Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন চোরা শিকার ও বনাভ্যন্তরে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধসহ ৬ দফার সুপারিশ

প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, খুলনা : সুন্দরবনে চোরা শিকারের কারণে বাঘের সংখ্যা কমছে। যে কোনো মূল্যে দ্রæত বাঘ শিকার বন্ধ করতে হবে। শ্যালা নৌ রুট বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বনের ভাঙন ঠেকাতে বনাভ্যন্তরের নদীগুলো দিয়ে উচ্চশক্তির ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হবে। রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ বন থেকে আকাশপথে কমপক্ষে ২৫ কিলোমিটার দূরে স্থাপন করতে হবে। বনের পাশে বসবাসকারী মানুষদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বনবিভাগে দক্ষ, সৎ ও প্রকৃতিপ্রেমী লোকবল বাড়াতে হবে এবং বন ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে সুন্দরবন উন্নয়ন বোর্ড বা উপক‚ল উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করতে হবে। সাম্প্রতিক সমস্যার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বন আইন, নীতিমালা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন সংশোধন করতে হবে। গতকাল শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষায় উপরোক্ত ৬ দফা পরামর্শ দিয়েছে সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন।
সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতা করেন সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলনের আহŸায়ক প্রফেসর আব্দুুল মান্নান। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (সাময়িক বরখাস্ত) মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান চৌধুরী তুষার, সদস্য বেগম সৈয়দা রেহানা ঈসা ও অ্যাডভোকেট শেখ রফিকুজ্জামান প্রমুখ।
প্রফেসর আবদুল মান্নান লিখিত বক্তৃতায় বলেন, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে সুন্দরবন ধ্বংসের মুখে উপনীত। প্রাকৃতিক করণ হিসেবে তিনি উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরন ও আণবিক বর্জ্য উৎক্ষেপণ, ২০০৭ সালের সিডর ও ২০০৯ সালের আইলা নামের ঘূর্ণিঝড়, পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং অব্যাহত ধ্বংসের কারণে বনের গাছপালার কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, মানবসৃষ্ট কারণগুলো হচ্ছে শ্যালা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল। এ রুট দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন আইনে অবৈধ। বনবিভাগ গত ৩ বছরে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডবিøউটিএ’কে বহুবার এ রুট দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধের তাগিদ দিলেও প্রভাবশালীরা নৌযান চলাচল অব্যাহত রেখে বনের পরিবেশ বিপন্ন করছে। সমুদ্রপথে পাচার সহজ হওয়ায় চোরা শিকারীরা বাঘ হত্যা করে চামড়া, হাড় ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আন্তর্জাতিক চড়া দামে বিক্রি করছে। বনে এখন বাঘের সংখ্যা ১০৬। বনে এখন ২০টি দস্যুদল সক্রিয়।
এরা আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের আশ্রয়ে লালিত এবং দেশ-বিদেশের ক্ষমতাবানদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় তাদের দাপট প্রবল। জেলের জালে আটকা পড়ে মরছে কুমির। বনে ৩শত কুমির টিকে আছে। রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বলা হলেও প্রকৃত দূরত্ব সাড়ে ৯ কিলোমিটার। এ প্রকল্প বনের জন্যে ব্যাপক বিপদের কারণ হবে। এছাড়া বন থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে পাথরঘাটায় বলেশ্বর নদীর তীরে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প স্থাপন করে ইউরোপের আর্বজনা ফেলার ভাগাড় তৈরি হচ্ছে এবং জয়মনির ঘোলে স্থাপিত হচ্ছে শিপইয়ার্ড। বনের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদী প্রাকৃতিকভাবে ভরাট হয়ে গেছে। এখন সেখান দিয়ে বনজীবীরা অহরহ বনে ঢুকে অগ্নিকান্ড ঘটানোসহ বনের বিভিন্নরকম ক্ষতি করছে।
এভাবে সুন্দরবনকে ঘিরে উন্নয়নের নামে অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে বনকে ধ্বংসের চরম পর্যায়ে নেয়া হচ্ছে। তিনি সুন্দরবন, পরিবেশ ও দেশ বাঁচাতে সরকার এবং সংশ্লি­ষ্ট সকলের ভ‚মিকা গ্রহণের আহŸান জানান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ