Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌলভীবাজারের ৪টি আসনে ঐক্যফ্রন্টের দেড় শতাধিক গ্রেফতার

ধরপাকড়েও নির্বাচনী মাঠে মরিয়া কর্মী-সমর্থকরা

এসএম উমেদ আলী | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৭:১৭ পিএম

মৌলভীবাজার জেলার ৪টি সংসদীয় আসনেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। পুলিশের অব্যাহত ধরপাকড় ও গ্রেফতার আতঙ্ক মাথায় নিয়ে প্রার্থীদের বিজয়ী করতে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মী সমর্থকরা নির্বাচনী মাঠে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষনার পর থেকে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের নেতাকর্মী সমর্থকদের গায়েবী ও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার শুরু করে পুলিশ। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জেলার ৪টি নির্বাচনী আসনে সমানতালে পুলিশের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ নির্বাচনী মাঠ থেকে তাদেরকে সরিয়ে দিতেই ক্ষমতাসীনরা পুলিশকে র্নিলজ্জভাবে ব্যবহার করছে। নেতাকর্মীদের ধরতে প্রতি রাতেই বাড়ি বাড়ি পুলিশের তল্লাশী ও নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিপক্ষের কর্মীদের হামলার অভিযোগ উঠছে।
অন্যদিকে ২০ দলীয় জোট, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের ধরতে গায়েবী মামলার পর এবার নতুন করে প্রতিপক্ষের লোকজন প্রচারগাড়ীতে হামলা ও রিক্সা, মোটরসাইকেল পোড়ানো, নির্বাচনী অফিস ও গাড়ী ভাংচুরের মতো ঘটনা সাজিয়ে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও পুলিশি হয়রানী চলছে।
প্রার্থীদেও অভিযোগ,‘যেখানেই বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারনা সভা করছেন সেখানেই পাল্টা সভা আহবান ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়ে উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হচ্ছে। বিএনপির পক্ষে কোন অভিযোগই রির্টানিং অফিসার ও পুলিশ আমলে নিচ্ছে না। প্রার্থীরা অভিযোগ করেন,যথাযথ প্রক্রিয়ায় সভা সমাবেশ ঠিকমতো করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে মৌলভীবাজার ৪ (শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জ) আসনের বিএনপি প্রার্থী হাজী মুজিবুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, শুধু আওয়ামীলীগ নয়, পুলিশ এখন ঐক্যফ্রন্টের প্রধান প্রতিদ্বন্ধী হয়ে দাঁড়িয়েছে। অব্যাহত পুলিশ হয়রানী ও গ্রেফতার আতংক মাথায় নিয়েও আমাদের সমর্থকরা মাঠে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,গত ১৮ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গলে নৌকা প্রতীকের একটি প্রচারণা বাহন ভাংচুরের ঘটনায় থানা পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বাড়ি বাড়ি তল্লাশী অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে গ্রেফতার করে। এর আগের দিন বিএনপি প্রার্থী হাজী মুজিবুর চৌধুরী উপজেলার বরুনা শহরের বিরাহিমপুরে পূর্ব নির্ধারিত নির্বাচনী সভায় পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ অভিযোগ আমলে না নিয়ে উল্টো নেতাকর্মীদের হয়রানী করছে বলে স্থানীয় উপজেলা বিএনপিনেতারা অভিযোগ করেছেন।
১৯ ও ২০ ডিসেম্বর জেলার রাজনগর, জুড়ী, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলায় একই ভাবে সাজানো মামলায় পুলিশ ১৬ বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। এদিন রাতে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান শহরের পুরাতন হাসপাতাল সড়কে একটি ভাঙ্গা মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ এনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ পত্র দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, কথিত ভাঙ্গা মটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের কয়েক মিনিটের মধ্যে ৩টি পুলিশ ভ্যান ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের উপস্থিতি প্রমান করে এটা পুলিশের সাজানো ঘটনা। নাসের এই সাজানো মাটর সাইকেল পোড়ানোর ঘটনায় মামলা সাজিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানী না করতে রিটানিং অফিসারের প্রতি ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানিয়েছেন। একইভবে পুলিশের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতে রাজনগর বাজারে একটি টমটম গাড়ী ভাঙচুর করে বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীর ধরতে মিথ্যামামলা দেয়ার পায়ঁতারা করছে। গত রাতেও মৌলভীবাজার ও রাজনগরে দুই দলীয় নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করার খবর পাওয়া গেছে’।

বিএনপির প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একাধিক পুলিশের গায়েবি মামলায় সুবিধা করতে না পেরে এখন ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা ও পুলিশের হয়রানীর ক্ষেত্র সৃষ্টি করছে পুলিশ। এসব ঘটনায় পুলিশ নিলর্জ্জভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষালম্বন করছে।

বিএনপির একাধিক প্রার্থী বলেছেন, এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামীলীগ সমর্থকরা পুলিশের সহায়তায় ২০ ডিসেম্বর কুলাউড়ায় নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাংচুর, ও রাজনগরে অটো রিক্সা পোঁড়ানোর ঘটনা ঘটিয়েছে।
মৌলভীবাজার-৪ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিএনপির প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মারছে,আর কর্মীদের ধরছে এভাবে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। এ পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন সাজানো মামলায় গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ যাকে খুশি যখন তখন গ্রেফতার করেছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশী কওে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এরপরও আমরা মাঠে আছি-সরকারের সব অপকর্মের জবাব ৩০ তারিখ জনগন ভোটের মাধ্যমে প্রদান করবে’ বলে জানান তিনি ।
এম নাসের রহমান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে সাজানো মামলায় ফাঁসানোর জন্য মোটর সাইকেল পোড়ানোর ঘটনা ঘটিয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ মামলা করে নেতা কর্মীদের ধরপাকড় করছে। তিনি দাবী করেন, এর আগে তফসিল ঘোষনার পর পুলিশ কয়েকটি মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানী করেছে। এনিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিত ও মৌখিক ভাবে অবহিত করা হয়।
জুড়ীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিএনপির প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠু এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের ইঙ্গিতে তার কর্মী-সমর্থকদের পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তারের অভিযোগ করেন। মিঠু বলেন, এ পর্যন্ত অসংখ্য মামলা দেয়া হয়েছে নেতা-কর্মীদের উপর। জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মাছুম রেজা’সহ রাজকী এলবিন টিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর সেলিম’কে ১৮ই ডিসেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলায় মোট ৫৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেও দুইজনকে আটক করেছে। নাসির উদ্দিন মিঠু বলেন, সাধারন মানুষ আমাদেরকে সাপোর্ট দিচ্ছে। যেখানেই উঠান বৈঠক করছি সেখানেই মানুষের ঢল নামছে। এসব দেখে ক্ষমতাসীনরা দিশেহার হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে কুলাউড়া আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মনসুর বলেন, সারাদেশের মতো কুলাউড়াতেও নির্বাচনের কোন সুষ্টু পরিবেশ নেই। পুলিশ প্রশাসনের উপর মানুষের কোন আস্থা নেই। এতসব মামলা ও পুলিশি হয়রানির মুখেও ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মীরা গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে মাঠে রয়েছে বলে জানান সুলতান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ