Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেনী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লহর পক্ষে মাঠে আ’লীগ

তৎপর বিএনপির প্রার্থী মজনু

ছাগলনাইয়া সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১২ পিএম

নির্বাচনের দিনক্ষণ ক্রমে ঘনিয়ে আসছে। আর তাই নির্বাচনী এলাকার এ প্রান্ত ও প্রান্তে কান্তিহীন ছুটে চলা বেড়েছে। মহাজোট, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের। উৎসব মুখর পরিবেশে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে গণসংযোগ। খালেদা জিয়ার আসনখ্যাত ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া-পরশুরাম-ফুলগাজী) আসনে নৌকার প্রতীকের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মহাজোটের প্রার্থী জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন ফেনী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও হাবের সাবেক কেন্দ্রীয় মহাসচিব আলহাজ্ব শেখ আবদুল্লাহ। মহাজোট প্রার্থী শিরীন আখতারের পক্ষে কাছ করছেন না এ আসনের তিন উপজেলার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর পক্ষে কাজ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে বিজয়ী করার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। গত শুক্রবার সকালে ফেনী-১ আসন নিয়ে জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারকদের এক বৈঠক ফেনী শহরের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বাস ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম, সাধারণ সম্পাদক সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ তিন উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৬ ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ১৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ২টি পৌরসভার মেয়ররা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের আপত্তির কারণে নীতি নির্ধারকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর পক্ষে আপেল প্রতীকে কাছ করার সিদ্ধান্ত নেন বলে বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা জানান। মহাজোটের এ বিভক্তিতে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে ধানের শীষের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মজনু। এদিকে এ আসনের নির্বাচনী মাঠ সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহাজোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় ফেনী-১ আসনে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ ও আপেলের দ্বিমুখী লড়াই হবে, স্থানীয় ভোটাররা মনে করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর আপেল প্রতীকের সাথে নৌকা না ধান সে ফয়সালার অবসান দেখতে আগামী ৩০ ডিসে¤॥^র পর্যন্ত অপেক্ষ করতে হবে। সেক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বিএনপি প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মজনু। অতীত নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায়, এ আসনটিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১ ও সর্বশেষ ২০০৮ সালে আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হন জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দু’টি মামলায় দ- থাকায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু। মজনু বলছেন ‘আমি নিজের জন্য ভোট করছি না, জনগণ ভোট দেবে খালেদা জিয়াকে, আমি তার প্রতিনিধি মাত্র’। আমার নির্বাচনী অফিসে হামলা ও কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানী করছে পুলিশ। এদিকে নৌকার প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে গেল ৫ বছরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সভা-সমাবেশ করে জাসদ নেত্রীর বিরোধিতা করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু তিনি আবারও মহাজোটের প্রার্থী হওয়ায় এ আসনের তিনটি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তবে প্রথমদিকে নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান দেখা গেলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ আবদুল্লাহর পক্ষে অবস্থান নিয়ে সরব রয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে জাসদ নেত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হলেও নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করার ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়নি বলে জানা গেছে। এরপর থেকে ধানের শীষের মোকাবিলায় আপেল প্রতীকের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গণসংযোগ করছেন।। ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আপেলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন এবং কেন্দ্র কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জাসদ নেত্রী শিরীন আখতারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দূরত্ব রয়েছে, তাকে নিয়ে বিএনপিধানের শীষের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব নয়।অন্যদিকে ফেনী-১ আসনে বারবার নির্বাচিত দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় ধানের শীষের প্রার্থী রফিকুল আলম মজনু নেতাকর্মীদের নিয়ে খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়ি ফুলগাজীর শ্রীপুরে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। নানা প্রতিকূলতা ও হয়রানির মধ্যে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে ধানের শীষের নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। মহাজোট প্রার্থী শিরীন আখতারের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সামছুউদ্দিন বুলু মজুমদার জানান, শিরীন আখতারকে নিয়ে ফেনী-১ আসন শেখ হাসিনাকে উপহার দেয়া সম্ভব নয়। তাই বিকল্প প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লার পক্ষে নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন। গত শনিবার জেলা আওয়ামীলীগের অভিভাবক আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের ফেনীর বাসায় তার উপস্থিতিতে শেখ আবদুল্লাহর আপেল প্রতীকে ভোট করার জন্য দলীয়ভাবে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে আলোকে আমরা শেখ আবদুল্লাহর পক্ষে ভোট করছি। ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম জানান, শিরীন আখতার আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে গত পাঁচ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। তাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে মাঠে নামতে রাজি নন। তারপরও আমরা নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাহিরে যেতে পারিনা। আমি আন্তরিকভাবে নৌকা প্রতীককে চাই। গত শনিবার বিকেলে ফুলগাজীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মতবিনিময় সভায় মহাজোট প্রার্থী শিরিন আখতার এমপি বলেছেন, হত্যা করলে আগে আমাকে করুন আমার নেতাকর্মীদের নয়।তিনি বলেন, আমি এই এলাকার মেয়ে জীবন থাকতে আমি এলাকা ছেড়ে যাবনা। তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ না করে অন্য প্রতীকের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থনের বিষয়টি তিনি জোটের ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানিয়েছেন। আওয়ামীলীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিকে জয়ী করবেন না। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী। কেউ থাকুক বা না থাকুক। আমি নৌকা প্রতীকে ভোট করব। দাপটের সাথে মাঠে রয়েছেন আপেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ। দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় বসবাসের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। তিনি এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে দলীয় নেতা -কর্মীদের ইচ্ছাতেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আপেল প্রতীক নিয়ে বেশ জোরালো ভাবে মাঠে সরব রয়েছেন। ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রথম সারীর এক নেতা বলেন, স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে শেখ আবদুল্লাহর অনেক অবদান রয়েছে। শেখ আবদুল্লাহ কখনো দল থেকে কিছু পাওয়ার জন্য আশা করেননি। আওয়ামীলীগের এই নেতা মনে করেন, দলমত নির্বিশেষে শেখ আবদুল্লাহকে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আপেল প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ