বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ১৪টির মধ্যে সংসদীয় ৬ টি আসনকে সাম্প্রদায়িক ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছয়টি আসনে জামায়াত শিবিরের অবস্থান অত্যন্ত শক্ত থাকায় কেন্দ্রগুলিতে সহিংসতার আশংকা করা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ২০ দলীয় জোটের শরীক জামায়াতে ইসলামী মোট ৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে খুলনা-৫ আসনে প্রার্থী হয়েছেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ আসনে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (বর্তমানে কারাগারে), বাগেরহাট-৩ আসনে এ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আসনে অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক (বর্তমানে কারাগারে), সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম। এসব আসনে প্রতিদিনই পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং পুড়িয়ে দেয়া, মাইক ভাংচুর, মারামারি ও বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটছে। ফলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এ ৬টি আসনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
অপরদিকে খুলনায় জটিল সমীকরণে আটকে গেছে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা। ভোটের মাঠে শরিক জাতীয় পার্টি মাথাব্যথার কারণ হয়েছে মহাজোটের। সেই সঙ্গে খুলনা-৪ ও ৬ আসনে আওয়ামী লীগে রয়েছে দলীয় বিভেদ। অপরদিকে খুলনা-৫ ও ৬ আসনে জামায়াতকে নিয়ে অস্বস্তি থাকায় প্রচার-প্রচারণায় ‘ধীরে চলো’ নীতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। বড় শোডাউন, গণজমায়েত কর্মসূচি বাতিল করে এলাকাভিত্তিক প্রচারণায় জোর দিয়েছে দলটি। খুলনা-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘আমরা এখনই বড় কর্মসূচির দিকে যাচ্ছি না। নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক রয়েছে। মিথ্যা মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে অনেককে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। প্রশাসনের অবস্থান বুঝে পদক্ষেপ নেবে বিএনপি।’
জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৮ সালে খুলনায় সংসদ নির্বাচনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি হয়েছিল। ওই নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫টি ও বিএনপি ১টি আসন পায়। আর ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে সবকটি আসনেই জয় পায় আওয়ামী লীগ। তবে এবার খুলনা-১, ৫ ও ৬ আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা) পাল্টা প্রার্থী দেয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল হোসেন বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অন্তরায় হবে না। তারা একটা পর্যায়ে হয়তো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে। আর খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও তেরখাদায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল তা কমিয়ে আনা হয়েছে। নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তারা মাঠে থাকবেন।
ধানের শীষকে বিজয়ী করতে খুলনা-৫ ও ৬ আসনে জামায়াতকে নিয়ে অস্বস্তি দূর হয়েছে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা। তিনি বলেন, তৃণমূল কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও পাইকগাছায় সমন্বয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অপরদিকে, খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনে ৭৮৬টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫২৫টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ। যা’ মোট ভোট কেন্দ্রের প্রায় ৬৭ শতাংশ। তবে পুলিশ বলেছে, এসব ভোট কেন্দ্রে সাধারণ কেন্দ্রের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ৭৮৬টি ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় থাকবে মোট সাড়ে ১২ হাজার পুলিশ ও আনসার।
এছাড়া খুলনা মহানগরী ও জেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলায় থাকবে ৯ প্লাটুন বিজিবি ও মহানগরী এলাকায় ৯ প্লাটুন বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। গতকাল থেকে টহলে নেমেছে, পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বিজিবি নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করবে। এছাড়া সাতক্ষীরায় মোতায়েন ১৪ প্লাটুন বিজিবি’র মধ্যে সাতক্ষীরা ১ ও ২ আসনে ৬ প্লাটুন এবং ৩ ও ৪ আসনে ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। সাতক্ষীরা জেলার আইন-শৃঙ্খলা দেখভাল করার পাশাপাশি তারা নিয়মিত টহল দেবে।
সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল গোলাম মোহাম্মদ মহিউদ্দীন খন্দকার জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সাতক্ষীরা ১ আসনে (তালা-কলারোয়া) ও ২ আসনে (সাতক্ষীরা সদর) ৬ প্লাটুন এবং ৩ আসনে (দেবহাটা-আশাশুনি ও কালিগঞ্জের একাংশ) এবং ৪ আসনে (শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের একাংশ) ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।