রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
শীতের মৌসুমে ট্রেনে যারা গফরগাঁও হয়ে যাতায়াত করে থাকেন, তাদের অনেকের কাছেই ফেরিওয়ালাদের এই সংলাপটি দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত ‘বাইগুইন নিবাইন, বাইগুইন, গোল বাইগুইন’ অর্থাৎ বেগুন নিবেন, বেগুন, গোল বেগুন। বহুকাল ধরে গফরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী গোল বেগুন দেশ-বিদেশের মানুষের মন কাড়ছে। তবে দু:খের বিষয় হলো, হারিয়ে যেতে বসেছে গুনেমানে সুস্বাদু, নয়নকাড়া মনোলোভা অনন্য এই গোল বেগুন।
বিশেষ প্রজাতির এই বেগুন দেখতে গোলাকার, কিন্তু দেহ মসৃণ নয়; অনেকটা ঢেউ খেলানো খাজকাটা। সাইজ বেশ বড়। এর একটি বেগুনের ওজন এক-দেড় কেজি থেকে তিন-চার কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিশেষ করে বড়া বা ভাজি খেতে এই বেগুনের জুড়ি মেলা ভার।
এক সময় গফরগাঁও উপজেলার ৩ নম্বর চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ গ্রামের কাচারী পাড়ায় চাষ হতো এই বেগুন। সৌভাগ্যবান মাত্র ৫০-৬০ জন কৃষক এই কাজ করতেন। ওই এলাকা ছাড়া অন্য এলাকার জমিতে শত চেষ্টা করেও এর ফলন আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। আঞ্চলিকভাবে এর নাম লাফা বেগুন। ফলন খুব অল্প সময়েই হয়ে থাকে।
বেগুন চাষীদের মতে, এর ফলনে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। ভরা শীতের মধ্যে এর ফলন শুরু হয়। তাই প্রতিদিন হাড় কাঁপানো শীতে রাতের শেষ প্রহরে জেগে ক্ষেতের মাটি পা দিয়ে ওলট-পালট করে দিতে হয়। তারপরও প্রতি সপ্তাহে পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হয়। কারণ এ বেগুন গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে রস শুষে নেয়। এরপর কিছু আচার অনুষ্ঠান করতে হয়, যা বর্তমানে শিক্ষিত মানুষের কাছে হাস্যকর। তাই চাষীদের নানা রকম ঠাট্টা বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়। এ বেগুন উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে জৈব ও রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। যান্ত্রিক চাষে বেগুনের আবাদ, প্রচুর রাসায়নিক সারের আর্থিক যোগান অনেক চাষীর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি অফিস ও কৃষি ব্যাংকের সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া না বলেও অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, গোল বেগুন উৎপাদন না হওয়ার দুটি কারণ রয়েছে। ১. যেসব জমিতে গোল বেগুন সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হতো, সেসব জমির বেশির ভাগ ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। ২. গোল বেগুন চাষাবাদ করতে যে পরিমাণে খরচ হতো তার চেয়ে কম খরচ পড়ে ইরি-বোরো চাষাবাদ করতে। ফলে কৃষকরা গোল বেগুন চাষের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে।
বিশেষ এই গোল বেগুন চাষে অনেক নিয়ম কানুন মেনে না চললে ফলন হয় না বলে জনশ্রুতি আছে। নিয়মগুলো হলো মাথায় তেল, পায়ে জুতা এবং নাপাক শরীরে বেগুন ক্ষেতে প্রবেশ করা নিষেধ। মহিলারা এসব বেগুন ক্ষেতে প্রবেশ করতে পারে না। এসব নিয়ম পালন না করলে বেগুন হবে না। কোনো কোনো বেগুন ক্ষেতে রোগ দেখা দিলে উল্লিখিত কারণ ভঙ্গ হয়েছে বলে অনেক কৃষকরা মনে করেন।
বিভিন্ন কারণে ধীরে ধীরে গোল বেগুন চাষের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন চাষীরা। তারা এ বেগুন চাষ নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না। তাদের অনেকের মতে, এ বেগুনের পেছনে যে শ্রম দিতে হয়, এ শ্রম ধান চাষের পেছনে দিলে অনেক বেশি আর্থিক লাভ হয়।
বিশিষ্টজনদের মতে, এ বেগুনের চাষ টিকিয়ে রাখতে হলে, কৃষকদেরকে কৃষি ব্যাংক ও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উৎসাহ দিয়ে অথনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলেই সেই ঐতিহ্যবাহী গোল বেগুন চাষের প্রতি কৃষকরা উদ্বদ্বু হবে; হারিয়ে যাবে না ঐতিহ্যবাহী গফরগাঁওয়ের গোল বেগুন।
ইদানিং দেশের বিভিন্ন বাজারে গফরগাঁওয়ের গোল বেগুন বলে ধোঁকা দিয়ে এক ধরনের গোল বেগুন বিক্রি করা হয়ে থাকে, ওইগুলো আসলে গফরগাঁওয়ের নয়। এসব বেগুনের দেহ মসৃণ অর্থাৎ সাদামাটা। রংও সম্পূর্ণ বেগুনী নয়।
বর্তমানে গফরগাঁওয়ের চরাঞ্চলে বেশ কিছু চাষী গোল বেগুন চাষ করছেন। তবে এগুলোর আকৃতি ‘আদি গোল বেগুনের’ মতো বড় নয়। তবে এগুলোর ভাজিও বেশ সুস্বাদু।
গফরগাঁও উপজেলার ৩ নং চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাছুদুজ্জামান (মাসুদ) জানান, বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী লাফা গোল বেগুন চাষ শুধুমাত্র চরমছলন্দ গ্রামে গোটা কয়েক কৃষক করে থাকেন। গোল বেগুন চাষ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে সরকারিভাবে কৃষিবিভাগ উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এ ছাড়া কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।
উপজেলা কৃষি অফিসার দ্বীপক কুমার পাল বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী গফরগাঁওয়ের লাফা গোল বেগুন নতুন করে চাষ হয় কিনা চরমছলন্দ গ্রামে তা আমার জানা নেই । তবে এ ধরনের গোল বেগুনের চাষ বহু আগে হতো তা আমি শুনেছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।