Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলাম প্রচারে অন্তর আকৃষ্ট করা ও বুদ্ধিদীপ্ত আহবানের গুরুত্ব

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

অন্তর আকৃষ্ট করা : তাবলীগ ও দাওয়াতের ক্ষেত্রে ইসলাম আরো একটি তরীকাও পেশ করেছে। যাকে ‘অন্তর আকৃষ্ট করা’ নামে অভিহিত করা হয়। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘এবং তাদের প্রতি আকৃষ্ট লোকজন।’ (সূরা তাওবাহ : রুকু ৮)। এর অর্থ হচ্ছে, অন্তরকে সম্পৃক্ত করা। আর এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তিকে ইসলামের প্রতি অনুপ্রাণিত করতে হবে, তাকে স্নেহ, ভালোবাসা, সাহায্য, সহানুভ‚তি এবং সহৃদয়তা প্রদর্শন করা। কেননা মানুষ স্বভাবতই এই শিষ্টাচারপূর্ণ অনুপ্রেরণার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এতে করে হীনম্মন্যতা, বিরুদ্ববাদিতা এবং প্রতিহিংসার ধারণা দূরীভ‚ত হয়ে যায়। মনে-প্রাণে সত্য গ্রহণের যোগ্যতা সহজভাবে অর্জিত হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বহু লোককে অবিস্মরণীয় মাধুরীর দ্বারা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করার পথ পরিষ্কার করে তুলেছিলেন। মক্কার অধিকাংশ সর্দার এই প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। যার ফলে সত্যের বিরুদ্ধে তাদের গর্দানসসূহ কখনো উঁচু হতে পারেনি। সাফওয়ান (রা.) এককালে ইসলামের ঘোর দুশমন এবং রাসূলুল্লাহর প্রতি অপ্রতিরোধ্য শত্রুতা পোষণ করতেন। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে প্রচুর পরিমাণে দান করলেন এবং আমার মাঝে তার প্রতি বিদ্বেষ ভাব ছিল। কিন্তু তার এই ইহসান আমাকে প্রভাবিত করল। এখন আমার দৃষ্টিতে তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো লোক নেই।’ (সহিহ মুসলিম : দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-২৯)।
একবার একজন বেদুঈন এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলল, এই দুটো পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকায় যে ছাগল রয়েছে তা আমাকে দান করুন। রাসূলুল্লাহ (সা.) সবগুলো তাকে দিয়ে দিলেন। এই বদান্যতার প্রভাব তার মাঝে এতখানি বিস্তার লাভ করেছিল যে, সে নিজের গোত্রে প্রত্যাবর্তন করে চিৎকার করে বলতে লাগল, ভাই সকল, তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। মুহাম্মদ (সা.) এমন মুক্ত হস্তে দান করেন যে, তিনি নিজের অভাব ও প্রয়োজনের কথাও মনে রাখেন না। (সহিহ মুসলিম : দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-২৯)।
জনৈক ইহুদির একটি ছেলে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমত করত। সে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার খোঁজখবর জানার জন্য গমন করলেন এবং তার শিয়রের পাশে বসে স্নেহমাখা কণ্ঠে বললেন, ‘তুমি ইসলাম গ্রহণ করো’। ছেলেটি জিজ্ঞাসু নেত্রে তার পিতার দিকে চাইল। তার পিতা বলল, প্রিয়, তুমি আবুল কাসেমের (সা.) কথা মেনে নাও। সুতরাং ছেলেটি মুসলমান হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (সা.) গাত্রোত্থান করার সময় বললেন, ‘সেই আল্লাহরই জন্য সমুদয় প্রশংসা, যিনি এই ছেলেটিকে দোজখ হতে নিষ্কৃতি দান করেছেন।’ (সহিহ বুখারি : কিতাবুল জানায়েজ)।
বুদ্ধিদীপ্ত আহবানের : ইসলাম দাওয়াত ও তাবলীগের যে সকল নিয়ম-নীতি উপস্থাপন করেছে, এর অবশ্যম্ভাবী ফল এই হচ্ছে যে, তা একটি দলীলভিত্তিক এবং বৃদ্ধিদীপ্ত ধর্ম। এগুলো ছাড়া হেকম ও বুদ্ধিমত্তা এবং ওয়াজ ও নসিহত এবং তর্ক-বিতর্কের বুনিয়াদ কায়েম থাকতে পারে না। এ কারণে পৃথিবীর যাবতীয় ধর্মের ইতিহাসে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ঐশী আহবানের এমন ধ্বনি উচ্চকিত করেন যা তৌরিতের বিজ্ঞানধর্মী নিয়ম-নীতি এবং পরিবর্তিত ইঞ্জিলের বাকরীতি এবং বৈদিক যুগের রাজা-বাদশাহদের কাহিনীর পরিবর্তে মানবিক বুদ্ধিমত্তাকে খেতাব করে ইসলামকে উপস্থাপন করেছেন, তিনি চিন্তা ও গবেষণার আহবান জানিয়েছেন।
বুদ্ধিমত্তা ও মনীষাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, এবং তিনি স্বীয় তা’লীমের সৌন্দর্য ও উপযোগিতাকে বিজ্ঞানমনষ্ক মনোবৃত্তি এবং বিরুদ্ধবাদীদের আল্লাহর নিদর্শনাবলির ওপর চিন্তা ও গবেষণা করার পথ নির্দেশনা দান করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, (ক) ‘বলে দাও, যদি তোমাদের কাছে কোনো বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞানবত্তা থাকে তাহলে তা আমার সামনে প্রকাশ করো। তোমরা কেবল ধারণার পেছনেই পড়ে আছ এবং অনুমানের ওপর কাজ করছ। তাদেরকে এ কথাও বলে দাও যে, সর্বোৎকৃষ্ট প্রোজ্জ্বল দলীল কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য।’ (সূরা আনয়াম : রুকু ১৮)। (খ) ‘এতে করে যে ধ্বংস হওয়ার সে যেন দলিল মূলে ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকে সে যেন প্রমাণসহ জীবিত থাকে, অবশ্যই আল্লাহপাক সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা।’ (সূরা আনফাল : রুকু ৫)। (গ) তিনি হীনম্মন্য কাফিরদের সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন, ‘নভোমন্ডল এবং ভূ-মন্ডলের মাঝে আল্লাহর একত্বের যথেষ্ট নিদর্শ রয়েছে। যেগুলোর সামনে দিয়ে তারা গমনাগমন করছে। কিন্তু তারা এগুলোর ওপর চিন্তা ও গবেষণা করছে না।’ (সূরা ইউনুস : রুকু ১২)।
শুধু কেবল এতেই শেষ নয়, বরং আল্লাহর অস্তিত্ব, তাওহিদ ও রিসালত, কিয়ামত, শাস্তি ও পুরস্কার, ইবাদত, নামাজ ও রোজা, জাকাত, হজ এবং আখলাক ইত্যাদির তা’লীম প্রদানকালে কুরআনুল কারীমের সত্যতাত বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণাদি পেশ করেছে এবং প্রতিটি সমস্যার হেকমত ও মুসলিহাত সরাসরি প্রকাশ করেছে।



 

Show all comments
  • Mir Sabbir Al Mahmud ২ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:০৪ এএম says : 0
    Nice Article.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন