বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণার আর মাত্র ছয়দিন বাকি থাকলেও এখনো বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হামলা ও গণহারে গ্রেফতারের কোনো কমতি নেই। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নেতাকর্মী-সমর্থক ছাড়াও রয়েছেন প্রার্থী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এমতাবস্থায় দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই বিরাজ করছে এক ভীতিকর অবস্থা। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন জানিয়েও কাজ হচ্ছে না। গতকাল শনিবার সারা দেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী গ্রেফতার, হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও বড় দুদলের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনাও ঘটেছে। নোয়াখালীর সূবর্ণচর উপজেলায় বিএনপির ১৬ জন নেতাকর্মী আটক করা হয়েছে। বরিশালে ভেঙে দেয়া হয়েছে উঠান বৈঠক । শিবপুর ও বেলাবতে ধানের শীষের ক্যাম্প ও গণসংযোগে হামলা করা হয়েছে। এতে শিশু গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩৫ কর্মী। হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ধানের শীষের প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। শিবপুরে নির্বাচনী ক্যাম্পের প্রচার কাজে ব্যবহৃত ১০টি গাড়ী ও কর্মী-সমর্থকদের ১৮টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে।’নান্দাইলে গ্রেফতারের ভয়ে নেতা কর্মীরা এলাকা ছাড়া হয়েছে। মাদারীপুরে বিএনপি’র প্রার্থীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। ফরিদপুরে বিএনপি সমর্থিত ৫টি বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। মুরাদনগরে দু’দিনে ৪ মামলায় বিএনপির ১৬১ জন আসামি করা হয়েছে। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বিএনপির ক্যাম্প অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। বামনায় বিএনপির ৩ নেতা গ্রেফতার আটোয়ারীতে নৌকার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা, হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বরিশালে ভেঙে দেয়া হয়েছে উঠান বৈঠক
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন বাজারে উঠান বৈঠকের মঞ্চ ভেঙে ফেলে সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে চন্দ্রমোহন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. তুহিনকে। গতকাল (শনিবার) বিকাল ৪টায় চন্দ্রমোহন বাজারে বরিশাল সদর বিএনপি দলীয় প্রার্থী মুজিবুর রহমান সারোয়ার উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি সভাস্থলে পৌঁছানোর আগেই এসব ঘটনা ঘটে। একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনার আতংকে বরিশালে ঐক্য ফ্রন্ট প্রার্থীর প্রচারণা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন জানান, বিকাল ৩টার দিকে নৌকা প্রতীকের স্থানীয় কর্মীও পুলিশ চন্দ্রমোহন বাজারে যায়। এসময় মহাজোট কর্মীরা বিএনপির উঠান বৈঠকের মঞ্চ ভাংচুর করে এবং আগত ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থকদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।
সারোয়ারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও নগর বিএনপির সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জানান, প্রার্থী সারোয়ার উঠান বৈঠকে অংশ নিতে বিকাল ৩টার দিকে চন্দ্রমোহনের উদ্দেশ্যে রওনা হলে কালাবদর নদী পাড়ি দেওয়ার সময়ে ফেরী ও খেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে সরোয়ার চন্দ্রমোহন যেতে ব্যর্থ হন।
তিনি আরো জানান, গতকালও বরিশাল নগরীতে ধানের শীষ প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের ধরপাকর অব্যাহত ছিল। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আরো অন্তত ১০ জন সহ গত কয়েকদিনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রায় ৮০ কর্মীকে বিনা গ্রেফতারি পরোয়ানায় বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য এখন আর বিএনপির নেতা কর্মীরা মাঠে নামতে চাইছেন না। এছাড়া বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ সহ বিভিন্ন উপজেলায় ধানের শীষ প্রতীকের কর্মীদের গ্রেফতার করার খবর পাওয়া গেছে।
সূবর্ণচর উপজেলায় বিএনপির ১৬ জন নেতাকর্মী আটক
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, সূবর্ণচর উপজেলার খাসেরহাট থেকে পুলিশ বিএনপির ১৬ জন নেতাকর্মীকে আটক করে। এদের মধ্যে সূবর্ণচর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি এডভোকেট এবিএম জাকারিয়া, বিএনপি কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব আলমগীর আলো, জেলা ছাত্রদল সভাপতি আজগর উদ্দিন দুখু, সূবর্ণচর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী ও থানা কৃষকদল সভাপতি হেলাল রয়েছেন।
বিএনপি কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী-৪ আসনের প্রার্থী আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহজাহান অভিযোগ করেন যে, দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ভূঁইয়ারহাটে ধানেরশীষের শান্তিপূর্ণ প্রচারণা বহরে নৌকা মার্কার সমর্থকরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। এরপর দুপুরে বিএনপি নেতাকর্মীরা খাসেরহাটস্থ এডভোকেট জাকারিয়া বাড়িতে দুপুরের খাবার খেতে গেলে পুলিশ বিনা উস্কানীতে ১রাউন্ড গুলী ও ২টি সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এতে ঘটনাস্থলে ৮/১০ জন নেতাকর্মীআহত হওয়া ছাড়াও পুলিশ ১৬ জনকে আটক করে। তিনি বলেন. ঘটনার সময় আমি পাশ্ববর্তী মসজিদে জোহরের নামাজরত ছিলাম। পরে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অনেকে প্রাণরক্ষার্থে পালিয়ে যায়।
ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা, হামলা
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, সিরাজগঞ্জ ৬ আসনে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন একজোট হয়ে ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা, হামলা, ভাঙচুর, ভয়-ভীতি ও মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ ও সবার জন্য সমান সুযোগের দাবিতে সিরাজগঞ্জ ৬ আসনে প্রার্থী ড. এম এ মুহিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচনের এমন আচরণ বিধি বাপ জনমে কখনো দেখিনি। গণতন্ত্র যেমন শান্তির একমাত্র পথ তেমনি গণতন্ত্র ক্ষমতা থেকে বিদায় দেওয়ারও পথ। ইতিহাস কখনো কাউকে ক্ষমা করে নাই আর করবেও না।
বিএনপি প্রার্থী ড. এম এ মুহিত জানান , একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ ৬ শাহজাদপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন একজোট হয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে নির্বাচনকে তামাশা ও প্রহসনে পরিণত করছে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণার প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের প্রার্থী, কর্মী, সমর্থকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন, প্রচারণায় বাধা প্রদান, বাড়ি ঘরে হামলা, ভাঙচুর লুটপাট সহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাÐ ও নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করে ভোটারদের মধ্যে এক চরম আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না। কোন জায়গায় পোস্টার ঝুলানো হলে পরক্ষণেই তা ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। ধানের শীষের নির্বাচনী অফিসে হামলা করা হচ্ছে। ১৯ ডিসেম্বর তারিখে শ্রীফলতলা ধানের শীষের নির্বাচনী অফিসে হামলা করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের হামলায় ধানের শীষের কর্মী আলতাব ও বাবলু আহত হয়। মিছিল, মিটিং, পথসভা, উঠান বৈঠক সহ নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার সকল ক্ষেত্রেই বাধা দেয়া হচ্ছে।
শিবপুর ও বেলাবতে ধানের শীষের ক্যাম্পে হামলা, শিশু গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩৫
স্টাফ রিপোর্টার নরসিংদী থেকে জানান, নরসিংদীর শিবপুর ও বেলাবতে ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে দুবৃর্ত্তরা। পৃথক দুটি ঘটনায় ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্প, গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে তৃতীয় শ্রেণীর এক শিশুসহ মোট ৩০ জন আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার নরসিংদী-৪ নির্বাচনী এলাকার বেলাব উপজেলার বারৈচায় এবং দুপুর সাড়ে ১২টায় নরসিংদী-৩ শিবপুরে ধানের শীষের প্রার্থী মন্জুর এলাহীর প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্পে পৃথক হামলা ঘটনা ঘটে
নেতাকর্মীরা জানান, হামলার ধারাবাহিকতায় এবার বন্দুক হামলা হয়েছে শিবপুর থানা বিএনপির ক্যাম্প অফিসে। মাইক্রোবাস আরোহী এসব বন্দুকধারী সন্ত্রাসীদের গুলি ও মারধোরে কমবেশি ৩০ জন ভোটকর্মী ও পথচারী আহত হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে ১০ টি গাড়ি ও ১৮ টি মোটরসাইকেল। ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুটি মোটরসাইকেল। শিবপুর মডেল থানা থেকে মাত্র কয়েকশো গজ দূরে বিএনপি অফিসে হামলা চালিয়ে নির্বিঘেœ চলে গেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। আহতদের মধ্যে মাহাদী নামে স্থানীয় আশরাফিয়া মাদ্রাসার একজন শিক্ষার্থীর নাম জানা গেছে।
বিএনপি দলীয় প্রার্থী মন্জুর এলাহী জানান, ‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমি আমার দলীয় নেতা কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্পে অবস্থান করছিলাম। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্রসহ লাঠিসোটা হাতে ২৫/৩০ জনে দূর্বৃত্ত হামলা চালায়। এ সময় তারা আমি এবং আমার নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ৩২ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। তাদের ছুঁড়া গুলিতে মাহদিয়া নামে শিবপুর দারুল উলুম মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির এক পথচারী শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। আওয়ামী ক্যাডারদের হামলায় আমার গাড়ির ড্রাইভার শামীমসহ মোট ২৮ জন আহত হয়। তারা নরসিংদী জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলাকারীরা আমার নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে রাখা প্রচার কাজে ব্যবহৃত ১০টি গাড়ী ও কর্মী-সমর্থকদের ১৮টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে।
মন্জুর এলাহী বলেন, ‘সকল প্রার্থীর প্রচারণায় লেভেল পোলয়িং ফিল্ডের পরিবেশে রয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ বলা হলেও বাধা ও হামলার মুখে বিরোধী দলের প্রার্থীরা প্রচার কাজে মাঠে নামতে পারছে না। এরই নাম কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড?
এদিকে, নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) নির্বাচনী আসনে বিএনপি দলীয় ধানের শীষের প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বেলাব উপজেলার বারৈচা এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করছিলেন। এ সময় তার কর্মী-সমর্থকরা ‘ধানের শীষ, ধানের শীষ’ বলে সেøাগান দিতে থাকলে বেলা ১১টার দিকে লাঠিসোটা হাতে নিয়ে ২০/২৫ জনের একদল উশৃংখল যুবক তাদের ওপর হামলা করে।
লাঠিপেটার এক পর্যায়ে ধানের শীষের প্রার্থী সরদার শাখাওয়াৎ হোসেন বকুল প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে গিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। পরে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে লাঠিসোটা হাতে থাকা যুবকরা সরে যায়। বিজিবি সদস্যরা প্রার্থী সরদার শাখাওয়াৎ হোসেন বকুলকে তাদের গাড়িতে করে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে দূরে নিরাপদ স্থানে নামিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ধানের শীষের ৭জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে সরদার শাখাওয়াৎ হোসেন বকুল জানান, ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালায়। আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি।
ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বিএনপির ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর
ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের দ্বারা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মিথ্যা মামলা, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের তল্লাশীর নামে তান্ডব চালানো হচ্ছে। এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী প্রকৌশলী খালেদ হোসেন মাহবুর শ্যামল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বারবার অভিযোগ করে ও প্রতিকার মিলছে না। নির্বাচন হল উৎসবের আর আমাদের কাছে তা আতঙ্কের। কোথা ও সরকারি দলের একজন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয় নি। আর আমাদের নেতাকর্মীদের পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বাড়ি-ঘর রাস্তা ঘাট থেকে গ্রেফতার করছে। বাড়ি ঘর তছনছ করছে। কোথা ও কোন প্রতিকার মিলছে না। আমাদের প্রার্থীরা ও রেহাই পাচ্ছে না।
এদিকে, নির্বাচনী প্রচারণার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে ৪ টি মাইক জব্দ করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। শনিবার প্রচার কাজে ব্যবহৃত এসব মাইক গুলো সরাইল-নাসিরনগর সড়কের কালিকচ্ছ বাজার প্রাঙ্গণে রাখা হয়। স্থানীয়রা জানায়, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (হাতপাখা) এর প্রার্থী মাওলানা জাকির হোসেন মৃধার অফিসের সামনে অব্যবহৃত ভাবে রাখা অবস্থায় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাইক গুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।
মুরাদনগরে দু’দিনে ৪ মামলায় বিএনপির ১৬১ জন আসামি
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর সংসদীয় আসনের মুরাদনগর ও বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কর্তৃক দলীয় নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও গ্রেফতারের অভিযোগ করেছেন ওই আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী কেএম মুজিবুল হক। ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর গত দুইদিনে ওই দুই থানায় বিস্ফোরক আইনে ৪টি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৬১ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে এবং দলের ৩ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রদল সভাপতিসহ কমপক্ষে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে নির্বাচনী এলাকার ধানের শীষের কমপক্ষে ১৫টি কার্যালয়। বিকেলে কুমিল্লা শহরতলীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
মুজিবুল হক অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের হামলা, মামলা ও নির্যাতনে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো প্রচারণা চালাতে পারছে না। এরই মধ্যে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে তার নির্বাচনী অফিস। নৌকার সমর্থকরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার পক্ষে কাজ করা নেতাকর্মীদের বাড়ি গিয়ে মারধর ও হুমকি দিচ্ছে। কেউ যাতে ৩০ ডিসেম্বর ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট হতে না পারে সেজন্য হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
ফরিদপুরে বিএনপি সমর্থিত ৫টি বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুর নির্বাচনী আসন-৩ সদর আসনে অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ভাষানচরে গত শুক্রবার গভীর রাতে বিএনপি সমর্থিত ৫টি বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। ক্ষতি হয়েছে লক্ষাধীক টাকার মালামাল। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা হচ্ছেন মোঃ হাসান, বাবু ফকির, কুটি খান, ওসমান পোস্টমাস্টার, খলিল মোল্লা। তারা জানান, শুক্রবার রাত ৩/৪টার মধ্যে একদল দুবৃর্ত্তরা তাদের বাড়ির খড়ের পালা ও পাটখড়ির পালায় আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের আত্মচিৎকারে এলাকাবাসীরা এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে ওই রাতেই ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় পরিদর্শন করেছেন থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী সামসুল আলম। তিনি জানান, যারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাপাসিয়ায় বিএনপি-জামায়াত নেতাসহ ৩ জন গ্রেফতার
কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে শামসুল হুদা লিটন জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গত শুক্রবার রাতে কাপাসিয়া থানা পুলিশ জামায়াত নেতাসহ ৩ বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
কাপাসিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, নাশকতার মামলায় তিনজনসহ একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মাদারীপুরে বিএনপি’র প্রার্থীকে হত্যার হুমকি
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর ২ আসনের বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মিল্টান বৈদ্যকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন একটি মোবাইল নাম্বার থেকে। সরকার দলীয় প্রার্থীর হুমকি-ধামকিতে বের হতে পারছেন না প্রচার-প্রচারণায়। এমন অভিযোগ এনে শনিবার বেলা ১২টার দিকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রামের নিজ বাড়ীতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
মিল্টন বৈদ্য অভিযোগ করে বলেন, মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই সরকার দলীয় প্রার্থী ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সমর্থকরা আমার সমর্থকদের হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। নির্বাচনী এলাকায় আমার কোন পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার রাখতে দিচ্ছে না। গত ১৯ ডিসেম্বর এক মোবাইল ফোন থেকে আমাকে কল দিয়ে হুমকি দিচ্ছে “তোকে ট্রাকের মাধ্যমে চাপা দিয়ে হত্যা করে ফেলবো।” বিষয়টি রাজৈর থানাকে অবহিত করলেও কোন অভিযোগ গ্রহণ করেনি। গত দুই দিনে কয়েকবার মোবাইল নাম্বার থেকে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। বিষয়টি মৌখিক ভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
আটোয়ারীতে নৌকার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর
আটোয়ারী (পঞ্চগড়) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আটোয়ারীতে নৌকার নির্বাচনী অফিস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ছবিতে অগ্নিসংযোগ করেছে দূর্বৃত্তরা। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড় এক আসনের নির্বাচনী এলাকা আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পানবাড়া ভোট কেন্দ্রের নৌকার নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে দূর্বৃত্তরা। পরদিন সকালে স্থানীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনী অফিসে এসে দেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ছবিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তাৎখনিক ভাবে বিষয়টি আটোয়ারী থানায় খবর দিলে এসআই শাহীনুর ইসলাম সঙ্গীয়ফোর্স নিয়ে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া ছবির আলামতগুলি থানায় নিয়ে আসেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।