Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘জীবন বাজি’ রেখে মাঠে ঐক্যফ্রন্ট

চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯ আসন

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

 ‘জীবন বাজি’ রেখে আজ ভোটের মাঠে থাকবেন ঐক্যফ্রন্টের কর্মীরা। কেন্দ্রে নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে থাকবেন তারা। সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে যেতে উৎসাহিত করার কাজেও নামবেন কর্মী-সমর্থকরা। পুলিশি ধরপাকড়, হামলা ও মামলার ভয়ে আড়ালে থাকাদের সবাই সক্রিয় হবেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনের প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি নেতাদের সাথে আলাপে জানা যায়, ভোটের অধিকার আদায়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। তারা আশাবাদী নির্বাচন কমিশন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের যে আশ্বাস দিয়েছেন তা রক্ষা করবেন। ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হবে এবং মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতির এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।
চরম বৈরী পরিবেশে ১০ বছর পর ভোটের মাঠে নেমেছে বিএনপি ও তাদের শরিকরা। জেল-জুলুম-হুলিয়ার সাথে গত ছয় মাস ধরে চলে গায়েবি মামলা। এসব মামলায় আজগুবি অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন শত শত নেতাকর্মী। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের হিসেবে গত এক মাসে বন্দির সংখ্যা তিন হাজার বেড়েছে। এদের বিরাট অংশ রাজনৈতিক মামলার আসামি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও বন্ধ হয়নি গ্রেফতার হয়রানি। বরং আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর গ্রেফতার বাড়তে থাকে। নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হওয়ার পরও গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে। বাসাবাড়িতে পুলিশি হানা এবং সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগও করছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা।
উল্টো চিত্র সরকারি দলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। তারা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। নির্বাচনী এজেন্টদের তালিকা আগেই চ‚ড়ান্ত করেছেন। তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করে ভোটারদের উৎসাহিত করতে নানা প্রস্তুতিও নিয়েছেন নৌকা মার্কার প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে পিছিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। সম্ভাব্য নির্বাচনী এজেন্টদের অনেকেই গ্রেফতার হয়ে গেছেন। অনেকে আবার মামলার আসামি হওয়ায় পালিয়ে গেছেন। তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণও দেয়া যায়নি। নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত ক্যাম্পও খুলতে পারেননি প্রার্থীরা। অনেক এলাকায় গতকাল পর্যন্ত পুলিশি অভিযানে দৌড়ের মধ্যে ছিলেন কর্মীরা।
এরপরও প্রার্থীরা আশাবাদী নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তাদের এজেন্টরা সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সুষ্ঠু ভোট হলে যেসব কেন্দ্রে এজেন্ট দেয়া যাচ্ছে না সেখানে ভোটাররাই এজেন্টের ভ‚মিকা নেবেন। চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, ধরপাকড় আর ভয়ভীতির মধ্যেও ধানের শীষের কর্মীরা মাঠে থাকবেন। ভোটারদের পাশে থেকে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগে সহযোগিতা করবেন। তিনি বলেন, ধরপাকড়ের কারণে নির্বাচনী এজেন্টদের আগে থেকে প্রস্তুত করা যায়নি। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও দেয়া হয়নি। তারপরেও আমরা আশাবাদী আমাদের কর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ ভোটারেরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের প্রায় প্রতিটিতে সরকারি দলের সমানতালে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেনি ধানের শীষের প্রার্থীরা। তিনজন প্রার্থী এখনও কারাগারে। তাদের পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান তার নির্বাচনী এলাকায় র‌্যালি করতে গিয়ে হামলার শিকার হন। হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের প্রার্থী কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার। দুই দফায় হামলার শিকার হয়েছেন চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের প্রার্থী কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীক।
প্রচারে গিয়ে গুলির মুখে পড়েন বাঁশখালী আসনের প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। ২০ দলের শরিক এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের ছাতা মার্কার সমর্থনে প্রচারণায় গিয়ে হামলায় আহত হন তার পুত্র অধ্যাপক ওমর ফারুক। তার ভাতিজা চন্দনাইশের সাবেক পৌর মেয়র কাদেরীকে গ্রেফতারের পর ছাতার পক্ষে প্রচারণা না চালানোর শর্তে ছেড়ে দেয়া হয়। স›দ্বীপে ধানের শীষের প্রার্থী মোস্তফা কামালের সমর্থকরাও আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন সীতাকুন্ড আসনের প্রার্থীর সমর্থকরাও।
মীরসরাই আসনের প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে হামলার পাশাপাশি পুলিশের ধরপাকড় মোকাবেলা করতে হয় ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকদের। এ কারণে নির্বাচনী প্রস্ততিতে হোঁচট খান ঐক্যফ্যন্টের প্রার্থীরা। ধরপাকড়ের মধ্যে কর্মীরা আড়ালে চলে যায়। অনেকে অন্য এলাকায় গিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। দলের নেতারা বলছেন, আড়ালে থাকা নেতাকর্মীরা যেকোন মূল্যে মাঠে নামবেন। তারা নিজেদের ভোট দেবেন। সাধারণ মানুষকেও ভোটকেন্দ্রে যেতে সাহায্য করবেন। ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে কর্মীদের প্রতি কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা এসব নির্দেশনা মেনে চলবেন। এক্ষেত্রে গ্রেফতার কিংবা পুলিশি হামলার শিকার হতে পারেন এটা মাথায় রেখেই তারা মাঠে নামবেন। কারণ এছাড়া তাদের সামনে আর কোন বিকল্প নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ