Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘পৌরসভায় জগদীশ-সংসদে দেবাশীষ’

বরগুনা-১ আসনে ভোটারদের নতুন কথোপকথন

বরগুনা থেকে মোঃ মোশাররফ হোসেন | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

শুরু থেকে এ পর্যন্ত কোন প্রকার সহিংস ঘটনা ছাড়াই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারাভিযান জমে উঠেছে বরগুনা-১ আসনে। হাটে-বাজারে, চায়ের দোকানে, হোটেল-রেস্তরায় মানুষের মুখে মুখে এখন ভোটের হিসাব নিকাশ। বরগুনা-১ আসনে এনপিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, বিএনএফ ও তরিকত ফেডারেশনসহ ৮ জন প্রার্থী থাকলেও ভোটারদের হিসাব নিকাশে রয়েছে আঃলীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী।

বিগত দিনে ইসলামী ঐক্য জোটের মিনার মার্কায় ২বার, জাপার সাথে ঐক্যজোট করে লাঙ্গল মার্কায় ১বার এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে হাত পাখা মার্কায় ১ বারসহ মোট ৪ বার নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারী চরমোনাই পীরের খলিফা বরগুনার কেওড়াবুনিয়ার পীর মরহুম মাওঃ আঃ রশিদ সাহেবের পুত্র বর্তমান গদী নিশিন পীর সংগঠনের জেলা সভাপতি মাওলানা মোঃ অলি উলাহ প্রথম থেকেই ইসলামী আন্দোলনের হাত পাখা মার্কার একক প্রার্থী। এবছরের ফেব্রুয়ারী মাসে পিতার মৃত্যুতে এমনিতেই ভক্ত, মুরিদ তথা এলাকাবাসী বেদনাহত। এর মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতির শুরুতে পিতার মৃত্যুর পর গত ১৮ থেকে ২০ নভেন্বর ছিল দরবারের ১ম বার্ষিক মাহফিল। মাহফিলের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। ১ম দিন আসর নামাজের পর মাগরিবের পূর্ব মূহুর্তে চলছে কোরআন তেলাওয়াত। এমন সময়ে নির্বাচন কমিশনের ঘোষনার আলোকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মাহফিল বন্ধ করে দেয়। এলাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার ভক্ত মুরিদদের মধ্যে কান্নার রোল পরে যায়।

মাহফিল বন্ধ করে দেয়ায় স্বাভাবিক কারনেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। জন সাধারনের এ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সুফল, পিতার গড়ে যাওয়া পীর মুরিদী ও দলীয় ভোট ব্যাংক কাজে লাগাতে চাইছেন পাখা মার্কার প্রার্থী মাওলানা মোঃ অলি উলাহ। এ আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী এড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বার বার নির্বাচিত হলেও মরহুম পীর আঃ রশিদ বরাবরই ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ভোট পেয়ে ২য় স্থানে অবস্থান করতেন।

জেলা বিএনপির সিনিঃ সহ-সভাপতি, জাপা এবং বিএনপি থেকে ২বার নির্বাচিত সাবেক এমপি এবং জেলা বিএনপির নব নির্বাচিত সভাপতি নজরুল ইসলাম মোলা বিএনপি থেকে মনোনয়ন পত্র দাখিল করলেও রিটানিং অফিসারের বাছাই পর্বে মতিয়ার রহমান তালুকদারের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশনে আপিল করে তিনি বৈধতা পাওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে নজরুল ইসলাম মোলা তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। বরগুনা-১ আসন বরগুনা,আমতলী ও তালতলী এ ৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে আমতলী ও তালতলী উপজেলায় একক প্রার্থী বিএনপি’র মতিয়ার রহমান তালুকদার। দলীয় ভোটব্যাংক, ব্যক্তি ইমেজ, তালতলী উপজেলা প্রতিষ্ঠায় অবদান, বিএনপির উন্নয়ন সর্বপোরি আঞ্চলিকতার টান এ সব মিলিয়ে বিজয়ের সম্ভাবনার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। তার বিজয়ের আর একটি দিক নিয়ে জল্পনা কল্পনা করছেন সাধারন ভোটাররা। আর তা হচ্ছে দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামীলীগের বৃহদাংশের ভোট।

আওয়ামীলীগের দু’জন প্রার্থী থাকলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন এ অঞ্চলের হেভিওয়েট প্রার্থী, বরগুনা-১ আসনে ৪বার নির্বাচিত এমপি,সাবেক প্রতিমন্ত্রী,বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জননেতা এড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। অবশ্য ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক এমপি, বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জননেতা মোঃ দেলোয়ার হোসেনের কছে হেড়ে যান। সেই থেকে দানাবাঁধা দীর্ঘ্য দিনের দলীয় কোন্দল হঠাৎ করেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবারের নির্বাচনের পূর্ব মূহুর্তে। তৃনমূল থেকে শুরু করে দলের নেতা কর্মীদের বৃহৎ একটি অংশ জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ দলের কাছে নতুন নেতৃত্বের মনোনয়ন দাবী করেন। নতুন নেতৃত্বের ইস্যুতে সর্বোচ্চ দলীয় মনোনয়ন ক্রয়ে বাংলাদেশের মধ্যে বরগুনা প্রথম স্থান অধিকার করে। পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্তে অন্য সকলে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করলেও দলের জেলা সভাপতি এড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও জেলা সেক্রেটারী মোঃ জাহাঙ্গীর কবীরকে দ্বৈত মনোনয়ন দেয়া হয়। নতুন নেতৃত্বের মনোনয়নের প্রত্যাশায় প্রত্যাহারের পূর্বদিন পর্যন্ত বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনায় জাহাঙ্গীর কবীরের পক্ষে মিছিল,মিটিং, গনসংযোগ চললেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন দেয়া হয় এড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে। ফলে দলের দ্বিধা বিভক্তি আরো কঠিন থেকে কঠিন হয়ে ওঠে। নির্বাচনের আর মাত্র ১০/১২ দিন বাকি। এখনো ঐকমতে পৌছে এক পাটফর্মে ওঠতে পারেনি বরগুনা-১ আসনের আওয়ামীলীগ। তবে নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক দলের দ্বিধাবিভক্ত গ্রুপের কয়েকজন সিনিঃ নেতা অতিতের ইতিহাস উলেখ করে এ প্রতিনিধিকে বলেন “যতই বিভক্তি থাকুকনা কেন নির্বাচনের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে দলের বৃহৎ স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েই কাজ করেছি এবারেও করব এবং সে প্রক্রিয়া প্রায় শেষ প্রান্তে।” প্রার্থী এড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন “আওয়ামীলীগে কখনো দ্বিধাবিভক্তি ছিলনা, এখনো নেই। দেশের সর্ব বৃহৎ দল হিসেবে ছোট খাট ভুল বোঝাবুঝি থাকাটাই স্বাভাবিক। নির্বাচন, দল ও দেশের স্বার্থে আমরা সব ভুলে গেছি। বরগুনাতে এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি। জনগন এখন আমাদের পক্ষে-উন্নয়নের পক্ষে। স্বাধীনতা পরবর্তী ২য় টুঙ্গিপাড়া হিসেবে খ্যাত বরগুনার সাধারন মানুষ বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও নৌকার প্রতি অত্যান্ত দূর্বল। তাই তারা দক্ষিনাঞ্চলে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা মনে রেখে বিশেষ করে চলমান পদ্মা সেতু, পায়রা নদী বন্দর, নির্মানাধীন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পরিকল্পনাধীন পায়রা ও বিষখালী সেতুসহ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা স্মরন করে নৌকায় ভোট দেবেন। ইনশালাহ আমরা বিজয়ী হবই। ” ভোট নিয়ে বেশকিছু সাধারন ভোটারের সাথে কথা বলেছেন এ প্রতিনিধি। সাধারন মানুষের বকক্ত্য হচ্ছে আমরা এমপি, মন্ত্রী চিনিনা। এলাকার উন্নয়নে যিনি কাজ করবেন, যোগ্য প্রার্থী দেখে তাকেই ভোট দেব।

বরগুনা-১ আসনে আওয়ামীলীগের দ্বিধা বিভক্তির কারনে ইতি মধ্যেই একটি পুরাতন কথপোকথন নতুন করে ছড়িয়ে পরেছে মানুষের মুখে মুখে। আর তা হচ্ছে “পৌরসভায় জগদীশ-সংসদে দেবাশীষ।” এর অর্থ হচ্ছে ,বিগত বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছিল জেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুল আহসান মহারাজ। তার বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল পৌর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী মেয়র শাহদাত হোসেন। তার প্রতীক ছিল জগ। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটারদের কথোপকথন ছিল “কিরে ভাই ভোটের খবর কি? আরে ভাই জগদীশ”। অর্থাৎ ভোটটা জগে দিশ। সে নির্বাচনে মেয়র শাহদাত জগ পতীকে ২য় বারের মত বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও ইতিমধ্যেই ভোটারদের মধ্যে এমনই একটি কথোপকথন ছড়িয়ে পরেছে। আর তা হলো “পৌরসভায় জগদীশ-সংসদে দেবাশীষ।” অর্থাৎ পৌর সভায় ভোট জগে দিয়েছ, এবার সংসদে ধানের শীষে দিও।” এ কথোপকথনটি এলাকায় ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ