বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রাচীন ধারা ও তার শাখা-প্রশাখাগুলোর সংখ্যা বেহিসাব যা লিখে বলে শেষ করা অসম্ভব। তার সামান্য আভাসমাত্র পূর্বের লেখায় দেয়া হয়েছে। ওইসব অপপ্রচারের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে বলতে গেলেও তা বর্ণনাতীত। এগুলোর মধ্যে যত অপপ্রচার রয়েছে তার চেয়েও অজানা রয়েছে অনেক অনেক বেশি। তবে এ কথা স্মরণযোগ্য যে, আগেকার যুগে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল প্রচার-প্রচারণা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যম ছিল সীমিত। গ্রন্থ, রচনাবলী এবং প্রচারপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তার ঘটানো হত, কিন্তু বর্তমান আধুনিক যুগে সেগুলোর সাথে আরও নতুন নতুন বিষয় যোগ হয়ে নানা অভিনব উপায়ে অতিসূক্ষèভাবে এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জোরালোভাবে নতুন আঙ্গিকে দুনিয়াময় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
অপসংস্কৃতির বদৌলতে ইসলামের মহানবী সা., পবিত্র কোরআন, মুসলিম মণীষী এবং ইসলামের মৌলিক রচনাবলী ছাড়াও অপপ্রচার, বিকৃতি, বিভ্রান্তি, ইসলাম সম্পর্কে সংশয় সৃষ্টি, ইসলামী ইবাদতের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রæপ এবং ইসলামী সুন্নাতের অবমাননা ইত্যাদির কথা উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে।
ইসলামবিদ্বেষী অমুসলমানদের পাশাপাশি বর্তমানে আধুনিক শিক্ষিত, নামে মুসলমান এক শ্রেণীর কিছু লোক মসজিদের আজান শুনলে বিরক্তি বোধ করে, পরিবেশ দূষণের গন্ধ পায়, এতে তাদের আরামের ঘুম হারাম হয়ে যায়। অর্থাৎ এরূপ ধর্মবিদ্বেষী তথাকথিত পরিবেশ বাদীরা দেখতে পায় না সে সব শয়তানী কার্যকলাপ ও অবৈধ ক্রিয়াকর্ম, যেগুলো সত্যিকারভাবে পরিবেশ দূষণের ভূমিকা পালন করে থাকে।
এ শ্রেণীর শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের কোথায় কি ছিদ্র আছে খুঁজে বেড়ায় এবং তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় ও অপপ্রচারে লিপ্ত থাকে যেগুলোর তালিকা দীর্ঘ। স্বীকার্য যে, এসব বিষয় ইহুদী-খ্রিষ্টান ও ইসলামদ্রোহীরা ছিদ্রানুসন্ধানীদের জন্য এ কাজটি অনেকটা সহজ করে দিয়েছে।
ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের অপপ্রচারের পুথি-পত্র, রচনা সমগ্র তথা আরেক (ইসরাইলিয়াত) মিথ্যাচার ও অতিরঞ্জণনামা অহরহ রচিত হচ্ছে বহু পরাশক্তির প্রধান প্রধান শহরে কেন্দ্রে এবং ব্যাপকভাবে মুসলমানসহ অন্যান্যদের মধ্যে প্রচার করা হচ্ছে এবং অসৎ উদ্দেশ্য সাধনে অকাতরে পানির ন্যয় অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। মানবতার সেবা ও কল্যাণের নামে চলছে এ ঘৃন্য অপতৎপরতা। মুসলমানদের কাছে এসব খবর, তথ্য আছে কি?
ইসলামবিদ্বেষীদের হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে স্রষ্টার অস্তিত্বকে বিতর্কিত করা, আল কোরআনের বিকৃতি ঘটানো, সংশয় সৃষ্টি এবং নানাভাবে কোরআনের অবমাননা করা এবং মহানবী সা. সম্পর্কে নানা কটূক্তি, ঠাট্টা বিদ্রæপ, তার চরিত্রে কালিমা লেপন, তার প্রতি গোস্তাখী প্রদর্শন তথা অমর্যাদা ও ধৃষ্টতা প্রদর্শন ইত্যাদি।
ওরা হাজার হাজার পৃষ্টার ইসলামবিরোধী এবং কোরআন, রাসূল সা. এবং মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতহানিকর রচনাবলী ও অপপ্রচারণার বিশাল জাল বিস্তার করে রেখেছে। শয়তানী অপপ্রচারে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিছু লোক বিপথগামী হলেও সমাজের বৃহত্তর অংশকে ওদের খপ্পরে পতিত করা সম্ভব নয় বলে ইসলামীবিরোধী শক্তিবর্গ সুযোগের অপেক্ষায় থাকে এবং ঝোপ বুঝে কোপ দেয়।
মুসলমানদের এই কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ইহুদী, খ্রিষ্টান ও কাফের-মোশরেকরা শুরু থেকে মহানবী সা.-এর দুশমন হিসেবে পরিচিত এবং তারা ইসলাম ও মোহাম্মদ সা. এর প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ, শত্রæতা, তাঁর শানে গোস্তাখী, কটাক্ষপাত এবং তাঁর মর্যাদাহানিকর আচরণ প্রদর্শন করে আসছে। আম্বিায়ায়ে কেরামের প্রতি শত্রæতা ও তাদের অবমাননা এবং মর্যাদা ক্ষুণœ করার বদ অভ্যাস হতেও তারা মুক্ত নয়।
বিগত কিছু কাল হতে এ বদবখত কুচক্রীরা সর্বশেষ এবং সর্ব শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ সা.-এর অবমাননা এবং তার শানে গোস্তাখী আচরণ প্রদর্শনের এক লাগাতার ধারা শুরু করেছে, যা থেমে থেমে বিভিন্ন শহরে মাথা চারা দিয়ে উঠে এবং মুসলমানরা প্রতিবাদ, সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে উঠলে হয়তো ক্ষমা চেয়ে বসে অথবা সাময়িকভাবে বিরত থেকে আবার সেই একই অপপ্রচারের পুনরাবৃত্তি আরম্ভ করে। এর ফলে পশ্চিমা জগতের ঘৃন্য ও কালো চেহারা সুস্পষ্টভাবে দুনিয়াবাসীর সামনে উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ একটি ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন।
২০০৫ সালের কথা। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ডেনমার্কের বিখ্যাত পত্রিকা জাইলেন্ড পোসটেন ‘ঔুষষধহফ চড়ংঃবহ’-এর সম্পাদক (জন হ্যানসন) এর এক বন্ধু ও প্রসিদ্ধ লেখক, সেপ্টেম্বর মাসে মহানবী সা.-এর জীবন চরিত অবলম্বনে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন, যাতে তিনি নবী সা.-এর ওপর কার্টুন অন্তর্ভুক্ত করতে ইচ্ছুক ছিলেন, এ উদ্দেশ্যে তিনি কার্টুন অংকনকারী বিভিন্ন আর্টিস্টের সাথে যোগাযোগ করেন, তখন তারা সবাই কার্টুন অংকনে অস্বীকৃতি জানান।
আর্টিস্টদের বক্তব্য ছিল এই যে, মুসলমানগণ এ কাজকে ‘রেসালত’ এর অবমাননা মনে করেন এবং যদি তারা এমন কোন আচরণ দেখেন, তাহলে তাদের প্রাণ নাশের আশংকা রয়েছে। তারা হলান্ডের উদাহরণ পেশ করে বলেন, একজন ছবি নির্মাতা এক উলঙ্গ মহিলার শরীরে কোরআনের আয়াত লিখে দিয়েছিল।
অত:পর এক মুসলমান যুবক উক্ত ছবি নির্মাতাকে হত্যা করে। এরপর যখন মামলা চলে তখন হত্যাকারী যুবক আদলতে আবেদন জানায় যে, “অনুগ্রহ করে আমাকে ফাঁসির শাস্তি দান করা হোক, কেননা আমি জীবিত থাকলে এবং অপর কেউ যদি পুনরায় এরূপ বেয়াদবি করে তাকেও হত্যা করব।”
এসব আর্টিস্ট আরও বলেন, ‘উক্ত হত্যাকারী যুবকের বর্ণনাটি মুসলমানদের অনুভূতি ও চিন্তা চেতনার বহি:প্রকাশ। এরা নিজের ধর্ম, নবী সা. এর পূত পবিত্র ব্যক্তিত্ব এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. এর ওপর কোন প্রকারের সমঝোতা করেন না। সুতরাং আমরা নিজেদের প্রাণের আশঙ্কায় এরূপ কাজ করতে প্রস্তুত নই।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।