Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রচারণায় বাড়ছে জন উপস্থিতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কনকনে শীত উপেক্ষা করে গতকাল ছুটির দিনে সারা দেশে বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ মহাজোট, বিরোধী জোট ও জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। জয়ের আশায় ব্যাপক গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন দশ বছরের উন্নয়নের হালচাল। প্রার্থীরা প্রতিদিনই ছুটছেন ভোটারদের কাছে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি। অন্যদিকে নানামুখী বাধার সত্তে¡ পিছিয়ে নেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষদের সাথে নিয়ে ধানের শীষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অনেক স্থানে প্রচারণায় বাধা, হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলেও থেমে নেই প্রচারণা। গণতন্ত্র রক্ষা ও দিন বদলের প্রত্যয় নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন তারা।
ইনকিলাবের জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতারা জানান, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমজমাট হয়ে উঠেছে ততোই ব্যস্ততা বাড়ছে প্রার্থীদের। বসে নেই প্রার্থীদের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা। ভোটার বাড়ি বাড়ি গিয়ে আদায় করছেন ভোটে প্রতিশ্রুতি। গ্রামগঞ্জের চায়ের দোকান থেকে অলি-গলি সব জায়গায় চলছে নৌকা ও ধানের শীষের ক্যাম্পেইন। সাধারণ মানুষের ধারনা ধীরে ধীরে দৃশ্যপট পাল্টাবে। সেনাবাহিনী মাঠে নামলে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিবার ফিরে পাবে। কেটে যাবে সকল ভয় এবং শঙ্কা। নিশ্চিত হবে প্রচারণার সমান সুযোগ। তবে শ্রীপুর, কলারোয়া, কালীগঞ্জ, বরিশাল ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা মামলা, গ্রেফতার ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
গৌরীপুরে নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহের গৌরীপুর রায়গঞ্জ বাজারে বিএনপি’র নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগ করেছেন ময়মনসিংহ-৩ আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী প্রকৌশলী এম ইকবাল হোসাইন। গতকাল দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই অভিযোগ করেন।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী প্রকৌশলী এম ইকবাল হোসেইন অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্বশস্ত্র হামলা করে আমার নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর করে তান্ডব চালায়। এখন তারা উল্টো অপপ্রচার করছে। এসব ঘটনা লিখিতভাবে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোন প্রতিকার মিলছে না। উল্টো আমার প্রচার কাজে ভীতি সঞ্চার করার জন্য সাজানো মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
নোয়াখালীতে হামলা
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নের জামার দোকানে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রদল নেতা সবুজ ও নোমানকে সুইচ গেইটে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা বেধম প্রহার করে। পরে একটি মোটর সাইকেল ও তাদের সাথে থাকা সব টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। একই সময় অশ্বদিয়া বিএনপির সভাপতি তানসেনের বাড়িতে স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী ব্যাপক ভাঙ্গচুর চালায়। উক্ত ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে হুকু মেম্বারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা স্থানীয় বিএনপি সমর্থক মোতালেবকে রাতে রড দিয়ে তার মাথায় ও পায়ে আঘাত করা করে। পরে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা শহরের হাসপাতাল রোড থেকে শহর ছাত্রদলের সদস্য হৃদয়কে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে সুধারাম থানা পুলিশ। সকাল ১১টার দিকে দাদপুর ইউনিয়নের নবীর দোকানে পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ সমর্থক মিলন ও জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাঙ্গচুর করা হয়। দুপুর ১২টায় কাদির হানিফ ইউনিয়নে ধানের শীষের পোস্টার পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এদিকে, সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক কামাল হোসেন একই ইউনিয়ন যুবদলের সাধারন সম্পাদক ইয়াসিন ভূঁইয়া সোহেল ও ২নং ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি মোজাম্মেল হককে সেনবাগ থানা পুলিশ আটক করেছে।
মামলা-হামলায় জর্জরিত বিএনপি
বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার জানান, উখিয়া-টেকনাফ আসনের বিএনপি মনোনিত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, উখিয়া ও টেকনাফে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও পরিকল্পিত হামলা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের সব জায়গায় নালিশ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতন কেউ বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতনের প্রতিকার করছেন না। প্রতিকার না পেয়ে হামলা ও মামলার ভয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকালে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
একই সাথে তিনি অভিযোগ তুলেন, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার যে সমস্ত প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং কর্মকর্তার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে যারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কোনো নিরপেক্ষ কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে তালিকায় রাখা হয়নি।
প্রচারণায় মোমেন-মুক্তাদির পতœী!
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এ দুজন ছাড়াও সিলেট-১ আসনে আরো ৮ জন প্রার্থী থাাকলেও মূল আলোচনা এ দুজনকে নিয়েই। তাদের পক্ষে শুরু থেকেই প্রচারণায় নেমেছেন দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মী ছাড়াও ভোট চাইতে প্রচারণায় নেমেছেন তাদের পতœীও। বেশ কদিন ধরেই সিলেট নগরীর এবং শহরতলীর এলাকাগুলোতে নিজেদের স্বামীর পক্ষে ভোট চাইছেন এবং সভায় যোগ দিচ্ছেন ড. মোমেনের স্ত্রী সেলিনা মোমেন এবং খন্দকার মুক্তাদিরের স্ত্রী জাকিয়া ইয়াসমিন।
প্রচারণায় স্ত্রী ও সন্তানরা
মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে জানান, কুমিল্লার এগারোটি সংসদীয় আসনে প্রার্থীদের পাশাপাশি প্রচারণায় নেমেছেন তাদের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরাও। সমান তালে করছেন উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ।
কুমিল্লা-১ আসনের দাউদকান্দিতে গণসংযোগ করছেন বিএনপির প্রার্থী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মারুফ খন্দকার। গত কয়েকদিন ধরে তিনি তারা বাবা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হেসেনের জন্য ধানের শীষে ভোট চেয়ে গনসংযোগ করছেন। অপরদিকে একই আসনের আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী মেজর জেনারেল (অবঃ) সুবিদ আলী ভূইয়ার স্ত্রী মাহমুদা বেগম তিনিও গণসংযোগে নেমেছেন। কুমিল্লা-৬ আসনের সদর এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকম বাহাউদ্দিন বাহার এর তনয়া তাহসীন বাহার সূচী কুমিল্লা শহরের আনাচে কানাচে ভোটারদের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গত বুধবার সকালে রেইসকোর্স,কাঠেরপুল এলাকায় নারী ভোটারদের নিয়ে উঠান বৈঠক করেন তাহসীন বাহার সূচী। কুমিল্লা-৭ আসনের চান্দিনায় বসে নেই তাঁর স্ত্রী জাহানারা আশরাফও। উঠান বৈঠকে জাহানারা আশরাফ গত পাঁচ বছরে চান্দিনায় সরকারের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ নারী ভোটারদের সামনে তুলে ধরেন এবং সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা প্রতীকে ভোট চান। কুমিল্লা-৭ চান্দিনায় বিএনপি দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের ছেলে সুনতান মঙ্গন আহমেদ রবিনও বাবার ভোটের জন্য চান্দিনার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাবার জন্য ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। কুমিল্লা-১০ আসনের নাঙ্গলকোট সদর দক্ষিণ, লালমাই এলাকার বিএনপি দলীয় ধানের করাবন্দী প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বাবার পক্ষ থেকে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধানের শীষে ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ করছেন। কুমিল্লা-১০ আসনের নাঙ্গলকোট সদর দক্ষিণ, লালমাই এলাকার আওয়ালীগের হেভিওয়েট প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) মেয়ে নাফিসা বাবার জন্য ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। সম্প্রতি একটি সভায় নাফিসা কামাল বলেন, বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের চিত্র কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তা আপনারা ভালো করেই জানেন। দক্ষিণ এশিয়ার বিস্ময় রূপে প্রতিয়মান হয়েছে বাংলাদেশ।
মামলা-হামলা আতঙ্কে প্রচারণা
স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে সব দলের প্রার্থীদের সরব থাকার কথা থাকলেও চাঁদপুর-৩ আসন ব্যতীত অন্য ৪টি আসনে প্রচারণায় চলছে স্থবিরতা। অসংখ্য নেতা-কর্মী বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় সর্বত্র ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মামলা, হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটে বিএনপি নেতা-কর্মীদের। ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা, শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ ইত্যাদি শ্লোগানের মিছিল আর গান-বাজনার প্রচারণায় মুখর আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী ও সমর্থক। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে ভোট চেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন চরমোনাই পীর সাহেবের হাতপাখা, বাসদের মই ও জাকের পার্টির গোলাপ ফুল মার্কার প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে এম এ হান্নানের নির্বাচনী শোডাউনে হামলা করে পন্ড করা হয়েছে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় শত শত নেতা-কর্মীর নামে মামলা করা হয়। চাঁদপুর-১ (কচুয়া)আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণায়ও হামলা করে গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। চাঁদপুর-২ আসনের মতলব উত্তরে বিএনপির প্রার্থী ড. জালাল উদ্দিনকে নিজ বাড়িতে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গেলেই হামলার শিকার হচ্ছেন দলের নেতা-কর্মী ও তাদের সমর্থকরা। চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিঃ মমিনুল হককে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। সেখানেও পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্ক রয়েছে।
প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
ল²ীপুর থেকে এস এম বাবুল(বাবর) জানান, ল²ীপুরে ৪টি আসনে প্রচার-প্রচারনা ও গনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থক নেতা-কর্মীরা । ভোর থেকে শুরু হয় গভির রাত পর্যন্ত চলে গনসংযোগ। ল²ীপুর-৩ (সদর) আসনে শুক্রবার সকাল থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী একেএম শাহজাহান কামাল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে গনসংযোগ অব্যহত রেখেছেন। অপরদিকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ল²ীপুর পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে গনসংযোগ করেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। পরে সাহাবুদ্দিন সাবু ও এ্যানী উভয়ের লোকজনকে নিয়ে গনসংযোগ শুরু করেন। ল²ীপুর-৪ রামগতি-কমলনগর আসেন আ’লীগ থেকে বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান মহাজোটরে প্রার্থী। তিনি জেলা ও উপজেলা আ’লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গনসংযোগ সভা-সমাবেশস চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে জেএসডির সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা আসম আবদুর রব ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তিনি গনসংযোগে তেমন সময় দিতে পারছেনা। ল²ীপুর-২ রায়পুর আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর গুঞ্চনের মধ্যে আ’লীগ শিবিরে কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ আসনে বিএপির অপর প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেব মাঠে রয়েছেন। তিনিও তার সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণা ছালিয়ে যাচ্ছেন। ল²ীপুর-১ রামগঞ্জ আসনে নৌকার প্রার্থী শিল্পপিত ড.আনোয়ার হোসেন খাঁন জেলা ও উপজেলা আ’লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ সভা-সমাবেশ ছালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির দলীয় প্রার্থী না থাকায় নেতা/কর্মীরা ধীর গতিতে গনসংযোগ করছে।
কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগের বাধা : ভাংচুর
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাজীপুর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী কারাবন্দি ফজলুল হক মিলনের স্ত্রী শম্পা হক। প্রতিদিনই তিনি হামলা মামলা উপেক্ষা করে নির্বাচনী এলাকায় উঠান বৈঠক ও পথসভার মাধ্যমে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। গতকাল শুক্রবারও তার নির্বাচনী প্রচারনায় বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তত চার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতাকে আটক করেছে পূবাইল থানা পুলিশ। ফজলুল হক মিলনের স্ত্রী শম্পা হক অভিযোগ করে বলেন, দুপুর ১২টার দিকে মাজুখান বাজারে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা তার গাড়িতে হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাংচুর করেন। এ সময় তার সাথে অন্তত চার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
মাঠে জোর প্রচার, ধানের শীষ- নৌকা’র
মুরশাদ সুবহানী ও এস.এম রাজা জানান, পাবনার ৫টি নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণা আরও তুঙ্গে উঠেছে। ব্যানারে ব্যানারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকাগুলো। মাইকে প্রচার-প্রচারণা চলছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে মিটিং হচ্ছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম পাবনায় এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তি করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহŸান জানান। অপরদিকে, পাবনায় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি জোট প্রার্থীরা বিচ্ছিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা করছেন। গোছানো এবং জোরেসোরে প্রচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে ইসলামী আন্দোলনের চর মোনাই পীর সাহেবের সমর্থিত প্রার্থী মাওলানা আব্দুল জলিলের হাত পাখা প্রতীকের প্রচার প্রচারণা নজরে পড়ছে।
নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ
সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার যুগেখালি ইউনিয়নের ওফাপুরে নৌকা প্রতীকের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জামায়াত-বিএনপির আট কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, মধ্যরাতে ওফাপুরে নৌকা প্রতীকের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ৬-৭টি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার হয়েছে। কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মেদ জানান, । ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
নাসিরনগরে গণসংযোগ
নাসিরনগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ নাসিরনগর আসনে বিএনপি ও জাতীয় ঐকফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী এস এ কে একরামুজ্জামান বলেন নাসিরনগরে প্রশাসন আমার ও আমাদের নেতাকর্মীদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। তিনি অভিযোগ করেন প্রশাসন ও মহাজোটের নেতাকর্মীরা আমার নির্বাচনী মিটিং মিছিল ও প্রচারণার কাজে কৌশলে বাধাগ্রস্থ করছে। আমার দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার আতঙ্কে হয়রানি করছে। কিন্তু মহাজোট প্রার্থী শুরু থেকেই একের পর এক নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করা সত্বেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। এমনকি আমি ইতিমধ্যেই নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও এসব বিষয়ে অবহিত করেছি। ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহনের দিন কোন ধরণের অপশক্তি কিছু করার অপচেষ্টা করলে তা কঠিন ভাবে জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করবো।
আওয়ামী লীগের গণসংযোগ
শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, কনকনে শীত উপক্ষো করেই গতকাল সকাল থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ সংসদীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মাদারীপুর-১ (শিবচর)আসনের আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নূর-ই আলম চৌধুরী। তিনি কুতুবপুর, কাদিরপুর, ডিগ্রিরচর, কাঁঠালবাড়ির মাগুরখন্ড, চরজানাজাতের সিরু মিয়ারহাটসহ মোট ৫টি পথসভা ও উঠান বৈঠকে অংশ নেন। এসময় জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মুনির চৌধুরী, পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খানসহ আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শিবগঞ্জের প্রত্যেকটি গ্রাম হবে শহর
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নৌকা প্রতীকের মনোনিত প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেছেন, আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছেন। এই নির্বাচনী ইশতেহারের প্রথমেই রয়েছে প্রত্যেকটি গ্রাম হবে শহর। ডা. শিমুলও স্বপ্ন দেখেন শিবগঞ্জের প্রত্যেকটি গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করার। শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শিবগঞ্জ পৌর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিরতিহীনভাবে নির্বাচনি প্রচারণায় তিনি অঙ্গিকার করেন- বিজয়ী হলে এই এলাকার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামগুলো শহরের মতো করে ঢেলে সাজানো হবে।
ভয়াবহ রাজনৈতিক বিপর্যয় আসবে
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, নওগাঁ-৬ আসনের বিএনপি ও ঐক্যফ্রট্টের মনোনীত প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির বলেছেন, গত ৩দিন ধরে নওগাঁ-৬ আসনের আত্রাই রানীনগরের ধানের শীষের নির্বাচনী কর্মীদের উপর পুলিশের অভিযান চলছে। একদিকে হেলমেট বাহিনী, তোফা বাহিনী, আর্ট বাবু বাহিনী, মান্নান মেম্বার বাহিনীর আক্রমন অত্যাচার ও আতংক সৃষ্টিতে ভোটের কর্মী ও জনগন দিশেহারা। গতকাল তার নির্বাচনী এলাকার রানীনগর উপজেলা বাসস্টান্ডে নির্বাচনী সমাবেশে একথাগুলো বলেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে রানীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আল ফারুক জেমস, ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক মেজবাহ হক লিটনসহ প্রমুখ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীপুরে আটক ৩
শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সচিব আলহাজ্ব শাজাহান ফকির আটক করেছে পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মশিউর রহমান নয়েছ ও উপজেলা ছাত্রদল নেতা পারভেজ হাসানকে তাদের নিজ বাড়ী থেকে আটক করা হয়।
জামায়াতের নেতা গ্রেফতার
পার্বতীপুর (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুর জেলা নেতা মো. আনোয়ার হোসেনকে গতকাল শুক্রবার পার্বতীপুর থেকে গ্রেফতার হয়েছে। তিনি পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ফকিরের বাজার বাহারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক।
নেতার মাথা ফাটিয়েছে যুবলীগ
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, সাভারের আশুলিয়ায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারনা চালানোর সময় দ্বন্দের জের ধরে যুবলীগের সাবেক এক নেতার মাথা ফাটিে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে থানা যুবলীগের আহŸায়ক কবির সরকারের লোকজনের বিরুদ্ধে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় ইয়ারপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোসারফ হোসেন মুসাকে উদ্ধার করে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার (ওসি তদন্ত) জাবেদ মাসুদ বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ না পেলেও মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১২ এএম says : 0
    খোনী ভারতীয় দালালদের সময় শেষ। জনগণ জাগো সকল খোনি ভারতীয় দালালদেরকে পালাইয়া উস্টাও। ইনশাআল্লাহ। *******&
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Qatar ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২১ এএম says : 0
    ‘ভোটের বিপ্লব গঢি যাইব। ধানের শীষ ছাড়া আঁরার গতি নাই।’ ইনশাল্লাহ বিজয় আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Saznus Naxib ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২২ এএম says : 0
    খোসরু ৩০ জনের মতো নেতা/কর্মী নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন ২০০ মিটার পথও অতিক্রম করতে হয়নি এরই মধ্যে হাজারও মানুষ এসে যোগদেন তার সাথে!
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২২ এএম says : 0
    সরকার দলীয়রা যতই আন্ডারগ্রাউন্ডের সমস্ত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু এবার শেষদিনের খেলা অত সহজ হবে বলে মনে হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • আমিন মুন্সি ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৩ এএম says : 0
    বিরোধী দলের এখন একটাই কাজ, ৩০ শে ডিসেম্বর ভোটের দিন সর্ব শক্তি দিয়ে চেষ্টা করা যেন সাধারণ জনগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে। গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ আর পুলিশ-প্রশাসন বাংলাদেশে যত ঋণাত্মক রাজনীতি করেছে, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস কায়েম করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে, তাতে এদেশের সিংহভাগ সাধারণ জনগণ এমনি ফুঁসে আছে। আওয়ামী লীগের সমস্ত অপকর্ম মানেও বিরোধী দলের নির্বাচনী প্রচারণা।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৩ এএম says : 0
    দেশে বর্তমানে আওয়ামী লীগের ভোট শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ। বাকি ভোট বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের। মিডিয়াগুলোতে এ ধরনের পরিসংখ্যানই উঠে আসছে, আর সেজন্যই সরকার এতো বেপরোয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • Hassan ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৪ এএম says : 0
    AL must show win, even with 10% vote to them, they know there is no escape route after lose. What they have done to opposition party will come back on them as election is lost.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ