বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুমিল্লার রেইসকোর্স এলাকার দুই বেড রুমের একটি বাসার ভাড়া ছিল ১১ হাজার টাকা। কিন্তু ডিসেম্বেরের শুরুতে বাড়ির মালিক নোটিশ দিয়েছেন জানুয়ারি থেকে দুই হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধির। এভাবে কুমিল্লার গৃহকর না বাড়লেও বাড়ানো হয়েছে বাড়ি ভাড়া। বর্ধিত বাসা ভাড়ায় বিপাকে পড়ছেন ভাড়াটিয়ারা। দৈনন্দিন জীবনের অতিপ্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ সমূহের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতেই নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। এর মধ্যে প্রতিবছরই রুটিন করে বাড়ানো হয় বাড়ি ভাড়া। ফলে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের চরম আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। নতুন বছরটি এখন তাদের জন্য একটি আতঙ্ক।
১০ বছর আগে কুমিল্লার প্রফেসর পাড়া এলাকায় ৪ হাজার টাকায় তিন বেডরুমের বাসা ভাড়া নেন বেসরকারি কলেজের শিক্ষক শাকিল আহমেদ। ভাড়া বাড়তে বাড়তে ২০১৮ সালে এসে হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। এর বাইরে গ্যাস-বিদ্যুতের বিল তো রয়েছেই। গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়িওয়ালা তাঁর কাছে ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ পাঠান। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে আরও এক হাজার টাকা বাড়তি ভাড়া দিতে হবে। তিনি আপত্তি জানালে বাড়িওয়ালা নতুন বাসা খোঁজার পরামর্শ দেন। নতুন বছরে বাসা ভাড়া বাড়ানো নিয়ে কুমিল্লায় বেশির ভাগ ভাড়াটের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। অনেক বাড়ির মালিকই নিজের খেয়াল খুশিমতো বাড়িভাড়া বাড়ান এমন অভিযোগও রয়েছে। অবার অনেক বাড়ির মালিকই বাসাভাড়ার রসিদ ভাড়াটেদের দেন না। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে বিপদে পড়ছেন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। কুমিল্লা শহরের ইপিজেড ও বিসিক শ্রমিক-অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিবছরই ভাড়া বাড়ে। স্বল্প আয়ের এসব লোক ভাড়া পরিশোধ করে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খান। ভোক্তা অধিকার রক্ষাকারী সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কুমিল্লা শাখার নেতারা বলছেন, নগরের কয়েকটি এলাকায় জরিপ চালিয়ে ২০১৮ সালে এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়ার তথ্য পেয়েছেন। কুমিল্লা শহরে ভাড়াটের প্রকৃত সংখ্যা কত, সে হিসাব সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থার কাছে পাওয়া যায়নি।
কামরুজ্জামান জনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কুমিল্লা বাগিচাগাঁও ২০১৫ সালে যখন দুই রুমের বাসা নিই তখন ভাড়া ছিল পাঁচ হাজার টাকা। পরের বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুতেই ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়ে দেন মালিক। পরের বছর বাড়ান আরও ৫০০ টাকা। জানুয়ারিতে আবার ৫০০ টাকা বাড়ানো হবে। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। আমাদের কাছে ৫০০ টাকাও অনেক টাকা। এই বাসা ছেড়ে অন্য কোথায় যাব, তারও উপায় নেই। সেখানেও একই অবস্থা হবে। এটি ভাড়াটিয়াদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো। এমনিতে প্রতিদিনই নিত্য পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি। এর সঙ্গে যদি বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পায় তাহলে সাধারণ মানুষের চরম নাভিশ্বাস উঠবে। ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ, বাড়ির মালিকরা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ালেও এর বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলে না।
২০১৫ সালে হাইকোর্ট একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেটিরও কোনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস এলেই বাড়িভাড়া বৃদ্ধির মানসিক চাপে ভুগতে থাকেন ভাড়াটিয়ারা। নভেম্বর মাসেই বাড়তি ভাড়ার নোটিশ জানিয়ে দেন বাড়ির মালিকেরা। ভাড়া বৃদ্ধির কোনো প্রতিবাদ চলে না। বাড়িওয়ালার সাফ জবাব, পোষাইলে থাকেন, না পোষাইলে চলে যান। ভাড়াটিয়া জীবনের বিড়ম্বনা এবং হয়রানির যেন কোনো শেষ নেই। বাড়িওয়ালা কর্তৃক হয়রানি এবং তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেক ভাড়াটিয়ার। আবার অনেকে ভাড়াবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাসা ছেড়ে দেন। অনেকে বাধ্য হয়ে থাকেন। কুমিল্লা তালপুকুড় পাড় এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম জানান, তাদের ভাড়াও দুই হাজার টাকা বাড়ানো নোটিশ দিয়েছেন কিন্তু মেয়ের স্কুল বাসার কাছে হওয়ায় তিনি বাসা ছাড়বেন না। তাকে বাধ্য হয়েই এটা মেনে নিতে হবে। কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকার ভাড়াটিয়াদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা বছর শেষে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করেন। কোনো কোনো বাড়ির মালিক বছরে দুইবার ভাড়া বৃদ্ধি করেন-জানুয়ারি এবং জুন মাসে। কোনো কোনো বাড়িওয়ালা যখন খুশি ভাড়া বাড়িয়ে দেন। এ নিয়ে ভাড়াটিয়াদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।