Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে বিরোধী নেতাকর্মী শূন্য ভোটের মাঠ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

দক্ষিণাঞ্চলের ভোটের মাঠ বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী শূন্য হবার মধ্যে বিজিবির নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। আগামীকাল সেনাবাহিনী মাঠে নামার অপেক্ষায় ঐক্যফ্রন্টসহ মহাজোটের বাইরের প্রার্থীসহ সাধারণ মানুষও। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল থেকে গত এক সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলের ভোটের চালচিত্রের পরিবর্তনকে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিপরীত বলে মন্তব্য করেছেন। সেনাবাহনী দায়িত্ব পালন শুরু করার পরে বিরোধী দলীয় প্রার্থীসহ নেতা-কর্মীদের মধ্যে অবাধ নির্বাচনী কোন আস্থা সৃষ্টি হয় কিনা তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন মহলটি। গত তিনদিনে দক্ষিণাঞ্চলে গণগ্রফতারি তৎপরতা জোরদার করার ফলে ঐক্যফ্রন্টসহ মহাজোটের বাইরের বেশীরভাগ প্রার্থীর পক্ষেই প্রচারণা অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে। এমনকি প্রার্থীদের পক্ষে বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভোটার নম্বরসহ কেন্দ্রের নাম সম্বলিত তালিকা পৌঁছে দেয়ার মত কর্মীও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বরিশাল সদরসহ অনেক নির্বাচনী এলাকাতেই।এ অবস্থায় মহাজোটের বাইরে আর কোন প্রার্থী বুথগুলোতে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবে কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে একাধিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রæপের মধ্যেও।
গত বুধবার নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বরিশাল সফরকালে বিভাগের ৬ জেলার রির্টানিং অফিসারসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে সভা করেছেন। তিনি সভার প্রারম্ভে প্রকাশ্য ভাষণে ‘একটি অবাধ নিরপক্ষে নির্বাচনী পারিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব কিছু করার’ নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে সাধারণ মানুষ হ বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীরা যতটা আশ্বস্ত হয়েছিলেন, তা অতি দ্রæতই বদলে গেছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ২১টি নির্বাচনী এলাকা থেকে বিরোধী দলের অন্তত দেড়শ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এদের অনেককেই বিশেষ ক্ষমতা আইনে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠান হয়েছে। বাকিদের গায়েবি নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখান হয়েছে।
এ অবস্থায় বরিশাল-১ সহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি নির্বাচনী এলাকাই বিরোধী দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী শূন্য হয়ে পড়েছে। বরিশাল-১ আসনে একাধিকবারের বিজয়ী মহাজোটে প্রার্থী সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এলাকায় নির্বিঘেœ প্রচারণায় রয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের প্রচারণায় তার পরিস্থিতি ইতিবাচক হলেও ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জহিরুদ্দিন স্বপন প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না বলে স্স্পুষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার ১৯৯১ সাল থেকে নির্বাচনগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ২০০১-এর নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রায় ১৮ হাজার ভোটে পরাজিত হন এখানে। তবে ফৌজদারী মামলায় দন্ডিত ও পলাতক থাকার কারণে ২০০৮-এর নির্বাচনে তিনি অংশ না নিলেও জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস প্রায় ১৭ হাজার ভোটে বিজয়ী হন বরিশাল-১ আসনে।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বিজয়ী হন এ আসনে। ’৯৬-এর নির্বাচনেও আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ভোট আড়াই হাজারেরও বেশী হ্রাস পেয়ে ৫২ হাজার ২৪১ হলেও তিনি বিজয়ী হন। দুটি নির্বাচনেই জামাত ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল প্রায় ১০ হাজার করে ভোট লাভ করে জামানত হারায়।
তবে ২০০১-এর নির্বাচনে বিএনপিসহ ৪ দলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে জহিরুদ্দিন স্বপন ৮১ হাজার ৭৯১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। ঐ নির্বাচনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রথমবারের মত হেরে যান। ২০০৮-র নির্বাচনে দল থেকে বহিস্কৃত জহিরুদ্দিন স্বপন সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও এলাকায় আসেন নি। তার পরিবর্তে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান বিএনপি প্রার্থী হলেও প্রায় ৭১ হাজার ভোট পেয়েও ১৮ হাজারের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার ইউনুসের কাছে হেরে যান। ২০১৪-এর একতরফা নির্বাচনে বরিশাল জেলার ৬টি আসনের মধ্যে ৫ টিতেই কোন ভোট প্রয়োজন হয়নি। বরিশাল-১ আসনেও আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি উচ্চ আদালতে আপীল করে বেকসুর খালাস সহ অন্য মামলা প্রত্যাহার হওয়ায় আর কোন আইনগত সমস্যা ছিলনা।
এবারো বরিশাল-১ আসনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মূল প্রতিদ্ব›দ্বী দশ বছর পরে বিএনপিতে ফেরা জহিরুদ্দিন স্বপন। তবে এ নির্বাচনী এলাকায় ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। যা বিজয়ী প্রার্থীকে আগামীতে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্য়বেক্ষক মহল। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মত বরিশাল-১ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও সমর্থকগণসহ অনেক সাধারণ ভোটারও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনী সহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর নিরপেক্ষ তৎপড়তার প্রতিক্ষায় রয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ