Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দায়মুক্তি দেয়া হল অভিযুক্তদের

প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোয়ালন্দ উপজেলা সংবাদদাতা : রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ১০১টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের মধ্যে ৪৪টি খোয়া গেছে। তদন্ত কমিটি গঠন করে এর প্রমাণ মিলেছে। এ নিয়ে হাসপাতালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সভায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওই কমিটির বিগত সভায় বিষয়টি আলোচ্যসূচি থেকে কৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এর মাধ্যমে দোষী সাব্যস্তের আগে অপরাধের দায়মুক্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রাথমিক হিসাবে ১৯৯০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ হাসপাতালে ১০১টি অক্সিজেন ও নাইটার্স সিলিন্ডার থাকার কথা। তবে ওই সিলিন্ডার কালক্রমে ৫৭টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। বাকি ৪৪টি ভর্তি না খালি অবস্থায় হাসপাতাল থেকে কবে কখন কিভাবে লাপাত্তা হয়েছে তার খবর কেউ জানে না। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ বিষয় উঠে আসে। বিস্তর আলোচনার পর বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম ফারুককে প্রধান করে জরিপ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বিগত বছরের নভেম্বরে সিভিল সার্জনের কাছে জরিপ প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে হাসপাতালের সব ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত অক্সিজেন ও নাইটার্স সিলিন্ডার সংখ্যা দেখানো হয় ৫৭। গত শনিবার দুপুরে ওই কমিটির প্রধান ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়েছি। ওয়ার্ডগুলোতে থাকা অক্সিজেন ও নাইটার্স ভর্তি ও খালি সিলিন্ডারের সংখ্যা নিরূপণ করে সিভিল সার্জনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা কমিটি কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানি না।’
হাসপাতাল সূত্র আরো জানায়, জরিপ কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে গত বছরের ১৪ মে স্বাস্থ্যসেবা কমিটিতে আলোচনা হয়। ওই সভায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রধান করা হয় সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং সদর হাসপাতালের সাবেক আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রহিম বক্সকে। এ কমিটির প্রধান ডা. রহিম বক্স বলেন, ‘আমরা যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন সিভিল সার্জনের কাছে জমা দিয়েছি। মূলত স্টক লেজারে (হিসাব খাতা) সিলিন্ডারগুলো আনা নেওয়ার ব্যাপারটি ঠিকমতো লিপিবদ্ধ করা হয়নি। যে কারণে কারা কখন কিভাবে সিলিন্ডারগুলো সরিয়েছে, তা বোঝা যায়নি। তবে দায়ীদের ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না তা জানি না।’
স্বাস্থ্যসেবা কমিটি সভার রেজুলেশন লিখে থাকেন হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক মোফাজ্জেল হোসেন। তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ওই কমিটির গত বছরের ১৪ মে ও ১৩ সেপ্টেম্বরে হওয়া দু’টি সভার রেজুলেশনের কপি। ১৪ মের রেগুলেশনের ৪ নম্বর আলোচ্যসূচিতে উলে­খ করা হয়, ‘সিভিল সার্জন হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডারের হিসাব সভায় উপস্থাপন করেন এবং গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সভাকে অবহিত করেন। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডারের হিসাবে গরমিল থাকায় সভাপতি এ বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব প্রদানকরত সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে তা সিভিল সার্জনকে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়াসহ সর্বসম্মতিক্রমে ওই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ তবে ১৩ সেপ্টেম্বরে হওয়া একই কমিটির পরবর্তী সভার রেগুলেশনে এ বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়নি। যদিও ওই সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে উপস্থিত থাকা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘খোয়া যাওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা রেগুলেশনে না তোলার জন্য বলা হয়েছে। এ কারণে ওই বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়নি।’ তিনি জানান, আলোচনায় পুরনো সিলিন্ডারের বিষয়টি বাদ দেওয়ার কারণ হচ্ছে, শত চেষ্টা করেও তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। ফলে পুরনো হিসাব ঘাঁটাঘাঁটি না করে বর্তমানে স্টকে থাকা ৫৭টি সিলিন্ডারের নিয়মিত হিসাব রাখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বর্তমানে কোনো সিলিন্ডার খোয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, মূলত দায়ী ব্যক্তিদের বাঁচাতে একটি চক্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির কিছুসংখ্যক সদস্যকে ভুল বুঝিয়েছে। এ কারণে ওই কমিটির সদস্যরা বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন। এতে সরকারি অথে অপচয় ও অন্যায়কে উসকে দেওয়ার মতো নজির তৈরি হয়েছে। জেলা শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের কর্মচারী বলেন, বড় ও ছোট একেকটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের বর্তমান বাজার দর পাঁচ হাজার টাকা, নাইটার্স সিলিন্ডারের মূল্য প্রতিটি ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভর্তি করতে লাগে ২২০ টাকা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দায়মুক্তি দেয়া হল অভিযুক্তদের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ