বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের দৃশ্যপটও বদলাচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন ঠিকমতো ধানের শীষের পোস্টার লাগানো ও প্রচারণা চালাতে পারছেন না তখন একের পর এক নতুন মামলা দিচ্ছে পুলিশ। স্থানীয় বিএনপির অভিযোগ- ইতিমধ্যে অনেককে ভোটের আগেই এলাকা ছাড়তে ওসি নির্দেশ দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানির পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করতেই এসব মামলা ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় ভোটারদের নিরাপত্তা বিশেষ করে নারী ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি বলে বিএনপির দাবি। গতকাল সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর মাত্র এক সপ্তাহে (১৯-২৫ ডিসেম্বর) নতুন করে ৮ টি মামলা দায়ের করেছে মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানা পুলিশ। আগের দুই মাসে মোট ১৮ টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শত শত লোককে আসামি করা হয়েছে। অনেকের বাড়িতে তল্লাশি ও ভাঙচুর চালিয়েছে পুলিশ। ১৪ ডিসেম্বর প্রচারণার দিন থানার সামনে ক্ষমতাসীনদের হামলার শিকার হন ধানের শীষের প্রার্থী কেএম মুজিবুল হক ও তার লোকজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ মুরাদনগরের মানুষ। তারা পুলিশের কাছে সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন। গতকাল মুরাদনগরের ছলিয়াকান্দি বাজার, নেয়ামতকান্দি, বোড়ারচর, জাহাপুর ইউনিয়ন, বাখরাবাদ বাজার এলাকায় ঘুরে স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানান, মিথ্যা মামলা দায়েরের ফলে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে মুরাদনগর থানার ওসি একেএম মনজুর আলমকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানা যায়, কুমিল্লা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জুন্নুন বসরি গতকাল তার নির্বাচনী এলাকা দক্ষিণ মুরাদনগরের বাপটিপাড়া ইউনিয়নে গণসংযোগে যান। হঠাৎ করেই পুলিশ তিন-চারজনকে আটক করে। প্রার্থী হিসেবে বিষয়টি তিনি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করার কথা ভাবছিলেন। এমন সময় আটককৃতদেরকে পুলিশ সিএনজিতে তুলে চলে যেতে চাইলে একজন ব্যক্তির মা এগিয়ে আসেন। কিন্তু তার ওপর দিয়ে সিএনজি চালিয়ে দেয়া হয়। এতে মহিলা গুরুতর আহত হন। পরে তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এমনকি ১৭ নং জাহাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ তৌফিক আহমেদের বাড়িতে গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে বাসার বিভিন্ন আসবাবপত্র ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। এঘটনায় মানুষের মাঝে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানান কুমিল্লা-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী কেএম মুজিবুল হক।
মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানার ওসিদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কেএম মুজিবুল হক। গত সোমবার সিইসিকে দেয়া চিঠিতে তিনি বলেন, মুরাদনগরে পুলিশের কারণে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ প্রশাসন সরাসরি নৌকা প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ধানের শীষের নেতা-কর্মী ও ভোটারদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশীর মাধ্যমে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ জনের বেশি জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১১ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ক্ষমতাসীনদের ক্যাডার বাহিনী মারধরের পর পুলিশে দিয়েছে। পাহাড়পুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল শিকদারকে রাতের আধারে পুলিশ গ্রেফতার করে। ১০টি ককটেল পাওয়ার অভিযোগে কাল্পনিক মামলা করা হয়েছে। তাই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের সার্থে উক্ত দুই থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানাই।
গতকাল দুপুরে মুরাদনগরে তার বাড়িতে আলাপকালে কে এম মুজিবুল হক বলেন, মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানার ওসিদ্বয় আওয়ামী লীগের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। উভয় থানা যেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। দুই থানার ওসি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মাঝে বিতরণ করে। এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে নতুন নতুন মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হানা দিচ্ছে পুলিশ। নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ নিরীহ মানুষকেও তারা গ্রেফতার করছে। অনেকের পরিবারের সদস্যদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের আগ মুহুতে দেশের ইতিহাসে কি কখনো মামলা হয়েছে? লোকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে? নেতাকর্মীরা আমার বাসায় আসতে পারছেনা। পুলিশ তো বৃদ্ধ-অসুস্থ কিছুই তোয়াক্কা করছেনা। আমাদেরকে পোস্টার লাগাতে বাধা দেয়া হয়েছে। বহু এলাকায় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে, প্রচারণার সময় মোটর সাইকেল ভাঙচুর করেছে। এমনকি যেসব প্রবাসী ভোট দিতে দেশে এসেছেন তাদেরকে দেশ ছাড়ার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করছে পুলিশ। অনেককে গ্রেফতার ও নির্যাতনও করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পতাকার বাহক সেনবাহিনী। তারা একটু ভূমিকা রাখলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়ক হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।