হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আবদুল আউয়াল ঠাকুর
গত কিছু দিনের হত্যাকা-গুলো ব্যর্থতা হিসেবে দেখা যেতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এ ধরনের অতর্কিত হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি আমাদের নেই। তিনি বিশ্বের কোথাও এ ধরনের প্রস্তুতি নেই বলেও মন্তব্য করেছেন। একের পর এক হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন এবং দুর্ধর্ষ খুনিদের ধরতে পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠলেও পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পুলিশ ঘরে ঘরে পাহারা দিতে পারবে না। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৩৭টি হামলা করেছে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী। এর ৯০ শতাংশেরই কারণ শনাক্ত করেছে পুলিশ। তারপরও কেউ কেউ পুলিশের অর্জন দেখে না, শুধু ব্যর্থ প্রমাণ করতে চায়। পুলিশ প্রধানের এ বক্তব্যের সাথে বোধকরি প্রকাশিত আরও দু-একটি রিপোর্ট যুক্ত হলে অবস্থার হয়তো একটি চিত্র পাওয়া যাবে। পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ বছরে খুন হয়েছে ২৫ হাজার মানুষ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুধুমাত্র শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৫টি। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন তিন থেকে চারটি বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া গেছে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায়। অধিকাংশ লাশই ছিল ক্ষতবিক্ষত, গলিত ও গুলিবিদ্ধ। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ। ওই সাল অবধি তিন বছরে গুম হয়েছে ১৮৮ জন যার মধ্যে লাশ মিলেছে ৩২টি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে, যাদের স্বজনরা প্রতিদিন প্রিয়জনের ফিরে আসার অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে বসে থাকছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা পুলিশ প্রধান যা বলেছেন তাকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তাদের বক্তব্যের মধ্যেও এক ধরনের উৎকণ্ঠার ছাপ রয়েছে। প্রকাশ্যত তারা স্বীকার না করলেও বক্তব্যের সুর থেকেই এটা স্পষ্ট যে, এক ধরনের হতাশা হয়তো তাদের মধ্যেও সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছে, আগের হত্যাকা-গুলোর সুষ্ঠু বিচার না হওয়াতে পশ্চিমা দেশগুলো এবার কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা ভাবছে। দেশি-বিদেশি নাগরিকদের ওপর ধারাবাহিক আক্রমণ ও হত্যাকা-ের সাথে জঙ্গিদের যোগসূত্র থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায় পশ্চিমা দেশগুলো। সে বিবেচনায় চলমান যেসব হত্যাকা-ের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর প্রকৃতি কিন্তু প্রকৃতপক্ষেই আলাদা। এসব হত্যাকা- রাতের আঁধারে নয় বরং অনেকটাই প্রকাশ্যালোকে হয়েছে। স্থানীয় কোনো জনগণ প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছে বা করতে চেয়েছে তার কোনো প্রমাণ কোথাও নেই। উপরন্তু কলাবাগানের হত্যাকা- সম্পর্কিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশ একজনকে ধরলে পুলিশের হাতে আঘাত করে সে পালিয়ে গেছে। আক্রমণকারীরা নাকি প্রকাশ্যেই রক্তাক্ত জামা পাল্টিয়েছে। পুলিশের হাত কামড়ে দিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীর পালিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছিল অনেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। এরপর ক্ষমতায় এসেছে। এখন অবশ্য এই সংগঠনের অনেকের ছবিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছাপা হচ্ছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, নানা কারণে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, বিরোধী দল দমনে এক শ্রেণীর পুলিশের কোনো জুড়ি না থাকলেও সরকার সমর্থিত বা সরকারি দলের ক্যাডারদের দমনে বা তাদের ব্যাপারে কোনো ধরনের টুঁ-শব্দটি করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অতর্কিত হামলা বলতে ঠিক যা বোঝায় আলোচ্য ক্ষেত্রগুলো অনেকটাই তার বাইরে। অতর্কিত হামলা বলতে সাধারণত বোঝানো হয় পথে চলতে-ফিরতে যেসব হামলা হয় সেগুলোকে। আলোচ্য ঘটনাগুলো তা নয় বরং দেখা যাচ্ছে, সিদ্ধান্ত নিয়েই এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
এই বাস্তবতায় পুলিশ প্রধান নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের নেয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন তাও কিন্তু বিশেষ বিবেচনায় দেখার দাবিদার। পুলিশ এবং নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। নাগরিকদের জানমাল রক্ষার যে দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায় তা মূলত দেখভাল করে থাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই। এটা বলা হয়, বেসামরিক প্রশাসনে পুলিশই জনগণের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এটা বোধহয় এখন আপ্ত বাক্যে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ এখন আর না ঠেকলে পুলিশের কাছে যেতে চায় না। কারণ স্পষ্ট। গেলেই নানা প্রসঙ্গ। দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই নাকি বিনা টাকায় কোনো কাজই করা যায় না। এ ছাড়াও অভিযানের নামে, তল্লাশির নামে অনৈতিক নারীঘটিত কেলেঙ্কারির খবরও প্রকাশিত এবং প্রমাণিত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে যদি মনে করা হয় যে, পুলিশ প্রধান হয়তো সব কিছু জেনেই নাগরিকদের নিজস্ব নিরাপত্তাবলয় তৈরির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, তাহলে প্রশ্ন ওঠে, তবে পুলিশ কেন? এখনো বিভিন্ন জায়গায় ও পাড়া-মহল্লায় নিজস্ব পাহারা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রেও দেখা যায়, থানার সুপারিশকৃতদের নিয়োগ না দিলে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সে বিবেচনায় বেসরকারি অর্থে যারা নিরাপত্তাবলয় তৈরির চেষ্টা করছেন তারাও কিন্তু এক ধরনের হস্তক্ষেপের আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। আজকের বাংলাদেশে যে ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে সেটি প্রকৃতির দিক থেকে একেবারেই নতুন। তবে এ থেকে সৃষ্ট সমস্যা ও সংকটগুলোতে নতুনত্ব নেই। অতীতে ভোট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রায় ভোটবিহীন কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ’৮২-এর সামরিক শাসন এসেছিল একটি নির্বাচিত সরকার হটিয়ে। ওই সরকারও নিজের ক্রেডিবেলিটি প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক লেবাস ব্যবহারের চেষ্টা করে। সে সময়ের আলোচনায় যাব না। শুধু এটুকু বলা যায় যে, এই লেবাস ধারণ করতে গিয়ে নানা ছলনার আশ্রয় নিতে হয় ওই সরকারকে। অনেকেরই মনে থাকার কথা, নিতান্ত নিরুপায় হয়েই ওই সরকারের সমর্থিত ছাত্র সংগঠনকে একপর্যায়ে নিষিদ্ধ করতে হয়। নৈরাজ্য এমন একপর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, রাজনৈতিক খুনখারাবি মহামারী আকার ধারণ করে। বাস্তবতার কারণেই তখন দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল নিজেদের নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগী ও তৎপর হয়। আজকের বাংলাদেশে সন্ত্রাসের সাথে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার যে প্রসঙ্গ উঠেছে তার সূত্র কার্যত সেখানে। মূলত সে সময়ের সরকারের মনোযোগিতা নাগরিক নিরাপত্তার বাইরে অন্য কিছু হওয়ার কারণেই এমনটা হয়। বিষয়টি হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কোন কাজে কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার ওপরই নির্ভর করে সে কীভাবে কোন কাজ করবে। মাত্র সেদিনের কথা, বিশ্বায়নবিরোধী মিছিল কীভাবে ঠেকাতে হবে সেটি পাশ্চাত্যের পুলিশের জানা ছিল না। আমাদের দেশে কীভাবে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সেটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জানা নেই বরং তাদের হাতে গুম-খুন-নিখোঁজ হওয়ার খবরই প্রকাশিত হচ্ছে। পুলিশের নির্দেশনায় যেদিন বলা হয়েছে, গাড়িতে সাংবাদিক, আইনজীবী, পুলিশের স্টিকার ব্যবহার করলেই দ- সেদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ফার্মগেটে দেখা গেল পুলিশের একটি কালো গাড়ি স্টিকার লাগানো অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসবই হচ্ছে জনগণের চোখের সামনে। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে আইন কি দুই ধরনের? যে আইন ভাঙার জন্য জনসাধারণের জরিমানা হচ্ছে সেই একই অনিয়মকে প্রোটেকশন দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। তাহলে নিরাপত্তা ভাবনায় যে পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে তার সূত্রানুসন্ধানও নতুন কিছু নয়। বোধকরি ব্যক্তিগত নিরাপত্তাবলয় তৈরির বিষয়টি আরো নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে।
দেশে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত না থাকায় একশ্রেণীর মানুষ ভারতীয় বা বিদেশি গল্প চিত্রায়ণে মুখ গুঁজে থাকলেও সারাদিন টিভি স্ক্রলের দিকে নজর দিতে বোধকরি কেউ ভুলে যায় না। তেমনিভাবে শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দিনমান পরিশ্রম করে যেসব দৈনিক নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলোর দিকে চোখ দিতেও তারা ভুলে যায় না। যারা মনে করেছিলেন, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কারণে প্রিন্ট মিডিয়ার প্রভাবে ভাটা পড়বে, সময়ে প্রমাণিত হয়েছে, কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিপক্ষ নয়। যে সংক্ষিপ্ত খবরটি শ্রোতারা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় শোনে তার বিবরণ ও বিশ্লেষণ জানার জন্যই নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী পত্রিকা বেছে নেয়। সংসদে দেয়া বিবরণী থেকে এটা বোঝা যায়, পত্রিকা যতই প্রকাশিত হোক, পাঠকপ্রিয়তায় ঘাটতি নেই। বর্তমান সংকট পাঠকপ্রিয়তা নিয়ে নয় বরং বাংলাদেশের মিডিয়া যে এখন শান্তি বা স্বস্তি কোনোটাতেই নেই সেটাই বড় বিষয়। মত প্রকাশের প্রসঙ্গ নিয়ে যখন কথা ওঠে তখন সংশ্লিষ্টরা যাই বলুন এবার আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রিডম দিবসে দেশের বিভিন্ন মহলের আলোচনায় প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে। দিবসের সেমিনারে বক্তারা সুস্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্য পাওয়ার অধিকার গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানুষ এখন কথা বলতে ভয় পায়। এভাবে মত প্রকাশ করতে না দেয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। এরপর দেশে গণমাধ্যমের প্রকৃত অবস্থ কী তা বোধকরি লিখে বা বলে বুঝানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কার্যত দেশের গণমাধ্যম এখন ধারালো করাতের নিচে অবস্থান করছে।
সাংবিধানিকভাবে অবাধ তথ্য প্রবাহের কথা বলা হলেও বর্তমান সময়ে এত ধরনের আইন রয়েছে যার ফলে একটু এদিক ওদিক হলেই মিডিয়ার আর উপায় নেই। এখনও বাংলাদেশে বহু গণমাধ্যম যেমনি বন্ধ রয়েছে তেমনি গণমাধ্যমের বহু কর্মীও আটক রয়েছেন। নানা নিবর্তন আইনে মিডিয়া কর্মীদের নিগ্রহ-নির্যাতনের মাত্রা দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রিডম দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এক রিপোর্টে একটি ইংরেজি দৈনিকে দেশে সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্র্মীদের নির্যাতন নিগ্রহের বিশদ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ২৪৪ জন সাংবাদিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা হয়রানি, নিগৃহীত ও হুমকিপ্রাপ্ত হয়েছেন। উল্লিখিত সময়ে অন্তত ৬১ জন সাংবাদিক সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা অনুরূপ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন। এ সময়ে প্রকাশিত রিপোর্টের কারণে অন্তত ২৩৩টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়াও খবর প্রকাশের ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অসদাচরণ তো রয়েছেই। আন্তর্জাতিক মাধ্যমেও বাংলাদেশের সাংবাদিকতার দৈন্যদশার নানা বিবরণ হরহামেশাই প্রকাশিত হচ্ছে। বিশ্ব গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে বাংলাদেশস্থ মার্কিন রাষ্টদূত যথার্থই বলেছেন, গণতন্ত্র সেখানেই বিকশিত হবে যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীন। এদিকে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। বাস্তবতও এ কথা ঠিক যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো উন্নয়নই টেকসই হতে পারে না। আর গণতন্ত্র ছাড়া সংবাদপত্র বা মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই।
সামগ্রিকভাবে সংবাদপত্র তথা মিডিয়া যখন নানাভাবে আক্রান্ত তখন মিডিয়াকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার আদর্শিক ধারণা থেকে যে প্রেস কাউন্সিলের জন্ম হয়েছে সেই প্রেস কাউন্সিল প্রকারান্তরে প্রকাশনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর নানা মাত্রিক ঝুঁকি যে রয়েছে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্নজন কথা বলেছেন। দেখা যাচ্ছে, কোনো সূত্র ধরে প্রথমে একটি ঘটনা ঘটলেও পরে তার নানা মাত্রিক অপপ্রয়োগ হয় বা হয়ে থাকে। কোনো কারণে যদি প্রেস কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোনো প্রকাশনা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় তারপরেও যে সেটি আবার পুনরায় খুলবে সে নিশ্চয়তা কিন্তু প্রেস কাউন্সিল দিতে পারে না; দেয়া সম্ভবও নয়। মাথাব্যথা দূর করতে গিয়ে হয়তো মাথাটাই শেষ পর্যন্ত হারাতে হবে। এ দায়িত্ব প্রেস কাউন্সিলের মতো প্রতিষ্ঠানের নেয়া কতটা যৌক্তিক সে ভাবনা বিবেচনার বাইরে রাখা বোধকরি সঙ্গত হবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে গত ৩০-৪০ বছরে এ ধরনের বহু উদাহরণ দেয়া সম্ভব যে, এক ইস্যুতে প্রকাশনা বন্ধের পর অন্য ইস্যু যুক্ত হয়ে অনেক প্রকাশনা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে দায় কিন্তু থেকেই যাবে। এই বাস্তবতায় প্রেস কাউন্সিল প্রকাশনা বন্ধের যে ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাচ্ছে তা প্রকৃত বিবেচনায় হয়তো বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অন্তরায় হিসেবেই বিবেচিত হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে হালকা বা সহজভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। প্রেস কাউন্সিল যদি পত্রিকা বন্ধ করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তা মূলত মত প্রকাশের ওপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবেই বিবেচিত হবে। ইতোমধ্যেই অনেকেই পত্রিকা বা সংবাদ সংস্থার প্রকাশনা বন্ধ রাখার বিপক্ষে অভিমত প্রকাশ করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টাও প্রকারান্তরে প্রকাশনা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এখন তো অবস্থা এমন মনে হচ্ছে, পত্রিকা-মিডিয়া করাটাই যেন এক মহাদোষের। এই প্রবণতা বা বাস্তবতা কোনো বিবেচনাতেই একটি সুস্থ দেশ বা জাতি গঠনের অনুবর্তী নয়, হতে পারে না।
সৃষ্টির মধ্যে একমাত্র মানুষই চিন্তা করে। সেজন্য মানুষ নিয়েই যত ভাবনা। মানুষের এই চিন্তাভাবনা প্রকাশের নামই মত প্রকাশের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে গণতন্ত্র। বিষয়টি যদি খোলা চোখে দেখা যায় তাহলে এই দাঁড়ায় যে, মানুষের নিরাপত্তা ছাড়া চিন্তার স্বাধীনতার নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। সে জন্যই প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুপস্থিতিতেই দেশের সর্বত্র নানামাত্রিক সংকট দানা বেঁধেছে এবং বাঁধছে। আলাদা আলাদা এর কোনো সমাধান নেই। করার চেষ্টা করাও অর্থহীন। যেসব কারণে আক্রমণকারী বা হত্যাকারীরা নির্বিবাদে ঘুরে বেড়াতে পারছে তার মধ্যে বোধকরি এটাও একটি যে, জনসাধারণের সাথে সরকারের কোনো আত্মিক সম্পর্ক নেই। এই যোগসূত্রবিহীনতা দীর্ঘ মেয়াদে সুফল বয়ে আনতে পারে না।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।