Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মায়ের নামে পরিচিত সেহাহ সিত্তা’র বিখ্যাত মোহাদ্দেস ইমাম ইবনে মাজা

মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আম্বিয়ায়ে কেরামের মধ্যে একমাত্র হজরত ঈসা আ. মায়ের নামে পরিচিত। পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে ‘ঈসা ইবনে মারয়াম’ (মারয়ামের পুত্র) বলা হয়েছে।
ইসলাম যুগে মায়ের নামে পুত্রের পরিচিতি খুব বেশি না হলেও মোহাদ্দেসীনে কেরামের মধ্যে ইমাম ইবনে মাজা’র নাম প্রসিদ্ধ। মাহে রমজানের শেষ দশকে ইসলামি ইতিহাসে বেশ কিছু শোকাবহ ঘটনা ঘটে এবং এই সময় কয়েকজন বিখ্যাত মুসলিম মনীষী ইন্তেকাল করেন। বিশেষত ‘সেহাহ সিত্তা’ নামক ছ’টি বিশুদ্ধ গ্রন্থের সঙ্কলকদের মধ্যে দু’জন এই পবিত্র মাসের শেষ দশকে ইন্তেকাল করেন। সহিহ বোখারী শরিফের সঙ্কলক ‘আমিরুল মোমেনিন ফিল হাদীস’ ইমাম আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ইবনে ইবরাহীম আল বোখারী রহ. হিজরি ২৫৬ সালের মাহে রমজানের শেষ রজনীতে এবং ‘সুনানে ইবনে মাজা’ এর সঙ্কলক ইমাম আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে ইয়াজীদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাজা আল কাজভীনী (র:) হিজরি ২৭৩ সালের ২২ রমজান মতান্তরে ২৭ রমজান ইন্তেকাল করেন। শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ ইমাম বোখারী (র:) ও ইমাম ইবনে মাজা (র:)-এর ইন্তেকাল রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইমামুল হাদীস ইমাম ইবনে মাজা (র:)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত এই:
কাজভীন বা কস্পিয়ান দায়লাম এলাকার একটি বিখ্যাত শহরের নাম। তৎকালীন ‘ইরাকে আজম’-এর মধ্যে এই শহর অবস্থিত ছিল। তিনি হিজরি ২০৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাদীস সংগ্রহের জন্য ইরাক, বসরা, কুফা, বাগদাদ, সিরিয়া, মিসর, রায়, হেজাজ প্রভৃতি আরব দেশ সফর করেন। তিনি এই শাস্ত্রের ইমাম ও হাদীসের হাফেজ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। কুরআনের ভাষ্যকার (মোফাসসের) ও ঐতিহাসিক হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল। তার হাদীসের ওস্তাদগণের মধ্যে হজরত ইমাম মালেক (র:) ও তার সমসাময়িক মোহাদ্দেসগণের কাছ থেকে হাদীস শ্রবণ করেন। বিশেষত প্রখ্যাত মোহাদ্দেস জাব্বারা ইবনুল মোগাল্লাস, ইবরাহীম ইবনুল মোনজের প্রমুখ হতেও ইমাম ইবনে মাজা হাদীস শ্রবণ করেন। তার শাগরেদগণের মধ্যে আবুল হাসান কাত্তান, ঈসা ইবনে আবহার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এরা সবাই ছিলেন হাদীসশাস্ত্র বিশারদ।
উল্লেখযোগ্য যে, ইমাম ইবনে মাজা তার আসল নামের চেয়ে এই নামেই অধিক পরিচিত। কোনো কোনো লেখকের মতে, ‘মাজা’ তার মাতার নাম এবং তার পিতার নাম আবুল্লাহ হলেও মাতার নামেই তিনি অধিক পরিচিতি লাভ করেন, যা একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। ইবনে মাজা বহু মাশায়েখের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন এবং হাদীসশাস্ত্রেও ইমাম রূপে খ্যাতি অর্জন করেন।
‘সুনানে ইবনে মাজা’ ইমাম ইবনে মাজা -এর সুবিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ। অনেকেই এই গ্রন্থ ‘সেহাহ সিত্তা’-এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং এটি আরবি ইসলামি মাদরাসাসমূহের সর্বোচ্চ জমাতে (আমাদের দেশে কামেল হাদীস বিভাগে) পাঠ্যসূচির অন্তভর্‚ক্ত। ‘সুনানে ইবনে মাজা’ সঙ্কলনের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর তিনি এই গ্রন্থ বিখ্যাত মোহাদ্দেস ইমাম আবু জোরআ-এর খেদমতে নিয়ে যান। আবু জোরআ তা দেখার পর এই গ্রন্থের ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই গ্রন্থ কারো কাছে পৌঁছলে হাদীস শাস্ত্রের অধিকাংশ পুস্তক অচল হয়ে যাবে। মোহাদ্দেসগণ বলে থাকেন, বাস্তবিকই এই সংক্ষিপ্ত ও পুনরাবৃত্তি মুক্ত দিক থেকে এটি একটি অতুলনীয় গ্রন্থ। আবু জোরআ এই কিতাবের বিশুদ্ধতা স্বীকার করে বলেন, এতে কোনো হাদীস মওজু বা জাল আছে বলে তিনি মনে করেন না।
‘সুনানে ইবনে মাজা’-তে চার হাজার ৩৩৮টি হাদীস সঙ্কলিত হয়েছে। এতে এক হাজার পাঁচশ ‘বাব’ বা অধ্যায় সংযোজিত। এই গ্রন্থে সঙ্কলিত হাদীস সমূহের ‘রাবী’ বা বর্ণণাকারীদের মধ্যে আবুল হাসান আল-কাত্তান প্রসিদ্ধ এবং তার বর্ণনাই প্রচলিত। সুনান ছাড়াও তার আরো রচনাবলি রয়েছে।
ইমাম ইবনে মাজা (র:)-এর চার লাখ হাদীস মুখস্থ ছিল বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। ‘সুনানে ইবনে মাজা’-এর শরাহ বা ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচনা করেন আলাউদ্দীন মোগলতায়ী, এটি একটি বিশাল শরাহ। আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী, আল্লামা মিল্কি এবং শাহ আবদুল গণী এ সুনানের হাশিয়া বা টীকা রচনা করেন। ইমাম আবু আবদুল্লাহ ইবনে মাজা, আব্বাসীয় খলিফা মোতামেদ আলাল্লাহ ইবনে মোতাওয়াক্কেলের খেলাফত আমলে ৬৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।



 

Show all comments
  • Zulfiqar Ahmed ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৪ এএম says : 0
    জাঝাকাল্লাহ। হাদিস শাস্ত্রে যার অমর কীর্তি ও অবদান যুগ যুগ ধরে মানুষ স্মরণ করছে এবং বিশ্বের জ্ঞানপিপাসু মানুষ তৃষ্ণা মেটাচ্ছে, তিনি হচ্ছেন ইমামুল হাদিস আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাজাহ আল-কাজবিনি (রহ.)। ‘সুনানে ইবনে মাজাহ’ হচ্ছে তার শ্রেষ্ঠতম কীর্তি। হাদিসের ছয়খানা বিশুদ্ধ গ্রন্থের অন্যতম। গ্রন্থটি মুসলিম উম্মাহর জন্য সঠিক পথের দিশাস্বরূপ। আল্লাহ এই মহান মনীষীকে জান্নাতবাসী করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • আমিন মুন্সি ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৬ এএম says : 0
    ইমাম ইবনে মাজাহ (রহ.) ছিলেন একজন প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ, বিজ্ঞ মুফাসসির ও বড় মাপের ইতিহাসবিদ। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থগুলো তাকে ইতিহাসের পাতায় অমর করে রেখেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Shafiqul Islam ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৭ এএম says : 0
    লেখককে এত সুন্দর একটি লেখা উপহার দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। আসলে ইবনে মাজাহর জীবনী থেকে আমাদের অনেক শেখার আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • আসাদুজ্জামান নাঈম ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৮ এএম says : 0
    ইবনে মাজাহর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে এমন কিছু হাদিস উল্লেখিত হয়েছে, যা সিহাহ সিত্তার অন্য কোনো গ্রন্থে উল্লেখ হয়নি। এ কারণে সুনানে ইবনে মাজাহর ব্যবহারিক মূল্য অন্যান্য গ্রন্থের তুলনায় অনেক বেশি। আল্লামা আবুল হাসান সনদি (রহ.) বলেছেন, ‘গ্রন্থকার এতে হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) এর রীতি অনুসরণ করেছেন। বেশ ক’টি অধ্যায়ে এমন কিছু হাদিসের উল্লেখ করেছেন, যা অপর প্রখ্যাত পাঁচটি সহিহ গ্রন্থে পাওয়া যায় না।’
    Total Reply(0) Reply
  • আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২১ এএম says : 0
    ‘হাদীছ সংগ্রহের জন্য ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) ইরাক, বছরা, কূফা, বাগদাদ, মক্কা, সিরিয়া, মিসর, রায় প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন’।
    Total Reply(0) Reply
  • রুবেল ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২২ এএম says : 0
    হাদীছ, তাফসীর, ইতিহাস শাস্ত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রাখার কারণে সমকালীন ও পরবর্তী মনীষীগণ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাদের মধ্যে হাফেয আবু ইয়া‘লা আল-খলীল ইবনে আব্দুল্লাহ আল-খলীল আল-কাযভীনী অন্যতম।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহ আলম ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৩ এএম says : 0
    আল্লামা ইবনু কাছীর (রহঃ) البداية والنهاية গ্রন্থে ইবনে মাজাহ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘তিনি ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ সুনান গ্রন্থপ্রণেতা, যা তাঁর ইলম, আমল এবং সুন্নাতের অনুসরণ এবং এর প্রতিটি মূল ও শাখায় অগাধ পান্ডিত্যের সাক্ষ্য বহন করে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন