Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচন সামনে রেখে সহিংসতায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৫০ পিএম | আপডেট : ১২:৫৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮
বাংলাদেশে ঘনিয়ে আসা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সৃষ্ট সহিংসতায় উদ্বেগ (এলার্মড) প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। রাজনৈতিক সহিংসতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ ও ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান নিয়ে তারা এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৩০শে ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। 
 
মানবাধিকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকারী জাতিসংঘের কমপক্ষে ৮ জন স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর শুক্রবার এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এতে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচনের পরে মানবাধিকার পরিস্থিতির পক্ষে মনিটরিং করতে এবং তা উৎসাহিত করতে মানবাধিকারবিষয়ক নাগরিক সমাজকে অনুমোদন দিতে আবেদন জানান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি। এতে তারা বলেছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধ, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহিংসতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান সব মিলে বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে এক আতঙ্কের পরিবেশ। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জরুরিভিত্তিতে নজর দেয়া উচিত। এ বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর মিসেস কারিমা বেনোনে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মতামত দেয়ার স্বাধীনতা অনুমোদন ও সুরক্ষা বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর ডেভিড কাই, ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর আহমেদ শাহিদ, মানবাধিকারের পক্ষের কর্মীদের অবস্থাবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর মাইকেল ফোর্স্ট, সংখ্যালঘু বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর ফার্নান্দ ডি ভারেনেস, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের অধিকারবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর মিসেস জিমেনেজ-দামারি, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকারবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর ক্লিমেন্ট নালেতসোসি ভোলে এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- অথবা খেয়ালখুশিমতো হত্যাবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর অ্যাগনেস কলেমার্ড।
 
 
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনারের অফিসে নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। এতে স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউররা বলেছেন, বাংলাদেশে ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের টার্গেট করা হতে পারে বলে নতুন করে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। দুর্ভাগ্যজনক হলো, এসব আতঙ্কের শক্তিশালী ভিত্তি আছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের প্রথম অর্ধাংশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৩৮০ জন সদস্যের ওপর হামলা হয়েছে। 
 
জাতিসংঘের ওই বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের গ্রেপ্তার ও ভীতি প্রদর্শন করছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। বিরোধী দলগুলোর সদস্য ও সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে। গুম করা হয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, এমন কিছু ঘটনায় জড়িত ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা। 
 
তারা আরো বলেছেন, ‘এমনকি একজন নির্বাচন কমিশনার পর্যন্ত মতপ্রকাশ করেছেন যে, এই নির্বাচনে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। তাই এই উত্তাল সময়ে সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীব প্রয়োজনীয় জনসাধারণের বিতর্কের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতেও একই রকম পদক্ষেপ নিতে হবে।   
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলা হয় ১৪ই ডিসেম্বর। এতে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে। ওই হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বিশেষ করে জোর দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ২০১৮ সালের ৯ থেকে ১২ই ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৭টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ৮ জন নিহত ও ৫৬০ জন আহত হয়েছেন বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। 
 
জাতিসংঘের ওই বিশেষজ্ঞরা ধর্মীয় উগ্রপন্থার উত্থান, জীবনের অধিকারসহ মানবাধিকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব, সাংস্কৃতিক জীবনে অংশগ্রহণের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতার ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ (গ্রেভ কনসার্ন) প্রকাশ করেন। প্রধান দুটি রাজনেতিক দলই ধর্মীয় উগ্রবাদী গ্রুপগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা নিচ্ছে বা তাদের দ্বারা তুষ্ট হচ্ছে এমন রিপোর্টে বিরক্ত জাতিসংঘের ওই বিশেষজ্ঞরা। 
 
বিরোধীদলীয় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সদস্যের ওপর নজরদারি, ভীতি প্রদর্শন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচার করায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের ওই বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের ক্রিমিনালাইজ করতে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যেকেউ তার মতপ্রকাশ করলে তাকে ক্রিমিনালাইজ করতে বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহারের বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। নির্বাচনে জনগণের যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার সেই অধিকারের ওপর এতে বড় প্রভাব পড়েছে।’ 
 
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নতুন করে সহিংসতা দেখা দিতে পারে বলেও তারা আতঙ্ক প্রকাশ করেন। হামলার শিকার হতে পারেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা, তাদের বাড়িঘর, উপসনালয় ও জীবন জীবিকার ওপর। তারা বিবৃতিতে বলেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ একসঙ্গে মিলে গুরুত্বর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হতে পারবে কিনা তা নিয়ে। তাই আমরা কর্তৃপক্ষকে জরুরিভিত্তিতে সহিংসতার জোয়ার বন্ধ করতে, মানবাধিকারের প্রতি ও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি প্রতিশ্রুতি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’ 


 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ