বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আম্বিয়ায়ে কেরামের মধ্যে একমাত্র হজরত ঈসা আ. মায়ের নামে পরিচিত। পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে ‘ঈসা ইবনে মারয়াম’ (মারয়ামের পুত্র) বলা হয়েছে।
ইসলাম যুগে মায়ের নামে পুত্রের পরিচিতি খুব বেশি না হলেও মোহাদ্দেসীনে কেরামের মধ্যে ইমাম ইবনে মাজা’র নাম প্রসিদ্ধ। মাহে রমজানের শেষ দশকে ইসলামি ইতিহাসে বেশ কিছু শোকাবহ ঘটনা ঘটে এবং এই সময় কয়েকজন বিখ্যাত মুসলিম মনীষী ইন্তেকাল করেন। বিশেষত ‘সেহাহ সিত্তা’ নামক ছ’টি বিশুদ্ধ গ্রন্থের সঙ্কলকদের মধ্যে দু’জন এই পবিত্র মাসের শেষ দশকে ইন্তেকাল করেন। সহিহ বোখারী শরিফের সঙ্কলক ‘আমিরুল মোমেনিন ফিল হাদীস’ ইমাম আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ইবনে ইবরাহীম আল বোখারী রহ. হিজরি ২৫৬ সালের মাহে রমজানের শেষ রজনীতে এবং ‘সুনানে ইবনে মাজা’ এর সঙ্কলক ইমাম আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে ইয়াজীদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাজা আল কাজভীনী (র:) হিজরি ২৭৩ সালের ২২ রমজান মতান্তরে ২৭ রমজান ইন্তেকাল করেন। শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ ইমাম বোখারী (র:) ও ইমাম ইবনে মাজা (র:)-এর ইন্তেকাল রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইমামুল হাদীস ইমাম ইবনে মাজা (র:)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত এই:
কাজভীন বা কস্পিয়ান দায়লাম এলাকার একটি বিখ্যাত শহরের নাম। তৎকালীন ‘ইরাকে আজম’-এর মধ্যে এই শহর অবস্থিত ছিল। তিনি হিজরি ২০৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাদীস সংগ্রহের জন্য ইরাক, বসরা, কুফা, বাগদাদ, সিরিয়া, মিসর, রায়, হেজাজ প্রভৃতি আরব দেশ সফর করেন। তিনি এই শাস্ত্রের ইমাম ও হাদীসের হাফেজ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। কুরআনের ভাষ্যকার (মোফাসসের) ও ঐতিহাসিক হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল। তার হাদীসের ওস্তাদগণের মধ্যে হজরত ইমাম মালেক (র:) ও তার সমসাময়িক মোহাদ্দেসগণের কাছ থেকে হাদীস শ্রবণ করেন। বিশেষত প্রখ্যাত মোহাদ্দেস জাব্বারা ইবনুল মোগাল্লাস, ইবরাহীম ইবনুল মোনজের প্রমুখ হতেও ইমাম ইবনে মাজা হাদীস শ্রবণ করেন। তার শাগরেদগণের মধ্যে আবুল হাসান কাত্তান, ঈসা ইবনে আবহার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এরা সবাই ছিলেন হাদীসশাস্ত্র বিশারদ।
উল্লেখযোগ্য যে, ইমাম ইবনে মাজা তার আসল নামের চেয়ে এই নামেই অধিক পরিচিত। কোনো কোনো লেখকের মতে, ‘মাজা’ তার মাতার নাম এবং তার পিতার নাম আবুল্লাহ হলেও মাতার নামেই তিনি অধিক পরিচিতি লাভ করেন, যা একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। ইবনে মাজা বহু মাশায়েখের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন এবং হাদীসশাস্ত্রেও ইমাম রূপে খ্যাতি অর্জন করেন।
‘সুনানে ইবনে মাজা’ ইমাম ইবনে মাজা -এর সুবিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ। অনেকেই এই গ্রন্থ ‘সেহাহ সিত্তা’-এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং এটি আরবি ইসলামি মাদরাসাসমূহের সর্বোচ্চ জমাতে (আমাদের দেশে কামেল হাদীস বিভাগে) পাঠ্যসূচির অন্তভর্‚ক্ত। ‘সুনানে ইবনে মাজা’ সঙ্কলনের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর তিনি এই গ্রন্থ বিখ্যাত মোহাদ্দেস ইমাম আবু জোরআ-এর খেদমতে নিয়ে যান। আবু জোরআ তা দেখার পর এই গ্রন্থের ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই গ্রন্থ কারো কাছে পৌঁছলে হাদীস শাস্ত্রের অধিকাংশ পুস্তক অচল হয়ে যাবে। মোহাদ্দেসগণ বলে থাকেন, বাস্তবিকই এই সংক্ষিপ্ত ও পুনরাবৃত্তি মুক্ত দিক থেকে এটি একটি অতুলনীয় গ্রন্থ। আবু জোরআ এই কিতাবের বিশুদ্ধতা স্বীকার করে বলেন, এতে কোনো হাদীস মওজু বা জাল আছে বলে তিনি মনে করেন না।
‘সুনানে ইবনে মাজা’-তে চার হাজার ৩৩৮টি হাদীস সঙ্কলিত হয়েছে। এতে এক হাজার পাঁচশ ‘বাব’ বা অধ্যায় সংযোজিত। এই গ্রন্থে সঙ্কলিত হাদীস সমূহের ‘রাবী’ বা বর্ণণাকারীদের মধ্যে আবুল হাসান আল-কাত্তান প্রসিদ্ধ এবং তার বর্ণনাই প্রচলিত। সুনান ছাড়াও তার আরো রচনাবলি রয়েছে।
ইমাম ইবনে মাজা (র:)-এর চার লাখ হাদীস মুখস্থ ছিল বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। ‘সুনানে ইবনে মাজা’-এর শরাহ বা ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচনা করেন আলাউদ্দীন মোগলতায়ী, এটি একটি বিশাল শরাহ। আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী, আল্লামা মিল্কি এবং শাহ আবদুল গণী এ সুনানের হাশিয়া বা টীকা রচনা করেন। ইমাম আবু আবদুল্লাহ ইবনে মাজা, আব্বাসীয় খলিফা মোতামেদ আলাল্লাহ ইবনে মোতাওয়াক্কেলের খেলাফত আমলে ৬৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।