Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘বিরোধী দলে’ আগ্রহ নেই জাপার

অসুস্থ, শপথ নেননি এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

দশম জাতীয় সংসদে একসঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকার পর এবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলে থাকতে চায় না এরশাদের জাতীয় পার্টি। দলটির সিনিয়র নেতা এবং নব নির্বাচিত এমপিরা চান মহাজোটের শরীক হিসেবে সরকারে থাকতে। গতকাল পার্লামেন্টারী পার্টির বৈঠকের পর বেগম রওশন এরশাদ এই তথ্য জানান। বৈঠকে অধিকাংশ এমপি সরকারে থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন। জিএম কাদেরও একই ধরণের বক্তব্য দেন। এর আগের দিন বনানীর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে নব নির্বাচিত এমপি ও প্রেসিডিয়ামের যৌথ সভায় একই বক্তব্য এসেছে কয়েকজন নেতার কাছ থেকে। তবে জিএম কাদের জানান, জাতীয় পার্টির অবস্থান কোথায় হবে মহাজোট নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
জাতীয় পার্টির এমপিরা গতকাল শপথ গ্রহণ করলেও পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ শপথ গ্রহণ করেননি। অসুস্থতা জনিত কারণে তিনি সকালে সংসদ ভবনে আসনে না পারলেও স্পীকারকে জানানো হয় তিনি বিকেলে হুইল চেয়ারে সংসদ ভবনে এসে শপথ নেবেন। কিন্তু বিকেলে তার অসুস্থতা আরো বেড়ে যাওয়ায় তিনি আসতে পারেননি। সংসদ ভবন থেকে বিকেলে জিএম কাদের ফোন করেন এইচ এম এরশাদকে। জানানো হয় তিনি শারিরীক জটিলতার কারণে শপথ নিতে আসতে পারছেন না।
সংদস ভবনে শপথ গ্রহণের পর জাতীয় পার্টির এমপিরা বৈঠকে মিলিত হন। রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অধিকাংশ এমপি সরকারের থাকার পক্ষে মত দেন। বৈঠক শেষে বেগম রওশন এরশাদ বলেন, আমরা আলোচনা করেছি। সবাই চায় মহাজোটের শরীক হিসেবে সরকারে থাকতে। জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনের সময়ও ছিলাম, সরকারেও থাকবো। সেটাই আলোচনা হয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সংসদে আমাদের পার্টির নেতা কে হবেন, সেটা দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সভায় এ সিদ্ধান্ত হবে। পরবর্তীতে ওই সভার তারিখ নির্ধারণ করা হবে। মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমরা মহাজোটে ছিলাম, আছি, থাকবো। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা মহাজোট থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। মহাজোটের সঙ্গেই থাকার বিষয়ে সকলে অভিমত দিয়েছেন। মহাজোট নেত্রী প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দিবেন। আগের দিন বনানীতে দলের যৌথ বৈঠকে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, শেখ হাসিনা আর এরশাদ নেতৃত্বে মহাজোট হয়েছে। মহাজোটের কারণেই আমরা এমপি। আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা আমরা সরকারে না থাকলে এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। বিষয়টি উপলদ্ধি করতে হবে। আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয়না। প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান বলেন, মহাজোট যেহেতু সরকারই সৃষ্টি করেছেন তাই মহাজোটের মাধ্যমে সরকারে থাকাই বাঞ্চনীয়। শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, গত কয়েক বছরে পার্টির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেছি, কিন্তু মহাজোটের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এ পার্টি করবো কিনা এরশাদ সাহেবের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিবো। তবে আমি মনে করি গতবারের মত সরকারের সাথে থাকা উচিত। তা না হলে আমরা টিকে থাকতে পারবো না। এটিইউ তাজ রহমান বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক হতে হবে। হয় সরাসরি সরকারে থাকবো অথবা বিরোধীদলে থাকবো। বিরোধীদলে থেকে মন্ত্রীত্ব নেয়া ঠিক হবেনা। বিরোধীদলে থেকে মন্ত্রীত্ব নিলে জনগণ আমাদের ভিন্নভাবে নিবে। তার এ বক্তব্য সমর্থন করে।
এদিকে এইচ এম এরশাদ জাতীয় পার্টি জি এম কাদেরকে ‘উইল’ করে দিলেও দলের আগামীর কর্মপদ্ধতি নির্ভর করছে মহাজোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই মেনে নেবে জাতীয় পার্টি। সুত্র জানায়, বাস্তবতার কারণে এবারও জাতীয় পার্টিকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসতে হতে পারে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ গতকাল বলেছেন, সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে জাতীয় পার্টি রয়েছে। সে হিসেবে তাদের বিরোধী দলে যাওয়া উচিত। যদিও সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব তাদের। আশা প্রকাশ করি জাতীয় পার্টি বিরোধীদল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এতে তাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ চাচ্ছেন যদি একাদশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের চেয়ারে বসতে হয় তাহলে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে জিএম কাদেরকে বেছে নেয়া হোক। কিন্তু আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের জি এম কাদেরের চেয়ে বেশি পছন্দ বেগম রওশন এরশাদ। তাছাড়া জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতা ও এমপিরা জি এম কাদেরের চেয়ে রওশন এরশাদকে বেশি পছন্দ করেন। তারা নিজেদের মতো করে রওশনকে বিরোধী দলীয় নেতার পদে বসানোর জন্য চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাপা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ