পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720183747](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পৌষের তীব্র শীতেই এবার গাছে গাছে উঁকি দিতে শুরু করেছে দৃষ্টিনন্দন আমের মুকুল। আম গাছের ছোট ছোট ডালের সবুজ পাতার মাঝে হলদেটে মুকুল ঝুরি যেন কনক প্রদীপ হয়ে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই মুকুল ঝুরিগুলো প্রস্ফুটিত হবে মুকুল মঞ্জরীতে। আম গাছগুলো সজ্জিত হবে সাদা, বেগুনি ও হলদেটে ফুলে ফুলে পুষ্পরানীর সাজে। গাছে গাছে মৌমাছির গুঞ্জন আর মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে প্রকৃতিতে সৃষ্টি হবে এক নতুন ছন্দের।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ও মা ফাগুনে তোর আমের বোলের ঘ্রাণে পাগল করে’। কয়েক মাসের মধ্যেই পুষ্পরাণী আম গাছের ডালে ডালে ঝুলবে নানা জাতের, নানা বর্ণের আম। ফলের রাজা আম নিয়ে বাঙালির শিল্প-সাহিত্যে রয়েছে অসংখ্য গান, কবিতা এবং প্রবাদ-প্রবচন। উপমহাদেশ তথা বিশ্ব বিখ্যাত নারী জ্যোতিষী খনার বচনে বলা হয়েছে ‘মাঘে বোল, ফাগুনে গুটি, চৈত্রে কাটিকুটি, বৈশাখে আটি, জ্যৈষ্ঠে দুধের বাটি’। খনার এই প্রবচনটি ছিল বাংলাদেশে আমের মুকুল ধরা থেকে শুরু করে আম পাকা এবং দুধ মিষ্টি দিয়ে আম খাওয়ার সময়সীমা।
কিন্তু, বিশ্ব জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ আমের ফলনের সময় সীমার উপরে রচিত যুগ যুগের পুরানো খনার এই বচনটি এখন উলটপালট হয়ে গেছে। এখন মাঘ মাসে আর আমের মুকুল ফোটে না। গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ আম ফলনের সময়সীমায় ব্যাপক তারতম্য দেখা দিয়েছে। গত বছর আমের মুকুল ফুটে মধ্য মাঘে। এর আগের বছর আমের মুকুল দেখা দেয় ফাগুন মাসের মধ্যভাগে। এ বছর পৌষের প্রারম্ভেই আম গাছে মুকুল ঝুরি দেখা দিয়েছে।
কৃষিতাত্তি¡কদের মতে, প্রাচীন বাঙাল মুল্লুকই হচ্ছে আমের আদি নিবাস। বাংলাদেশ, পশ্চিম বাংলা,আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরাসহ পাক-ভারত উপমহাদেশেই আম গাছের জন্ম হয়। নবোপলীয় যুগে প্রথম আমগাছ ‘ডমিষ্টিকেশন’ বা পারিবারিক চাষাবাদের আওতায় আসে। এরপর লাখ লাখ বছর ধরে আমগাছ বসত বাড়ির গাছ হিসেবে পরিচিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব কালে বাংলাদেশ তথা পাক-ভারত উপমহাদেশে আমের চাষাবাদ শুরু হয়। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৩২ ও ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশ পরিভ্রমণ করেন। ধারণা করা হয় সে সময়ে তিনি আম ও আম গাছকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করেন। ১৫ শতকের মাঝামাঝি থেকে ১৬ শতকের প্রথম ভাগে সম্রাট আকবর প্রথম ভারতের লাখবাগের দারভাঙার সন্নিকটে ১ লাখ আমের চারা রোপণ করে উপমহাদেশে আম বাগানের সৃষ্টি করেন। পরে তা আস্তে আস্তে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে আম প্রায় সারা বিশ্বেই চাষাবাদ হয়। বাংলাদেশে আমের আদি নিবাস হলেও উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ এখনো পিছনেই পড়ে রয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বে আম উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ৯ম স্থানে রয়েছে। বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে এমন বসতবাড়ি সংখ্যা কম যেখানে আম গাছ নেই। অথচ উৎপাদন অত্যন্ত কম। বাড়ি বাড়ি গাছ থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশী মানুষকে বাজার থেকে আম কিনে খেতে হয়।
অথচ কৃষিবিদদের মতে, আম গাছের একটু পরিচর্যা করলেই প্রতিবছর নিজ বাড়িতে উৎপাদিত আম দিয়ে পারিবারিক চাহিদা মিটে যায়। কৃষিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী আশ্বিন-কার্তিক মাসে গাছের গোড়ায় কিছু রাসায়নিক বা জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মুকুল ধরার পূর্বে গাছের ডালের আগাগুলো যখন মোটা হয় তখন গাছে কিছু কীটনাশক প্রয়োগ করলে আম গাছের হপার পোকা ধ্বংস হয়ে যায়। মুকুল ধরার পর মুকুলগুলি যখন প্রস্ফুটিত হয় তখন কিছু হরমোন জাতীয় রাসায়নিক প্রয়োগ করলে আমের ফলন বৃদ্ধি পায়। মুকুল থেকে আম যখন গুটি ধরে তখন আরেকবার হালকা কীটনাশক স্প্রে করলে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। উপজেলা পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসগুলোতে সরকারি স্প্রেয়ার থাকে। বড় গাছ হলে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করলে প্যাডেল চালিত সরকারি মেশিন দিয়ে বড় বড় আম গাছে স্প্রে করার সুযোগ রয়েছে। ছোট গাছ হলে বাজার থেকে ছোট ছোট স্পেয়ার মেশিন কিনে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোন বা কীটনাশক প্রয়োগ করা যায়। দরকার শুধু গাছের মালিকদের একটু উদ্যোগ। বাড়ি ওয়ালা বা গাছ ওয়ালারা একটু আগ্রহ নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সাথে যোগাযোগ করলে তারাই সকল কিছু বলে দেবে। দেশের প্রতিটি নাগরিক তাদের চাহিদা অনুযায়ী আম খেতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।