বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কুরআন মাজীদ অত্যন্ত প্রবল ও বিস্তারিতভাবে এ বিষয়টিও বাতলে দিতে এবং অন্তরে এ প্রত্যয় সৃষ্টি করতে চাইছে যে, সমগ্র জগতের সৃষ্টি এবং নাস্তি থেকে অস্তিত্ব দানও আল্লাহ তায়ালাই করেছেন। তিনি এই জগৎ-সংসারের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা কারও শরিকানা ব্যতিরেকে চালিয়ে যাচ্ছেন।
জীবন ও রিজিক প্রভৃতি জীবনের যাবতীয় উপায়-উপকরণ যে যা পাচ্ছে, তা আল্লাহ তায়ালাই সরবরাহ করছেন। তাকে ছাড়া কারো হাতে না আছে জীবন, না আছে জীবনোপকরণ। বরং তিনিই যাকে যতক্ষণ যে পরিমাণ দিতে চান, দেন। আর যাকে দিতে চান না, দেন না। কুরআনের অনেকটা অংশ এ সম্পর্কিত আলোচনায় পূর্ণ। এখানে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াত দেখে নেয়া যেতে পারে। সূরা আ’রাফে বলা হয়েছে, ‘শুনে নাও, সৃষ্টি করা এবং নির্দেশ প্রদান করা তারই কর্ম। আল্লাহ কল্যাণময়, যিনি পালনকর্তা সমগ্র সৃষ্টির।’ (সূরা আ’রাফ : আয়াত ৫৪)। সূরা যুমারে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহই যাবতীয় বস্তুসামগ্রীর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই যাবতীয় বিষয়ের দায়িত্বশীল। নভোমন্ডল ও ভু-মন্ডলের (সমস্ত ভান্ডার ও তার) চাবি তারই হাতে।’ (সূরা যুমার : আয়াত ৬২-৬৩)।
সূরা রূমে মুশরিকদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তোমাদের রিজিকদাতা। তারপর (সময়মত) তিনিই তোমাদেরকে মৃত্যু দান করবেন এবং অতঃপর তিনিই তোমাদের পুনরুত্থিত করবেন। তোমাদের সেসব অংশীদারদের মাঝে (যাদেরকে তোমরা ইবাদত-উপাসনায় আল্লাহ তায়ালার শরিক করছ) কেউ আছে কি, যে এসব কাজের কোনোটি সম্পাদন করবে? সে আল্লাহ পবিত্র এবং তাদের শিরক ও শরিকদের ঊর্ধ্বে।’ (সূরা রূম : আয়াত ৪০)।
সূরা শূরায় ইরশাদ হয়েছে, ‘ সে আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। তিনিই তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য এবং চতুষ্পদদের মাঝেও জোড়া সৃষ্টি করেছেন। তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং বর্ধিত করেছেন। তার কোনা তুলনা নেই। তিনি শ্রবণকারী ও দর্শনকারী (সবসময় সবার কথা শোনেন এবং দেখেন)। আকাশ ও পৃথিবীর (যাবতীয় ভান্ডার ও তার) চাবি তারই হাতে রয়েছে। তিনি যাকে ইচ্ছা জীবিকার প্রশস্ততা দান করেন। আর যাকে ইচ্ছা সঙ্কীর্ণতায় নিপতিত করেন। নিঃসন্দেহে তিনি সবকিছু সম্যক অবগত।’ (সূরা শূরা : আয়াত ১১-১২)।
সূরা ইবরাহীমে বলা হয়েছে : ‘আল্লাহ তিনিই যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশ ও পৃথিবী এবং পানি অবতীর্ণ করেছেন আকাশ থেকে। তারপর তার মাধ্যমে তোমাদের জীবিকাস্বরূপ দান করেছেন খাদ্যশস্য ও ফলমূল। আর তোমাদের আয়ত্বে এনে দিয়েছেন জলযানসমূহকে যাতে সেগুলো তার নির্দেশক্রমে (তোমাদের কাজে) সাগর বক্ষে চলমান থাকে। তিনি তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন নদী-নালাকে (যাতে তোমরা নিজেদের নৌকা ভাসিয়ে থাক এবং তার পানিতে নিজেদের বিবিধ কাজ সম্পন্ন করো)। আর তিনি তোমাদের কাজে নিয়োগ করেছেন দিবস ও রজনীকে। (অর্থাৎ, তিনি দিন ও রাতের ব্যবস্থাপনাকে এমনিভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যেমন তোমাদের চাহিদা ও কল্যাণের দাবি।
তা ছাড়া তোমাদের কল্যাণের এসব সামগ্রীই শুধু তিনি তৈরি করেননি, বরং এগুলো ছাড়াও তোমাদের জীবনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন ছিল) এবং অবস্থা ও ভাষার মাধ্যমে যা কিছু তোমরা তার কাছে চেয়েছ, তিনি তোমাদের তা দান করেছেন। আর (আল্লাহ তায়ালার সেই দয়া ও অনুকম্পার মাধ্যমে তোমাদের জীবনের ব্যবস্থাপনা সচল রয়েছে। উপরন্তু তোমাদের প্রতি তার আশীর্বাদ এত বিপুল যে,) যদি তোমরা সেগুলো গণনা করতে চাও, তবে তা শেষ করতে পারবে না। বলতে গেলে মানুষ হল, নিতান্ত অবিচারী ও অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা ইবরাহীম : আয়াত ৩২-৩৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।