নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিজয়ের মাসের শেষ দিকে এসে দেশের বীর ফুটবলার মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। গতকাল দুপুরে বাফুফে ভবনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়। কিন্তু সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দাওয়াতই পাননি দলের অধিনায়ক সাবেক তারকা ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু। তাই তিনি আসেননি। অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি দলের সহকারী অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরাকেও। এ প্রসঙ্গে জাকারিয়া পিন্টু বলেন, ‘আমাকে দাওয়াতই দেয়নি বাফুফে। তাছাড়া আমি অসুস্থ। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে বাফুফে সংবর্ধনা দেবে খবরটি অন্যজনের কাছে শুনতে হয়েছে আমাকে। শুধু আমিই নই, দাওয়াত পাননি দলের সহকারী অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরাও। তাই আমরা যাইনি। অধিনায়ক ও সহকারী অধিনায়ক ছাড়া দলকে কিভাবে সংবর্ধনা দেয়া হয় আমি বুঝিনা। যতটুকু জেনেছি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ৩৬ জন সদস্যের মধ্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১২/১৩ জন।’
কাল বাফুফে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দেয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক সাঈদুর রহমান প্যাটেল, সদস্য ও বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সদস্য আজম, তসলিম, শেখ আশরাফ আলী, আবদুস সাত্তার, খসরু, বীরু, সুভাষ, নওশের, আবদুল হাকিম, মোজাম্মেল, আবুল কাশেম, পৃষ্ঠপোষক তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক, বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ, সদস্য শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর ও অমিত খান শুভ্র। অনুষ্ঠান শেষে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের উপস্থিত সদস্যদের একটি করে ব্লেজার ও ১০ হাজার টাকা করে সম্মানী দেয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না বলেন,‘দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠনের জন্য খেলেছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। অথচ ইতিহাসের পাতায় তেমন ঠাই হয়নি আমাদের। তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল সম্পর্কে কি জানবে?’
তিনি আরো বলেন, ‘৪৭ বছর আগের কথা। তখন আমার বয়স ছিল ২০ বছর। কোলকাতার বালুঘাটে পিন্টু ভাই (স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন সাহেবের একটি চিঠি আমার কাছে নিয়ে আসেন। এসেই বলেন, তাজউদ্দিন সাহেব বলেছেন তোমাকে ম্যানেজার করে একটি দল গঠন করতে হবে। তখন আমি পিন্টু ভাইয়ের সঙ্গে গেলাম। গিয়ে দেখি অনেকজন সেখানে দাঁড়িয়ে। তারপর ধীরে ধীরে তৎকালীন তারকা ফুটবলারদের জড়ো করতে শুরু করলাম। দল গঠন করলাম। আমাদেরকে ১৪ হাজার রুপি দেয়া হলো। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় খেললাম।’
তান্না আফসোস করে বলেন, ‘আমাদের দলের অনেকেই আজ নেই। অনেকেই রোগে শোকে ভুগছেন। অথচ জীবন বাজি রেখে দেশের বাইরে খেলা এই মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাসের পাতায় তেমন ঠাই হয়নি। উদ্যোগ গ্রহন করা না হলে, হয়তো একদিন সবাই চলে যাবো। কেউই আর আমাদের মনে রাখবে না। স্বাধীন বাংলা দলের সদস্যদের মাত্র তিন হাজার টাকা করে দেয়া হয়। এতে কি হয়, তা আমার জানা নেই।’
দলের সংগঠক সাঈদুর রহমান প্যাটেল বলেন, ‘ঢাকা থেকে, মুন্সিগঞ্জ। সেখান থেকে কোলকাতায়। এরপর অমৃত বস্ত্রালয়ের মালিক সুবোধ সাহার বাড়িতে আত্মগোপন। বালিগঞ্জের দেশপ্রিয় পার্কে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনের প্রক্রিয়া- কত কিছুইতো করেছি। কিন্তু কতটুকু পেয়েছেন এই দলের সদস্যরা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে খেলে আমরা ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলাম আগরতলায় তৎকালীন সরকারের ফান্ডে। অথচ এখন অনেকেই বলে থাকেন আমরা নাকি মাত্র পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। এটা ঠিক নয়। ইতিহাস কেউ মুছতে পারবে না। আমাদেরকেও রাখা হোক ইতিহাসের পাতায়।’
যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের কথা, ‘আমি বেশ ক’বার জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথা বলেছিলাম। আরো কিছু সময় রয়েছি। এর মধ্যে সালাউদ্দিন ভাই ও তান্না ভাই আমার সঙ্গে গেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারি। তাহলে হয়তো কাজ হবে।
বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘এদেশের স্বাধীনতায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অবদান নেহায়েত কম নয়। তাই সবাইকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। দেশ স্বাধীন হওয়ায় আজ আমি বাফুফের সভাপতি হতে পেরেছি। তিনবার দক্ষিণ এশিয়ার সাত দেশের ফুটবল সংস্থার সভাপতি পদে আসীন হয়েছি।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমার মনে পড়ে মুম্বাইতে আমরা খেলতে গেলে নবাব পাতৌদি পরিবার আমাদের সম্মান জানিয়েছিল। সেখানে নায়ক দিলীপ কুমার এবং নায়িকা ও পাতৌদি পরিবারের বধু শর্মীলা ঠাকুরও আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। মাটিতে শুয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। অনেক কষ্ট করেছি আমরা। তাই ইতিহাসের পাতায় আমাদের ঠাই হওয়া প্রয়োজন। আগামী প্রজন্মকে জানতে হবে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল কি ছিল। কারা করেছে। কারা খেলেছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।