বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নির্বাচন যত-ই ঘনিয়ে আসছে ততই ভয় বাড়ছে পুলিশ নিয়ে বিএনপি সহ বিরোধী নেতাকর্মীদের। তবে শাসক দল আওয়ামীলীগ সহ মহাজোটের প্রার্থী বা কর্মী-সমর্থক নিয়ে ভীত নয় তারা। মাঠে তাদের মোকাবেলার সকল প্রস্তুতি রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের। তবে পুলিশ নিয়ে অজানা আতংক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তাদের মধ্যে। সক্রিয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে নীরব অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, এরকম অভিযোগ নেতাকর্মীদের। সেই গ্রেফতার, হয়রানীর নেপথ্যে সরকার দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকায়ই মুখ্য বলে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনকালীন মুহূর্তে আ‘লীগ রাজনীতিকরা পড়ার আড়ালে বসে পুলিশ ও বিএনপি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ভোট রাজনীতিতে ফায়দা হাসিলে এহেন কূট কৌশলে তৎপরতা হয়ে উঠছে। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের একাধিক প্রার্থীও পুলিশের দিকে আঙ্গুল তুলে বলছেন, পুলিশের কারণে নেতাকর্মীরা হয়রানীতে পড়ছে। ঘরে ঘরে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এলাকার ছাড়ার। পূর্বে রাজনৈতিক কোন কর্মসূচী নিয়ে সংঘাত সংঘর্ষ ঘটলে সংঘটিত এলাকার বিরোধী দলের সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের উপর পুলিশের অভিযান বা ধরপাকড় হতো। এখন সেই অবস্থা নেই, সিলেটের ৬টি নির্বাচনী এলাকায় ধরপাকড় আতংকে পড়ছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঘর বাড়ি ছাড়া, অতি প্রয়োজন ব্যতীত মোবাইল ফোনেও কথা বলছেন না। প্রায় বন্ধ করে রাখছেন ফোন। ঘরে খোজ নিলে, পরিবারের লোকজনও সন্ধান দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, গণ-সংযোগে শাসক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করলেও, বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা নেই বললেই চলে। একান্ত নীরবে ধানের পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। চোখ-কান খোলা রেখে সদা সর্তক ভাবে চলতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। ধানের শীষের চিন্তিত সমর্থক বা কর্মী মাঠে দেখা গেলেও প্রকাশ্যে নির্বাচনী কাজে শরিক হচ্ছেন না এখনও। তৃণমূলের গাঁও গেরামে, অচেনা লোক দেখলে মনে করে তারা প্রশাসনের উপস্থিতি ঘটছে এলাকায়। তাই দ্রুত আড়াল করার চেষ্টা করেন নিজদের। গত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির একাধিক নেতা চেয়ারম্যান পদে বিপুল বিজয় লাভ করেছেন। গত কয়েক দিনে বিএনপি সমর্থিত একাধিক চেয়ারম্যান গ্রেফতারও হয়েছেন। নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে চলে যেতে পারে চেয়ারম্যানদের প্রভাব, সেকারণে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন নেতাকর্মীরা। তাই ধানের শীষের স্থানীয় নেতৃত্ব শূন্য করতে এ গ্রেফতারী ঘটনা নির্বাচনী অশুভ কৌশল হিসেবে মনে করছেন সচেতন মহল। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্র ভিত্তিক নির্বাচনী আহবায়ক কমিটি গঠন অনেক আগেভাগেই চূড়ান্ত করেছে আওয়ামীলীগ। এ কমিটির সদস্যরা, স্থানীয় বিএনপি বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের চরম চাপের মধ্যে রেখেছেন প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে। তাদের পরিবারের সদস্যদের ম্যাসেজ দিচ্ছেন, এলাকায় না থাকার। বিশেষ করে বিএনপি সমর্থিত কেন্দ্রগুলোতে এ তৎপরতা বেশি বলে জানা যায়। টার্গেট করে কর্মী-সমর্থকদের তাড়ানোর কৌশল চলছে। এতে করে ভয় আতংকের সাথে চাপা ক্ষোভে সামাজিক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। এমনকি বলে দেওয়া হচ্ছে, কেউ ধানের পক্ষে এজেন্ট হলে সমস্যা হবে। সামাজিক সর্ম্পকের ভিত্তিতে এহেন তথ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে সহায়তা করছেন বলেও প্রচার করছেন নৌকার স্থানীয় নেতাকর্মীরা। অনেক সময় রাতে ফোন করে বলছেন, ওমুক ( বিএনপির সক্রিয় কোন কর্মী বা নেতা) ঘরে আছে কি না ? উত্তরে হ্যাঁ বললে বলছেন, পুলিশ তাকে ধরতে আসছে, বলেন তাড়াতাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যেতে। প্রদত্ত তথ্য গুলোর আদৌ সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা পুলিশী ভয় দেখিয়ে মানসিক চাপে রাখতে চাইছে বিরোধী নেতাকর্মীদের। অপরদিকে, এহেন অতি উৎসাহী তৎপরতা নিয়ে কৌতুহল দেখা দিয়েছে, মনে করা হচ্ছে কোন ভাবে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিজয়ী হলে, তথ্য সরবরাহকারী ওই আ‘লীগ নেতা বা কর্মী যাতে বিএনপির স্থানীয় আনুকূল্য পরবর্তীতে লাভ করতে পারেন, সেকারণে পুলিশী অভিযানের তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আগাম লিয়াঁজো গড়ে তুলতে চাইছেন। তৃণমূলে নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণার চেয়ে, পুলিশী জু-জু ভয় ছড়িয়ে বিরোধী নেতাকর্মী নিয়ন্ত্রণের ধারাবাহিক অপচেষ্টা চালাচ্ছেন আ‘লীগ নেতাকর্মীরা। একাধিক এলাকার স্থানীয় আ‘লীগের নির্বাচনী ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, গ্রামীণ পরিবেশে রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির চেয়ে সংঘাত সংঘর্ষের কারণ হয়ে উঠতে পারে গোষ্টি বা এলাকার আধিপত্য নির্ভর প্রেস্টিজ। দলীয় সমর্থন নিয়ে কারো সাথে কেন্দ্রে বিরোধ দেখা দিলে, এই বিরোধ রাজনৈতিক বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে উঠে, সামাজিক হানাহানিতে রূপ নিতে পারে। সংঘাত-সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে, গ্রামীণ শান্তি শৃংখলা ভেঙ্গে পড়বে। সেকারণে রাজনৈতিক মত পার্থক্য থাকলেও কৌশলগত কারণে দলীয় প্রভাব বিস্তারে কেউ ঝুঁকি নিতে চাইবে না। দেখা গেছে, একই পরিবারের আওয়ামীলীগ, বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসের লোকজন রয়েছে। নির্বাচন ঘিরে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা, স্থানীয়ভাবে ভয়ংকর রূপ নিয়ে পরিণাম সকলের জন্য খারাপ হয়ে উঠবে। যদিও আ‘লীগের প্রার্থীরা ওয়ার্ড দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দিচ্ছেন যেভাবেই হোক কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করে, ফলাফল অনুকূলে নিয়ে আসার। এমনকি বলছেন, এক্ষেত্রে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে, একই সাথে ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সাথে প্রশাসনের যোগাযোগও গভীর করে দিচ্ছেন। তারপরও ঝুঁকি নিতে চাইছে না আ‘লীগের নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছে, পুলিশী ভীতি সৃষ্টি করে বিরোধী নেতাকর্মীদের সরিয়ে বা এজেন্ট শূন্য করে নৌকার পক্ষে সুবিধা নিতে পারলেই যথেষ্ট। কেননা অপ্রীতিকর কোন ঘটনা সৃষ্টি করে, কেন্দ্রে প্রভাব গড়ে তুললে পরবর্তীতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তার মাশুল স্থানীয় ভাবে এক সময় তাদেরকেই গুনতে হবে, এমন ভাবনায় শঙ্কিত তারা। স্থানীয় বিভিন্ন এলাকার সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা বাস্তবে দেখছেন নৌকার বিপক্ষে জনমত। সাধারণ মানুষ কথা বলছে, সরকার দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। জনপ্রিয়তার কোন মাত্রায় তারা মেনে নিতে পারছেন না এসব প্রার্থীদের। তাই বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের পুলিশী জু-জু ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালেও, সাধারণ মানুষদের সমর্থন ঠেকানো অসম্ভব। এই সাধারণ মানুষ আবেগ ও সামাজিক সর্ম্পকের কারণে শেষ মুহূর্তে বিরোধী নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধে নেমে যেতে পারে, এমন বাস্তবতার সম্ভাবনা অমূলক নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।