বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কাল। গতকাল সকাল ৮টায় প্রচারণার শেষ হলেও বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রার্থীসহ কর্মীদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে গণসংযোগের সময় পুলিশ-ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলায় বিএনপি প্রার্থী নুরুল আমিনসহ ১২ নেতা-কর্মী আহত হয়। পটুয়াখালী-৩ আসনের (গলাচিপা-দশমিনা) বিএনপির প্রার্থী গোলাম মাওলা রনিকে পিটিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। ফরিদগঞ্জে ধানের শীষ প্রার্থীর বাড়িতে ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন ৩০। নোয়াখালী-৩ বেগমগঞ্জ আসনের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সরিষাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশত।
এদিকে, নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে চলছে অভিযান। বিএনপি প্রার্থীদের অভিযোগ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন স্থানে বিএনপির এজেন্টসহ চার শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। যদিও পুলিশের দাবি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হচ্ছে।
মিরসরাইয়ে বিএনপির প্রার্থীসহ আহত ১২
চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে গণসংযোগের সময় পুলিশ-ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলায় বিএনপি প্রার্থী নুরুল আমিনসহ ১২ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। সকালে উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট বাজার ও সদর মা দিঘী এলাকায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগকালে দফায় দফায় এ হামলা চালায় বলে জানান মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী। এবিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ ভূইয়া বলেন, হামলার ঘটনা শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।
হামলায় গোলাম মাওলা রনি আহত
পটুয়াখালী-৩ আসনের (গলাচিপা-দশমিনা) বিএনপির প্রার্থী গোলাম মাওলা রনিকে পিটিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। সন্ধ্যায় গলাচিপায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্র জানায়, নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় ১০/১২ জন দুর্বৃত্ত গোলাম মাওলা রনির ওপর হামলা করে। এ সময় তারা রড ও লাঠিসোটা দিয়ে তাকে পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে রনিকে উদ্ধার করেন। তিনি মাথা ও পিঠে আঘাত পেয়েছেন।
ফরিদগঞ্জে ধানের শীষ প্রার্থীর বাড়িতে ফের হামলা : আহত ৩০
ফরিদগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি হারুনুর রশিদের বাড়িতে ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। হামলার সময় প্রার্থী নিজ বাড়ির ভেতরে অবরুদ্ধ রয়েছেন। বিএনপির নেতারা বলেন, প্রথমে যুবলীগের কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে একদল লোক আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা আত্মরক্ষার্থে প্রতিরোধ করলে তারা পালিয়ে যায়। দ্বিতীয়দফা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা হামলা করা হয়। এ সময় পুলিশ এসে আমাদের নেতা কর্মীদের ওপর চড়াও হয় ও বেধড়ক পেটায়। তাদের সঙ্গে সরকার দলীয় নেতা কর্মীরাও যোগ দেয় সংঘর্ষ চলাকালীন আন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
বেগমগঞ্জে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর
নোয়াখালী-৩ বেগমগঞ্জ আসনের একলাশপুর ইউনিয়নের গাবুয়া বাজারে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা মার্কা প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরনের একটি নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
সরিষাবাড়ীতে আ.লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত অর্ধশত
জামালপুরের সরিষাবাড়ীে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় অন্তত ৩০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষে আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
বগুড়ায় আটক ২০
বগুড়ায় বগুড়া-৫ নির্বাচনী এলাকা(ধুনট-শেরপুর) থেকে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, জামায়াত নেতা দবির উদ্দিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান হারেজসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে শেরপুর থানা পুলিশ। শেরপুর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, নিয়মিত মামলায় ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে বগুড়া ৫ আসনে শিবগঞ্জ উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিএনপির ৪৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার নির্যাতনের ফলে বগুড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা আপাতত পলাতক থাকলেও ভোটের দিনে তারা পালাবে না। সবাই এক যোগে বেরিয়ে এসে কেন্দ্রে ভোট দেবে এবং মানুষকে ভোট দিতে উৎসাহিত করবে। এদিকে, বগুড়া-৩ আসনের গত তিনদিনে ৩০জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে বলে বিএনপির প্রার্থী মাসুদা মোমেন অভিযোগ করেছেন।
সিলেটে আটক ৬৭
গত একরাতে সিলেট থেকে আরও ৬৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এরমধ্যে সিলেট নগরী থেকে ৫৩ জন ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৪ জনকে আটক করা হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনের অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিকার রাতে তাদের আটক করা হয়। পুলিশ বলছে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন মামলার আসামি।
খুলনায় ধানের শীষ প্রার্থীর এজেন্টসহ আটক ২
খুলনা-৩ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি নেতা রাকিবুল ইসলাম বকুলের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শেখ মোশারফ হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া পরোয়ানা থাকায় খুলনা মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান সাগরকে আটক করেছে পুলিশ।
নীলফামারীতে ৩৪ আটক
নীলফামারীর পাঁচ উপজেলা থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাশকতার আশংকার অভিযোগে পুলিশের বিশেষ অভিযানে বিএনপি-জামায়াতের ৩৪নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের গতকাল বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
মুরাদনগরে বিএনপির এজেন্টসহ আটক ৪০
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কেএম মুজিবুল হকের নির্বাচনী এজেন্টদের আটকের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৩ দিনে ওই নির্বাচনী এলাকার দুটি থানার বিভিন্ন গ্রাম থেকে পুলিশ কর্তৃক ৪০ জন এজেন্টকে আটক করা হয়।
ঝিনাইদহে আটক ১৪২ জন
ঝিনাইদহে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলাব্যাপী পুলিশের অভিযানে আটক হয়েছে ১৪২ জন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মী ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীরা। ঝিনাইদহের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস বলেন, অভিযানের অংশ হিসেবে ঝিনাইদহ সদর থানায় ৩৭ জন, হরিণাকুন্ডুতে ৬ জন, শৈলকুপায় ২২ জন. কালীগঞ্জে ১৪ জন, কোটচাঁদপুরে ১৬ জন ও মহেশপুর উপজেলায় ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় ৬টি হাত বোমা ও ২৪০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।
গৌরনদীতে ধানের শীষের প্রার্থীর বাড়িতে অভিযান : আটক ২০
বরিশালের গৌরনদীতে গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এম. জহির উদ্দিন স্বপনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৯ জনকে আটক করা হয়। এছাড়া বরিশালের আগৈলঝাড়ায় নাশকতা মামলায় শাহীন উদ্দিন মিয়া (৪৬) নামের একজনেক গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
চন্দনাইশে কর্নেল অলির পিএসসহ গ্রেফতার ১২
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় কর্নেল অব: অলি আহমদের পিএসসহ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ১২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত দুইদিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
ফেনীতে গ্রেফতার ২৫
ফেনীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফেনী জেলা পুলিশ সুপার কন্ট্রোলরুমের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মোস্তফা জানান, আটকদের মধ্যে রয়েছে ফেনী সদর উপজেলার ১০ জন, ছাগলনাইয়ার পাঁচজন, ফুলগাজীর তিনজন, পরশুরামের তিনজন, দাগনভূঞাঁর দুইজন ও সোনাগাজীর দুইজন। এছাড়া সন্দেহভাজন আরও দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
গাইবান্ধায় আটক ৫১
গাইবান্ধায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে জামায়াতের ২৬ ও বিএনপির ১২ নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মামলায় মোট ৫১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গাইবান্ধা জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের অভিযানে সাঘাটা উপজেলা যুবদলের সভাপতি আহম্মেদ কবির জুয়েলসহ ৮ শিবির কর্মী ও সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪ বিএনপি কর্মীকে আটক করা হয়। এছাড়াও জেলার সুন্দরগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামিসহ আরও ৩৮ জনকে আটক করা হয়েছে।
ছাতকে বিএনপি প্রার্থীর ভাইসহ গ্রেফতার ১৩
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় পুলিশের অভিযানে বিএনপির ১৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, নাশকতার আশঙ্কায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জে আটক ১৫
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপির ২ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের অভিযোগ এনে বৃহষ্পতিবার রাতে এবং সোমবার রাতে পৃথক পৃথক ভাবে দুইটি মামলা দায়ের করে। দুই দিনে দুইটি মামলায় শতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ওই মামলা দুইটি দায়ের করা হয়।
তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা এ মামলাকে সাজানো বলে দাবি করছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ-বিজিপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে ১৫ জন নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।