বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
স্বাধীন বাংলাদেশে যতো জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, তার সবক'টিতে কথাটি ধরা দিয়েছে শতভাগ; সিলেট-১ আসন যার, সরকার তার। ওলি আউলিয়ার পদস্পর্শে ধন্য, সিলেট নগরী ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন। অতীত ইতিহাসের কারণে দেশ ও বিদেশে সিলেট-১ আসন পেয়েছে ভিন্নমাত্রা; সকলেরই চোখ সিলেটে।
নির্বাচনী ডামাঢোলের শুরু থেকে প্রচারণার শেষদিন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণই বলা চলে সিলেটের নির্বাচনী পরিবেশ। উত্তাপ-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও আশঙ্কাজনক কোনকিছুই ঘটেনি সম্প্রীতির শহরে। এখানে খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিনের আয়োজনে গির্জায় একসাথে কেক কেটেছেন প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। একপ্রার্থী আরেক প্রার্থীকে নিজের দলে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণও করেছেন।
প্রচারণার শেষদিনে এসে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিএনপি নেতা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান ও নেতাকর্মীদের আটকের ঘটনা না ঘটলে বলা যায় মোটামুটি শান্তিপূর্ণই সিলেট-১ আসনের এলাকাসমূহ।
আর শহরতলিতে নৌকা মার্কার এক সমর্থকের মৃত্যুর ঘটরা ঘটলেও সেটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি ওই মৃত্যুর ঘটনাটি ব্যক্তিগত বিরোধে; এখানে কোন রাজনৈতিক ইস্যু নেই। যদিও আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপি সমর্থকদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে কাওসার নামে তাদের ওই সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া প্রচারণাকালীন সময়ে কিছু বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণ, কার্যালয় ভাংচুর, প্রচারে বাধা, পোস্টার ছেড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এগুলো নিয়ে প্রধান দুই প্রার্থীর পক্ষ থেকে রয়েছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, রয়েছে বিতর্ক।
প্রচারণার শেষদিনের আগপর্যন্ত দু'টি পক্ষই জোরালোভাবে ভোটারদের মনে জায়গা করে নিতে চেয়েছেন। আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আব্দুল মোমেন (নৌকা) ও বিএনপির খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের (ধানের শীষ) প্রচারণা, গণসংযোগ ছিল লক্ষণীয়। শেষদিনে দু’জনই সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে নগরীতে বিশাল শোডাউন করেছেন। তবে মুক্তাদির কোর্টপয়েন্টে নিজের শেষ জনসভা করতে পারেননি পুলিশী বাধায়। পরে তিনি একাই গণসংযোগ করেছেন সেখানে।
এছাড়াও আরও প্রচারণা লক্ষ্য করা গেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. রেদওয়ানুল হক চৌধুরী (হাতপাখা), মাহবুবুর রহমান চৌধুরী (লাঙ্গল), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির উজ্জ্বল রায় (কোদাল), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর প্রণব জ্যোতি পালের (মই)। অন্যপ্রার্থীদের খুব একটা প্রচারণা চোখে পড়েনি।
সিলেট-১ ভোটের মাঠের হিসেবনিকেশ বলছে এবার নৌকা অথবা ধানের শীষ এই প্রতীকের যেকোনো একটিতেই আস্থা রাখবেন তারা। দুই প্রতীকের বাইরে অন্য কোন প্রার্থীর পক্ষে জনরায় যাচ্ছেনা এটি প্রায় নিশ্চিত। যদি কোন ‘মিরাকল’ না ঘটে তবে হয় মোমেন না হয় মুক্তাদির; হচ্ছেন সিলেট-১ আসনের পরবর্তী সাংসদ।
সিলেট-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্যরা হলেন- ইসলামী ঐক্যজোটের মুহম্মদ ফয়জুল হক (মিনার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আলী (আম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মো. আনোয়ার উদ্দিন (হারিকেন), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নাসির উদ্দিন (বটগাছ)।
দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসন থেকে বিগতদিনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, দুই অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এবারের নির্বাচনে একেবারে শেষদিন পর্যন্ত তুমুল আলোচনায় থাকা দুই প্রার্থীর একজন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। তার পিতা খন্দকার আবদুল মালিক বিগতদিনে এই আসনের একাধিকবারের সাংসদ ছিলেন। মুক্তাদিরের সাথে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। তাই তিনি শক্ত অবস্থানে আছেন।
অন্যদিকে বর্তমান অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের টানা দুইবারের সংসদ সদস্য আবুল মাল আব্দুল মুহিতের অনুজ ড. এ কে এ মোমেন। পারিবারিক ঐতিহ্য আর নিজের ক্লিন ইমেজের কারণে বেশ সুনাম মোমেনের। দীর্ঘদিন জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকেই ‘আলোকিত সিলেট’ গড়ার স্বপ্নে বিভোর। এখন দেখার পালা মুক্তাদিরকে টেকাতে পারেন কিনা। তার সাথেও প্রাণপণ খেটে যাচ্ছে সিলেট আওয়ামী পরিবার।
দু'জনের সহধর্মিণীও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ভোটের মাঠে। মোমেনপত্নী সেলিনা শুরু থেকেই মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীদের সাথে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন পাড়া-মহল্লা। মুক্তাদিরপত্নী জাকিয়াও মহিলা দল নেত্রীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন গণসংযোগে। তাদের সাথে আছেন স্বজন পরিজনরাও। বিদেশ বিভূইয়ে থাকা দু'জনেরই প্রবাসী শুভাকাঙ্খিরা এসেছেন ভোটের জন্য। তারাও ছিলেন প্রচারণাকাজে।
মোমেন-মুক্তাদির সিলেটের রাজনীতির মাঠে নতুনমুখ। রাজনীতিতে তাদের চেয়েও প্রবীণ, ত্যাগী নেতারা মনোনয়ন চেয়েও পাননি। তবে মোমেন-মুক্তাদির রাজনীতিতে না থাকলেও দু'টি ফাউন্ডেশনের ব্যানারে দু'জন সক্রিয় ছিলেন সিলেটে।
পিতার নামে গড়া খন্দকার আব্দুল মালিক ফাউন্ডেশনের ব্যানারে সক্রিয় ছিলেন মুক্তাদির। অন্যদিকে মোমেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে জয়ী হয়েছিলেন আবদুল হেকিম চৌধুরী। এরপর নির্বাচিতরা হলেন রফিকুল হক, খন্দকার আবদুল মালিক, হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, সাইফুর রহমান ও আবুল মাল আবদুল মুহিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।