Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কয়রার বাঘ বিধবাদের অন্ধকার থেকে ফেরাতে চেষ্টা করছে আইসিডি

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফেরেন না। ঝড়ের ঝাপটায় কিংবা দস্যুদের কবলে পড়ে ও বাঘের আক্রমণে দিতে হয় প্রাণ। দিনের পর দিন মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও স্বজনেরা জানতে পারেন না নিখোঁজ জেলের সন্ধান। পরে হয়তো জানতে পারে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছে। এভাবেই নিঃস্ব জেলে পরিবারটি পথে বসে যায়। সংসারের পুরো বোঝা এসে পড়ে অসহায় দিশেহারা জেলে-বধূর দুর্বল কাঁধে। আর বাঘের ধরা সেই সমস্ত পরিবারের সদস্যরা মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিনতিপাত করে থাকে। সম্প্রতি আইসিডি বাঘ বিধবাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসায় কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে বাঘে ধরা পরিবারের সদস্যরা।
কয়রা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জেলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নানান তথ্য মেলে। সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হারিয়ে যাওয়া জেলের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। প্রিয় স্বজনের লাশ পাওয়া তো দূরের কথা, খবরটি পর্যন্ত পাওয়াও অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে। অনেক সময় জানতে পারে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। আর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এই জেলে পরিবারগুলোর জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। পারিবারিক স্থিতি-স্বস্তি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। বিধবা জেলেবধূ কখনো শ্বশুরের সংসারে বোঝা, আবার কখনো বাবার বাড়ি গিয়ে বাবার সংসারে ঝামেলা। অনেকে আবার জীবিকার কোনো পথ না পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। অতিকষ্টে ধার-দেনা করে, কিংবা আশাপাশের স্বচ্ছল পরিবারের কাছে চেয়েচিন্তে কোনোমতে বেঁচে থাকতে হয় এদের।
কয়রা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ৫নং কয়রা গ্রাম। স্বামী হারিয়ে বিধবা এই গ্রামের মঞ্জুয়ারা (৪০)। তার স্বামী কালাম শিকারি বাঘের আক্রমণে মারা গেছে। রেখে গেছেন ১ ছেলে ১ মেয়ে। স্বামীর মুত্যুর পর মঞ্জুয়ারা থেকে গেছেন পিতার সংসারে। সেই থেকে তার জীবনে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা। স্বামী হারানোর পর জীবনের পুরো পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে যাওয়ার গল্প জানাচ্ছিলেন তিনি। শুধু মঞ্জুয়ারা নয় এ রকম অনেক পরিবার এ গ্রামে বাঘ বিধবা হয়ে অতিকষ্টে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে জীবন জাপন করছে। আর সেই দিকটা বিবেচনা করে ইনিশিয়েটিভ ফর কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট (আইসিডি) কয়রা উপজেলার ৩০ জন বাঘ-বিধবা সদস্যদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছে। আর তারা এ ধরনের মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করায় এলাকবাসী তাদেরকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
আইসিডির প্রতিষ্ঠাতা মো. আশিকুজ্জামান বলেন, বাঘে ধরা পবিবারের সদস্যরা যে মানবেতর জীবন যাপন করে সেই দিকটে লক্ষ্য করে আইসিডির পক্ষ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ জন বাঘ বিধবা সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণ শেষে বিনামুল্যে সেলাই মেশিন দেয়া হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও ২০ জন বাঘ-বিধবা সদস্যদের মাঝে দর্জি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে বিনামুল্যে সেলাই মেশিন প্রদান করা হবে। শুধু সেলাই মেশিন নয় তাদের ভালভাবে জীবন যাপন করার জন্য ৫ হাজার টাকার ছিট কাপড় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, আইসিডির সহযোগিতায় বাঘে ধরা পরিবারের সদস্যরা নিজে উপার্জন করে সংসারে স্বচলতা ফিরিয়ে আনতে পারবে। সুন্দরবন কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ হাওলাদার বলেন, বাঘের আক্রমণে নিহত পরিবারের সদস্যরা অতি কষ্টে জীবন যাপন করে থাকে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে বাঘে ধরা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। তবে আইসিডির মতো আরও অনেক সংগঠন তাদেরকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কয়রার বাঘ বিধবাদের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ