Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সিলেটে নৌকা-ধানের শীষ সমানে সমানে

ফয়সাল আমীন/ মিসবাহ উদ্দীন আহমদ, সিলেট | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:০২ পিএম

সিলেট-১ আসনের মতো জেলার বাকি ৫ আসনের মধ্যে ৪টিতে ভোটের মাঠে মূল লড়াই হচ্ছে নৌকা-ধানের শীষে। শুধুমাত্র সিলেট-২ আসনে নৌকা-ধানের শীষ কোন প্রতীকই নির্বাচনে নাই।

প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত সিলেট-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে, নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সহধর্মীনি তাহসিনা রুশদীর লুনা ভোটের মাঠে ছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। তিনি ছিটকে যান নির্বাচনী মাঠ থেকে। বর্তমানে এখানে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানকে সমর্থন দেয়া হয়েছে।
ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি।

অন্যদিকে দশম সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখানে বর্তমান সাংসদও জাতীয় পার্টির। লুনা নির্বাচন থেকে ছিটকে যাওয়া ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় ইয়াহ্ইয়ার সাথে থাকায় বেশ শক্ত অবস্থানে তিনি।

আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরাসরি প্রার্থী না থাকায় নৌকা-ধানের শীষের সমর্থকরা হতাশ। তবে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে জোটপ্রার্থীদের সাথেই আছেন অনেকে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমর্থকদের বড় একটা অংশ বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তিন প্রার্থীর পক্ষে। এরমধ্যে দুইজন স্বতন্ত্র। তারা আওয়ামী ঘরানার; অন্যজন খেলাফত মজলিসের।

এখন এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীর (লাঙ্গল) সাথে আলোচনায় আছেন গণফোরামের মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য) ও খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী (দেয়াল ঘড়ি)। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে মূল লড়াইয়ে আছেন এনামুল হক সর্দার (সিংহ) ও মুহিবুর রহমান (ডাব)।

সিলেট-৩ আসনে মূল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী (নৌকা) ও বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরীর (ধানের শীষ) কর্মী-সমর্থকরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও করেছেন নির্বাচনী এলাকাতে। দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। বালাগঞ্জ এলাকার একাংশ আগে সিলেট-২ আসনের সাথে যুক্ত ছিল। সম্প্রতি সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের সময় বালাগঞ্জ উপজেলার পুরোটাই সিলেট-৩ আসনের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীরই রয়েছে সংসদের চেয়ারে বসার অভিজ্ঞতা। এই আসনে আরও আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির উসমান আলী (লাঙ্গল) ও খেলাফত মজলিসের দিলওয়ার হোসাইন (দেয়াল ঘড়ি)।

সিলেট-৪ আসনেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। এই আসনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ কাউকে ছাড়িয়ে নয়। সংসদীয় রাজনীতিতে দু'জনই অভিজ্ঞ। আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদ (নৌকা) ও বিএনপির দিলদার হোসেন সেলিম (ধানের শীষ) এদের মধ্যে থেকে যে কেউ হাসতে পারেন শেষ হাসি। দু'জনই বেশ শক্ত অবস্থানে আছেন। পুরোপুরি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কে বিজয়ী হবেন। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ তিন সীমান্তবর্তী উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনের ভোটারদের সাথে আলাপ করে ইমরান ও সেলিম দু'জনের প্রতি সমর্থন পাওয়া গেছে।

সিলেট-৫ আসনে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার (নৌকা) ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উবায়দুল্লাহ ফারুকের (ধানের শীষ) মধ্যে। অন্যদিকে এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনও (লাঙ্গল) আছেন আলোচনায়।জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী উবায়দুল্লাহ ফারুকের অবস্থান তুলনামূলক ভাল। ভোটারদের মতে যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তবে এখানে ধানের শীষ বিজয়ী হবে।

সিলেট-৬ আসনেও লড়াই হবে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ (নৌকা) ও বিএনপির ফয়সল আহমদ চৌধুরীর মধ্যে (ধানের শীষ)। এরমধ্যে দীর্ঘদিন পর এই অআসন থেকে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বীরা কেউ কাউকে ছাড়িয়ে নয়; দু'জনই সমান শক্তিশালী।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট জেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মেনেই আমরা এতোদিন ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গেছি। আমি বিশ্বাস করি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সিলেট জেলার মানুষ নৌকা প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত করবেন।

অন্যদিকে সিলেট জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, দেশে কোন গণতন্ত্র নাই। কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও ছিলনা নির্বাচনের মাঠে। তারপরও আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনের মাঠে আছি। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সিলেট জেলার ৬টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিজয়ী হবেন। অআর এরই মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিজয় হবে।

প্রসঙ্গত, সিলেটে ৬টি সংসদীয় আসন ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১৩ উপজেলা, ৪ পৌরসভা ও ১০৫টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৬২৬টি ভোটার এলাকা নিয়ে গঠিত। জেলায় মোট ভোটার ২২ লাখ ৫২ হাজার ২৯৪ জন। এর মধ্যে ১১ লাখ ৫১ হাজার ৬৪৪ পুরুষ এবং ১১ লাখ ৬৫০ জন নারী ভোটার। ৬টি আসনে ৯৯১ কেন্দ্রের ৪ হাজার ৮৬৩ কক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। জেলার ৬টি আসনে কয়েক বছরে ভোটার বেড়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ২৫৫ জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ