পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এরশাদের জাপায় এখন চলছে চরম অস্থিরতা। মূলত নেতৃত্ব কর্তৃত্ব নিয়ে এই অস্থিরতা। ২০১৪ সালে এরশাদের নির্দেশ মেনে যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে কিছুই পাননি; এবারও তারা পাচ্ছেন না। তাদের যন্ত্রণার মধ্যেই এখন বিরোধীদলের নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হওয়া নিয়ে চলছে অস্থিরতা। এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে প্রার্থীরা রেখে দশম সংসদে যারা এমপি হন; এবার এমপি হওয়ার পর তারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর হওয়ার জন্য উদগ্রীব। এরই মধ্যে এইচ এম এরশাদ ভাই জিএম কাদেরকে ‘চেয়ারম্যান পদ’ উইল করে দিলে নড়েচড়ে বসেন সবাই। বিএনপি যেখানে ৫টি আসন পেয়েছে সেখানে তাঁবেদারী রাজনীতিতে অভ্যস্ত জাতীয় পার্টি পায় ২২টি আসন। দশম সংসদের মতো এবারও দলটি জাতীয় সংসদে বিরোধীদল হচ্ছে এটা প্রায় নিশ্চিত। তারপরও দলের অভ্যন্তরে অনিশ্চয়তা, নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা। বেশিরভাগ নেতাই জানেন না দল বা তাদের অবস্থান কোথায়? এমনকি দলের নেতৃত্ব ভাইকে উইল করে দেখা এইচ এম এরশাদ নিজেও জানেন না তাঁর বা দলের অবস্থান কি হবে। জাতীয় পার্টি কী শুধু বিরোধীদল হবে? হলে বিরোধীদলের নেতা এরশাদ, স্ত্রী রওশন এরশাদ নাকি ভাই জিএম কাদের হবেন? মহাজোট নেত্রী আনপ্রেডিক্টেবল এরশাদকে বিশ্বাস করেন না। আবার দল কি শুধু বিরোধীদল হিসেবে থাকবে নাকি আগের মতো গাছের ও তলার দু’টো খাওয়ার মতো মন্ত্রিসভা ও বিরোধীদল উভয়চর হবে তাও জানেন না। তবে ভাইকে দলের আগামীর নেতৃত্ব উইল করে দেয়ায় নেতাকর্মীরা ধরে নিয়েছেন জিএম কাদের হচ্ছেন আগামীর নেতা; সংসদে তাকেই বিরোধীদলের নেতা করা হতে পারে। যদিও সবকিছু নির্ভর করছে মহাজোটের প্রধান নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মর্জির উপর। জাপার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের অধিকাংশ নেতাই মনে করেন বিরোধীদলের নেতা হিসেবে আনপ্রেডিক্টেবল এরশাদ ও সুবিধাবাদী রওশন এরশাদের চেয়ে জিএম কাদের অধিক গ্রহণযোগ্য।
নতুন সংসদ সদস্যরা আজ শপথ নেবেন। এর আগে গতকাল চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে দলের প্রেসিডিয়াম ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের আগামীর কান্ডারী কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। সভায় মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা ছিলেন। তবে ছিলেন না পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, সাবেক দুই মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ প্রেসিডিয়ামের অনেক সদস্য। ছিলেন নবনির্বাচিত ১৪ জন এমপিসহ ৩৬ জন উপস্থিত মাত্র। সেখানে অধিকাংশ নেতাই একসঙ্গে সরকারে এবং বিরোধীদলে থাকার পক্ষে মত দেন। তারা গতবারের ফর্মুলা অনুযায়ী বিরোধীদলের পাশাপাশি সরকারের অংশীদারিত্ব চান। সভা শেষে মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, বৃহস্পতিবার এমপিদের শপথ গ্রহণের পর পার্লামেন্টারি পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে জাপা সরকারে থাকবে নাকি বিরোধীদলে থাকবে।
জাতীয় পার্টিতে অস্থিরতা চলার মধ্যে মঙ্গলবার দলের প্যাডে এইচ এম এরশাদ একটি বিবৃতি পাঠান। এরশাদ বিবৃতিতে লেখেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখছি, যে আমার অবর্তমানে বর্তমান কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করি, পার্টির জাতীয় কাউন্সিল আমার মতো তাকেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে পার্টির সার্বিক দায়িত্ব অর্পণ করবে। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি যত দিন দায়িত্ব পালন করব, ততদিন জিএম কাদের আমাকে সহযোগিতা করবেন।’ এরশাদের এই বিবৃতি প্রচারের পর দলের অন্য নেতারা রওশনকে বিরোধীদলের নেতা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। ভোটের আগে ২৮ ডিসেম্বর এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় গিয়ে কয়েকজন এইচ এম এরশাদকে মহাজোটের দেয়া ২৫ আসনের বাইরে আরো ১৫টি আসন দেয়ার প্রস্তাব দেন। এরশাদকে ওই নতুন ১৫ আসন বেছে নেয়ার প্রস্তাব দিয়ে জিএম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব সম্বলিত চিঠিতে এরশাদকে সই করতে চাপ দেন। এরশাদ চিঠিতে সই দিতে অস্বীকার করলেও ১৫ এমপি বেছে নেয়ার প্রস্তাবে সম্মতি দেন। উম্মুক্ত আসনের লাঙ্গল অর্ধশতাধিক প্রার্থী ওই সময় এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে বাধার মুখে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়।
জাপার নেতারা জানান, কী কারণে ভাইকে উইল করে এরশাদের এই বিবৃতি দেয়ার প্রয়োজন পড়ল তা স্পষ্ট নয়; এরশাদ নিজেও তা স্পষ্ট করেননি। সিদ্ধান্ত বারবার পরিবর্তনের জন্য সমালোচিত এরশাদ এর আগে ২০১৬ সালে জিএম কাদেরকে দলে কো-চেয়ারম্যানের পদে বসিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার অবর্তমানে দলের হাল ধরবেন জিএম কাদের’। ওই সময় দলের একাংশ ক্ষোভে স্ত্রী রওশন এরশাদকে দলে ভাইয়ের ওপরের স্থানে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানের পদে বসানো হয়। তারও আগে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করেন। রওশন সমর্থক হিসেবে পরিচিত বাবলুকে কটাক্ষ করে এক মন্তব্যের জন্য একবার জিএম কাদেরকে সতর্ক করে নোটিস পাঠিয়েছিলেন এরশাদ। জিএম কাদের ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী সভার সদস্য ছিলেন। তবে ২০১৪ সালে এরশাদ দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর তিনি ভাইয়ের পক্ষেই ছিলেন। অন্যদিকে ভোটে অংশ নেয়ার পথে এগিয়ে যান স্ত্রী রওশন। আর নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে এরশাদ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন এবং এরশাদকে করা হয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। পরবর্তীতে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদে ফিরিয়ে আনা হয়। অতপর এরশাদ ও জিএম কাদেরের ভাগ্নিকে বিয়ে করেন জিয়াউদ্দিন বাবলু। একাদশ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের দিন ১০ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য সিংগাপুর যান এরশাদ। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে দলে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠায় আকস্মিকভাবে রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে মহাসচিব করা হয় মশিউর রহমান রাঙ্গাকে। কিন্তু ক’দিন পর চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী পদ সৃষ্টি করে সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে সে পদে বসান রুহুল আমিন হাওলাদারকে।
ঘটনাবহুল জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ এবার নির্বাচনে প্রচারণায় নামেননি এমনকি ভোট দিতেও রংপুর যাননি। তিনি রংপুর-৩, জিএম কাদের লালমনির হাট-৩ ও রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে এমপি হয়েছেন। বিদেশ থেকে ফিরে এসে তিনি ঢাকা-১৭ আসন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। গতকালের প্রেসিডিয়াম ও নতুন এমপিদের যৌথ বৈঠকে কয়েকজন নেতা মহাজোট সরকারের থাকার পক্ষে মত দেন। কয়েকজন শুধুমাত্র বিরোধীদলে থাকার কথা বলেন। আবার কেউ কেউ সরকার ও বিরোধীদলে থাকার পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় যারা কিছুই পাননি তারা এবং যারা পেয়েছেন তারা সবার মধ্যে চলছে চরম অস্থিরতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।