রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
ওমর ফারুক, ফেনী থেকে
আজ ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া, লেমুয়া, ধলিয়া ও ফরহাদনগর এবং ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর, ঘোপাল, রাধানগর, শুভপুর, মহামায়া ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিলে ফেনীতে এটি সর্বপ্রথম ইউপি নির্বাচন। ইতোমধ্যে ছনুয়া ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন আ.লীগ প্রার্থী করিম উল্লাহ বিকম। এছাড়া ফরহাদনগরে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ৯টি সদস্য পদে আ.লীগ প্রার্থীরা জয়ী হচ্ছেন। এর পূর্বে ছনুয়াতে আ.লীগ প্রার্থী হিসেবে করিম উল্লাহ, বিএনপির মো. সাঈদ বেলাল। লেমুয়াতে আ.লীগের মোশারফ উদ্দিন নাছিম, বিএনপির ফেরদৌস কোরেশী, ধলিয়াতে আ.লীগের আনোয়ার হোসেন মুন্সী, বিএনপির জাকির হোসেন জসিম এবং ফরহাদনগরে আ.লীগের মোশারফ হোসেন টিপু, বিএনপির আলমগীর চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পান। এদিকে ছনুয়াতে বিএনপি প্রার্থী সাঈদ বেলাল আ.লীগ প্রার্থীর সাথে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় এ ইউপিতে আ.লীগ প্রার্থী করিম উল্লাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪র্থ বারের মতো চেয়ারম্যান হচ্ছেন। ছনুয়া বিএনপি প্রার্থী সাঈদ বেলাল এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতারা দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকায় এবং আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ না করায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সম্প্রতি কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন ফেনী সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বকুল। এদিকে আজকের নির্বাচনে যে কোন মূল্যে ৪ ইউপিতে বিজয়ী হতে চায় ক্ষমতাসীন দল আ.লীগ। ছলে বলে কৌশলে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ ফেনীর আ.লীগ নেতারা। ফেনী জেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিলের পর দলীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। নিজাম হাজারীর ঘোষণার পর বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার মতো দুঃসাহস কেউ দেখায়নি। ফেনী জেলা আ.লীগে নিজাম হাজারীই শেষ কথা। ফলে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দলীয়ভাবে নাম ঘোষণার পর তৃণমূল নেতাকর্মীরা জেলা আ.লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু ফেনী সদর উপজেলা নয় জেলার ৪৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৪১ ইউনিয়নেই তফসিল ঘোষণার পর দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে আ.লীগ। সেখানে কোন বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তো দূরের কথা, বিএনপির প্রার্থীরাও নির্বাচনে আগ্রহী হচ্ছে না। এদিকে আজকের অনুষ্ঠিত ফেনী সদরের ৪ ইউনিয়ন এবং ছাগলনাইয়ার ৫ ইউনিয়নের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী। এছাড়া ইউপি সদস্য পদে বেশিরভাগ ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আ.লীগ প্রার্থীরা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যাচ্ছেন ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের বড় ভাই রফিক উল হায়দার চৌধুরী জুয়েল। ছাগলনাইয়ার এ ইউনিয়নে গত মেয়াদে চেয়ারম্যান ছিলেন জুয়েল। উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই হওয়ার কারণে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাহস পায়নি অন্য প্রার্থীরা। এদিকে গত ২৮ এপ্রিল ঘোপাল ইউনিয়নের মুহুরী গঞ্জের বন্ধন কমিউনিটি সেন্টারে এক নির্বাচনী সভায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, আ.লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিলে তাকে গুলি করে পায়ের নিচে লাশ ফেলে দিতে হবে। গুলি করার পর সকল দায়িত্ব তার বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থানের পাশাপাশি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে আ.লীগ। ইউপি নির্বাচনে আ.লীগে যখন মাঠে-ময়দানে শক্তি প্রয়োগে মরিয়া সে মুহূর্তে বিএনপি নেতাদের মাঝে উদাসীনতা বিরাজ করছে। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয়। আবার মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে অনেকে ফেরারি জীবনযাপন করছে। তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী মনে করেন বর্তমান জেলা বিএনপি নেতাদের আ.লীগের সাথে সখ্যতা রয়েছে। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিভিন্ন সভা সমাবেশে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন বেশ কয়েকবার। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টার মূলত অসুস্থতার কথা বলে তিনি আন্দোলন থেকে দূরে সরে রয়েছেন বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ। তৃণমূল নেতাকর্মীরা আরো বলেন, জেলা সংগঠনের দুর্বলতার কারণে ইউপি নির্বাচনে কেউ প্রার্থী হতে চাচ্ছে না। জেলা সংগঠন শক্তিশালী হলে এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখলে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার জন্য অনেকে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু জেলা সংগঠনের ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় তারা আগ্রহী হচ্ছে না। ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে জেলার ৯ ইউপির মধ্যে ২টিতে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আ.লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। আজকের নির্বাচনে বাকি ৭ ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী রয়েছে। এ সকল ইউপিতে বিএনপি প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা, নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে প্রাণনাশের হুমকি এবং কর্মী সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ করেছে ফেনী সদর উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও প্রার্থীরা। এদিকে ছাগলনাইয়ার শুভপুরে বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. কামাল উদ্দিনকে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে হত্যার হুমকি দিয়েছে আ.লীগ। ফেনী বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হলেও বর্তমানে জেলার সিংহভাগ জনপ্রতিনিধি আ.লীগের। নির্বাচনে প্রভাব খাটানো, ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা এবং আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে ফেনীর নির্বাচন ইতোমধ্যে দেশব্যাপী আলোচিত। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনে ফেনী চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে অনেক আগেই। এর আগে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিদের মনোনয়ন জমাদানে বাধা দেয়ায় এবং নির্বাচন অফিসে হামলার ঘটনায় গত ৩১ মার্চ ফুলগাজী ও পরশুরাম ইউজেলার ৯টি ইউপিতে নির্বাচন স্থগিত করার পাশাপাশি ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতীতে যে ধারায় নির্বাচন হয়েছে ইউপি নির্বাচনে তা অব্যাহত থাকলে সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। তার পূর্বেই বিপুল ভোটে আ.লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে যাবেন। জনগণ ভোটের নামে এমন তামাশা চায় না। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিত করে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করা হলে গণতন্ত্র আরো বিকশিত হবে বলে আশাবাদ ভোটারদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।