের ক্ষেত্রেও এমন ঘটেছিল। এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি, তার ভাই অনিলের সাথে কয়েক বছর ধরে রিলায়েন্স গ্রæপ নিয়ে লড়াই করেছিলেন। কারণ, তার বাবা ধীরুভাই মারা যাওয়ার আগে কোনো উইল করে যাননি।
এগুলো থেকেও শত্রæতা অনেক বেশী তীব্র ছিল প্রোপার্টি ও মদ ব্যবসায়ী ব্যারন পন্টি চাদা ও তার ভাই হারদীপের মধ্যে। কোম্পানি নিয়ে লড়াইয়ের জেরে ২০১২ সালে এক শ্যুটআউটে তারা একে অপরকে হত্যা করেছিলেন। এবং পারিবারিক ফার্মাসিউটিকাল সাম্রাজ্যের জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ছিল বিলিয়নার শিবিন্দার ও মালভিন্দার সিংয়ের উপরে।
বিজয়পুত সিংহানিয়ার সমস্যা শুরু হয় ২০১৫ সালে তার নিয়ন্ত্রিত ৩৭ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করার পর। বিজয়পুত বলেন, পারিবারিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২০০৭ সালে করা চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাইয়ের উপকূলীয় মালাবর হিল এলাকায় সিংহানিয়া পরিবারের ৩৬ তলা জে কে হাউসে একটি অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়ার কথা ছিল। সমঝোতা অনুযায়ী ফ্ল্যাটের মূল্য বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম ছিল। কিন্তু গৌতম রেমন্ড বোর্ডকে মূল্যবান সম্পত্তি বিক্রি না করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। বিরোধ আরো বাড়লে, কোম্পানিকে লেখা চিঠিগুলিতে অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করার অভিযোগে বোর্ড বিজয়পুতকে ‘চেয়ারম্যান এমিরিটাস’ পদ থেকে বরখাস্ত করে। তিনি দাবি করেন, তার অফিস এবং তার পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। তাকে দেয়া দেশের শীর্ষ নাগরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদকও চুরি করা হয়।
দুই বছর ছেলের সাথে কথা বলেননি জানিয়ে বিজয়পুত বলেন, তিনি ২০০৭ সালের আইনে মামলা করতে যাচ্ছেন, যেখানে বলা হয়েছে, পিতামাতার মৌলিক চাহিদা পূরণ না করলে তারা তাদের সন্তানদেরকে দেয়া সম্পত্তি ফেরত নিতে পারবেন।
সিংহানিয়া একজন সফল বিমানচালক ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে বেলুনে সর্বোচ্চ ফ্লাইটের জন্য বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন। তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি প্রত্যেক বাবা-মাকে বলবো আপনার জীবনকালে আপনাদের সমস্ত সঞ্চয় সন্তানদেরকে দেয়ার মতো ভুল করবেন না।’
কিন্তু গৌতম বলেন, তিনি কেবল তার কাজ করছেন। তিনি ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, ‘ছেলে হিসাবে আমার দায়িত্ব রেমন্ডের চেয়ারম্যানের থেকে আলাদা। তিনি ছিলেন একজন বোর্ড সদস্য যিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন কোম্পানির সম্পদ নিতে।’
তবে, এই বিরোধে রেমন্ড গ্রæপের উপর তেমন কোন প্রভাব পরেনি। ২০১৮ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রতিবেদনে এর মুনাফা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যায়। ইথিওপিয়ায় সম্প্রতি একটি বড় কারখানা খোলা হয়েছে,
এবং তাদের পণ্য এখন ৫৫ টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং কনসালট্যান্টের অংশীদার প্রণব সায়াতার বলেন, ‘এখনকার ব্যবসায়িক পরিবেশ অনেক বেশি জটিল। সংস্কৃতিগতভাবেও, অল্পবয়সী তরুণরা এখন আরো অধৈর্য্য এবং তারা ব্যবসায়িক বিষয়গুলিতে মতামত দিতে চায়। বিশ্বব্যাপী সর্বোত্তম কিছু নিয়ম এখনও সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি ভারতে। এবং আম্বানি ও চাদাদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, উত্তরাধিকারসূত্রতা এবং পারিবারিক রাজনীতি প্রায়শই এই তিক্ত বিতর্কের মূল কারণ হয়ে ওঠে।
গৌতম সিংহানিয়া দাবি, ব্যবস্থাপনার একটি নতুন ধারা রেমন্ডে সব পার্থক্য তৈরি করেছে। বাবার কাছ থেকে শেয়ার নিয়ন্ত্রন নেয়ার পর থেকে আমার জন্য সব ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়ে যায়। ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর জন্য এখন আমি অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারি যা আগে পারতাম না। সূত্র: টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।