Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে অবাধে ভোটকেন্দ্র দখল ও সিল মেরে বাক্স ভর্তি

সর্বত্র দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট দিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হতাশ ভোটাররা

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১০ পিএম | আপডেট : ১:৩১ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮

বাইরে অনেক জায়গাতেই ‘শান্তিপূর্ণ’। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারা ও টহল সবই আছে। তবে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে হরেক রকম কৌশলে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং। এভাবেই বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রায় সর্বত্র ‘অবাধে’ ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপারে যথেচ্ছভাবে নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তির মধ্যদিয়ে চলছে নির্বাচনী তামাশা। গতকাল (রোববার) সকালে চকবাজার এলাকায় বয়োবৃদ্ধ ভোটার আবদুস সালাম চৌধুরী বললেন, ‘এ এক আজব নির্বাচন’। তিনি কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে দেখেন ভোটার নম্বর বের করে যখনই ইভিএম মেশিনে বাটন টিপ দেবেন গোপন বুথে দাঁড়ানো এক যুবক হঠাৎ বলে উঠলো, চাচা মিয়া আপনার কষ্ট করতে হবে না, যান আমি বাটন টিপে দিচ্ছি। বিশিষ্ট একজন আলেমেদ্বীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়াম ভোটকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টায় ভোট দিতে যান। ওই একইভাবে বাটন টেপার সময়ই গোপন বুথে দাঁড়ানো তিন যুবক বললো আমরা ঠিক করে দিচ্ছি, আপনি যান। আড়চোখে দেখলেন নৌকা মার্কায় বাটন টেপা হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে নিজ বাসায় তিনি ফিরে গেলেন।
বন্দরনগরীর পূর্ব বাকলিয়ার মইদ্দারকুল মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টায় ভোট দিতে যান রিকশাচালক আলিম। গেইট দিয়ে ঢুকবেন ঠিক তখনই সেখানে দাঁড়ানো যুবকরা আলিমসহ ৫-৭ জন ভোটারকে তাড়িয়ে দিল। বললো যা তোদের ভোট দিতে হবে না। আমরা দেব। যুবকদের দুইজনের হাতে প্রকাশ্যে রিভলবার। তাদের পেছনেই পুলিশ ছিল ‘কর্তব্যরত নির্বিকার’। তাছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে ভোরের সূর্য উঁকি দেয়ার আগে-পরেই সুকৌশলে নৌকার এজেন্ট-ক্যাডাররা কেন্দ্র দখলে নিয়ে ইচ্ছেমতো ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সভর্তি করার খবর পাওয়া গেছে। অনেক স্থানেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা প্রকাশ্যে ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণসহ দাপিয়ে বেড়ায়। অথচ পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব দেখেও না দেখার ভান করে। এমনকি অনেক জায়গায় দখলবাজি তৎপরতায় পুলিশ ছিল সহায়ক।
সকাল ১১টার দিকে কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন স্কুল কেন্দ্রের বাইরে পুরুষ ও মহিলা ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু এগোচ্ছে না কেন? দেখা গেল গেইটের মুখে নৌকা মার্কার ব্যাইজধারী যুবকরা ১০-১৫ মিনিট পর একজন করে ভোটারকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। এতে বিরক্ত হয়ে ভোটাররা অনেকেই লাইন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সকাল ৯টা নাগাদ বাকলিয়ায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার কর্মীরা ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়। এরপর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের মধ্যথেকে শুধুই আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত যারা তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়। অন্যদের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার পটিয়ায় হরিহারা ভোটকেন্দ্রে সকাল ৯টা নাগাদ ধানের শীষের ছয়জন পোলিং এজেন্টকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা বের করে দেয়। এদের মধ্যে তিনজনকে ভোটকেন্দ্রের পেছনেই গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে।
সকাল সাড়ে ৮টায় নগরীর লালখান বাজার মাদরাসা কেন্দ্রে নৌকার সমর্থিত যুবকরা চড়াও হয়ে তিনজন ধানের শীষের পোলিং এজেন্টকে বের করে দেয়। এদের মধ্যে মাওলানা মহিউদ্দিন নামে একজনকে ধরে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। তাছাড়া ভোটারদের ভেতর থেকে বেছে বেছে নৌকার সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়। একই দৃশ্য চাক্তাই মাদরাসাসহ অনেক ভোটকেন্দ্রের। নগরীর নাসিরাবাদ গার্লস হাই স্কুল এবং পলিটেকনিটক ইনস্টিটিউট কেন্দ্রেও নৌকার কর্মীরা ভোটারদের দেখে দেখে প্রবেশ করতে দেয়, অচেনা ভোটারদের বাড়িঘরে চলে যাওয়ার জন্য শাসিয়ে দেয়। দুপুর ১২টা নাগাদ নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে তিনটি বুথে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভোটাররা ধীরগতিতে ভোট দিতে পারলেও ভেতরে দুটি বুথ নৌকার এজেন্টরা দখলে নিয়ে সিল মারার মহোৎসবে মেতে ওঠেন।
এদিকে গতকাল সকাল ৭টা, সাড়ে ৭টা থেকেই চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার ১৬টি নির্বাচনী এলাকার অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে পৌষের তীব্র শীত উপেক্ষা করেই হাজার হাজার ভোটার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাছাড়া নগরী ও জেলার সড়ক-মহাসড়ক, রাস্তাঘাট, অলিগলিতে যানবাহন চলাচল না থাকা সত্ত্বেও মহিলা-পুরুষ বিশেষ করে নবীন-তরুণ ভোটাররা দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ভোটকেন্দ্রের দিকে প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা বুকে নিয়েই যেতে দেখা যায়। কিন্তু তারা নিজ নিজ কেন্দ্রে গিয়ে যখন ভোট দিতে পারেননি তখন হতাশ হয়ে ফিরে যান। এরফলে সর্বত্র মানুষের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ, অসন্তোষ আর হতাশা। চট্টগ্রামবাসী অধিকাংশ ভোটারেরই নিজের ভোটটি নিজে দেয়ার এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সেই দীর্ঘদিনের স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা অধরাই রয়ে গেল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ